Table of Contents
বাজারে অবস্থান গ্রহণের কৌশলসমূহ
উত্তর : ভূমিকা : একজন বাজারজাতকারী বাজারে অবস্থান গ্রহণের জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে থাকেন। তার কৌশলটি হবে নতুনত্বে এবং আঙ্গিকতায় সম্পূর্ণ ভিন্নতর যা লক্ষ্যস্থিত বাজারে অন্য কোন প্রতিযোগী ইতঃপূর্বে গ্রহণ করেনি।
একটি পণ্যের অবস্থান বলতে ভোক্তারা পণ্যটির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে পণ্যটিকে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করে অর্থাৎ প্রতিযোগীদের পণ্যের প্রেক্ষিতে কোন প্রতিষ্ঠানের পণ্য ভোক্তার মনে যে স্থান দখল করে নেয় তাকে বাজারে অবস্থানগ্রহণ বলে। উদাহরণস্বরূপ ডিটারজেন্টের ক্ষেত্রে Tide পারিবারিক ডিটাজেন্ট, Era ঘনীভূত তরল ডিটারজেন্ট এবং Cheer তাপমাত্রার ডিটারজেন্ট হিসেবে ভোক্তার মনে অবস্থান নিয়েছে।
বাজারে অবস্থান গ্রহণের কৌশলসমূহ:
গাড়ির ক্ষেত্রে Toyota, Hyundai মিত্যব্যয়ী গাড়ি হিসেবে Mercedes এবং Cadillac বিলাসবহুল গাড়ি হিসেবে এবং BMW ভালো কার্যসম্পাদনকারী হিসেবে ভোক্তার মনে অবস্থান গ্রহণ করেছে।
Philip Kotler-এর মতে, “A products position is a complex set of consumer perceptions, impressions and feeling consumers hold for the product compared with competing products.”
এ অবস্থায় বাজারজাতকারী নিচের বিভিন্ন অবস্থান গ্রহণ কৌশলের যে কোন একটি অথবা সবকটি গ্রহণ করতে পারে। অবস্থান গ্রহণ কৌশলসমূহ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো :

১. পণ্যের শ্রেণীভিত্তিক অবস্থান গ্রহণ : বাজারজাতকারী পণ্যের শ্রেণীর ভিত্তিতে বাজারে পণ্যের অবস্থান নির্ধারণ করতে পীরে। এ অবস্থায় বাজারজাতকারী কোম্পানি তার পণ্যটিকে “নির্দিষ্ট পণ্য শ্রেণী বা ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ হিসেবে বাজারে অবস্থান নেয়ার সুযোগ পায়। যেমন মোবাইল সেটের ক্ষেত্রে Nokia
সেটকে বিশ্বের ১ নম্বর বলা হয়
২. ক্রেতা বা ব্যবহারকারীর শ্রেণীভিত্তিক অবস্থান গ্রহণ : ব্যবহারকারী শ্রেণী যেমন শিশু, যুবক, বৃদ্ধ প্রভৃতি অনুসারেও পণ্যের অবস্থান নির্ধারিত হয়। যেমন: Johnson and Johnson কোম্পানি তাদের উৎপাদিত বেবি শ্যাম্পুর বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য পণ্যের Positioning করেছিল এভাবে। Johnson And Johnson–এ ক্ষেত্রে উক্ত কোম্পানি শ্যাম্পুর অবস্থান পুনঃনির্ধারণ করে বাজারের অংশ ৩% থেকে ১৪%-এ উন্নীত করেছে।
৩. প্রতিযোগীভিত্তিক অবস্থান গ্রহণ : প্রতিযোগীভিত্তিক অবস্থান গ্রহণ কৌশলে পণ্যটিকে প্রতিযোগী পণ্যের তুলনায় উৎকৃষ্ট হিসেবে অবস্থান দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিকতার তুলনায় অবস্থান গ্রহণ কৌশলে ব্যক্তি ও প্রতিযোগীদের মনস্তাত্ত্বিক দিককে প্রাধান্য দেয়া হয়। যেমন : Compaq তাদের ব্যক্তিগত কম্পিউটার (PC) সরাসরি IBM-এর ব্যক্তিগত কম্পিউটার-এর সাথে তুলনা করে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে এবং অবস্থান গ্রহণ কৌশল গ্রহণ করছে।

৪. বৈশিষ্ট্যভিত্তিক অবস্থান গ্রহণ এ কৌশলে কোম্পানি পুণ্যের কোন একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে গুরুত্ব দিয়ে ক্রেতার সামনে তুলে ধরে। যেমন : Konka Television নিম্ন মূল্যকে ফোকাস করে বিজ্ঞাপন দেয়। পক্ষান্তরে, মার্সিডিজ বেঞ্চ গাড়ির ক্ষেত্রে ‘বিলাস’ কে বিজ্ঞাপনে প্রাধান্য দেয়া হয়।
৫. নীড বা প্রয়োজনভিত্তিক অবস্থান গ্রহণ : পণ্যটি থেকে ভোক্তা কোন্ ধরনের অভাব, প্রয়োজন বা সুবিধা অর্জন করতে পারবে সে অনুযায়ী কোম্পানি অবস্থান নির্দিষ্ট করতে পারে। যেমন : স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিঃ “White Plus” Tooth past এর বিজ্ঞাপনে দাঁতের উজ্জ্বলতার উপর গুরুত্ব দেয় এবং পণ্যটির উজ্জ্বলতা সম্পর্কিত সুবিধা তুলে ধরে ক্রেতা বা ব্যবহারকারীদের মধ্যে এর প্রয়োজন জাগিয়ে তোলে।
৬. ব্যবহার বা প্রয়োগভিত্তিক অবস্থান গ্রহণ : এ ক্ষেত্রে কোন ব্যবহার বা প্রয়োগের ভিত্তিতে পণ্যটিকে সর্বোৎকৃষ্ট হিসেবে তুলে ধরা হয়। যেমন : ফ্যাশন তৈরিতে Singer সেলাই মেশিন অতুলনীয়। আবার গরমের দিনে ঠাণ্ডা পানিতে ট্যাং এবং শীতের দিনে গরম পানিতে ট্যাং এর অবস্থান লক্ষ্য করা যায় যা নিয়মিত ব্যবহার করানোর কৌশল।

৭. বিশেষ সুবিধাভিত্তিক অবস্থান গ্রহণ : পূণ্যটি গ্রাহকদের যে পরিমাণ চাহিদা মেটাতে সক্ষম বা যে পরিমাণ বিশেষ সুবিধা প্রদান করতে পারে, তার ভিত্তিতেও বাজারে অবস্থান গ্রহণ করা “হয়। ঐ বিশেষ সুবিধার দৃষ্টিকোণ থেকে পণ্যটিকে নেতৃস্থানীয় হিসেবে তুলে ধরা হয়। যেমন : “Nido” গুঁড়ো দুধ বাড়ন্ত বাচ্চাদের জন্য খুবই উপকারী।
৮. কার্য সম্পাদনভিত্তিক অবস্থান গ্রহণ : বাজারে অবস্থান গ্রহণের ক্ষেত্রে কেউ কেউ কার্য সম্পাদন প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে পণ্যের দামের বিপরীতে কার্য সম্পাদন প্রক্রিয়া প্রাধান্য পায়। যেমন : Ford Festiva কম দামের বিষয়টিকে বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করে, অপরদিকে Saab কার্য সম্পাদনকে প্রমোট করে।

৯. মান বা মূল্যভিত্তিক অবস্থান গ্রহণ : এ ক্ষেত্রে কোম্পানি তার পণ্যকে মান বা মূল্যের দিক থেকে ক্রেতাকে সর্বোচ্চ ভ্যালু প্রদানকারী পণ্য হিসেবে অবস্থান দেয়। পণ্যের মান এবং মূল্য উভয় ভিত্তিতেই ভ্যালু সৃষ্টির মাধ্যমে বাজারে অবস্থান গ্রহণ করা হয়।
যেমন : কম মূল্যের দিক থেকে Konka, Rangs প্রভৃতি টিভির অবস্থান গ্রহণ উল্লে- খযোগ্য। অপরদিকে, মানের দিক থেকে Sony সর্বোচ্চ মানের।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, উপরিউক্ত কৌশল অবলম্বন করে বাজারজাতকারীগণ এক বা একাধিক অবস্থানে পৌঁছাতে পারে।
পরবর্তি প্রশ্ন: