প্রশ্ন ৩.০৮। ভোক্তার আচরণে বা ক্রয় সিদ্ধান্তে প্রভাববিস্তারকারী সাংস্কৃতিক উপাদানসমূহ আলোচনা কর ।
উত্তর : ভূমিকা : প্রথমে বলা হয়েছে যে কোন পণ্য বা সেবা ক্রয় করার ক্ষেত্রে ভোক্তা বিভিন্ন উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে যা ভোক্তার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। প্রভাব বিস্তারকারী উপাদানগুলোর মধ্যে সাংস্কৃতিক উপাদানগুলো দ্বারা ভোক্তা ক্রয়ের ক্ষেত্র প্রভাবিত হয়ে থাকে। একজন ভোক্তার ক্রয় আচরণে কি ভাবে সাংস্কৃতিক উপাদান প্রভাব বিস্তার করে তা নিম্নে আলোচনা করা হল-
১. সংস্কৃতি : সংস্কৃতি বলতে মূলত মানুষের আচার আচরণ, মূল্যবোধ ধারণা জ্ঞান, বিশ্বাস প্রভৃতির সমন্বয়ে গড়ে উঠে যা ভোক্তা আচরণে প্রভাব বিস্তার করে থাকে. মানুষের আচরণ শিক্ষা প্রক্রিয়া দ্বারা প্রভাবিত হয়। মানুষ যা আচরণ করে তার বেশির ভাগই শিক্ষালব্ধ একটি শিশু তার পরিবার থেকে সকল বিষয় শিখে থাকে।, তা হলে বড় হওয়ার প্রক্রিয়ায় মূল্যবোধ জ্ঞান, বিশ্বাস, অভাব ইত্যাদি শিখে। একজন মানুষ তার সমাঙ্গের যে কালচার তার ভিত্তিতেই তার সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে। যেমন আমাদের দেশের মানুষের ক্রয়ের আচরণ যারা আমেরিকান মানুষের ক্রয়ের আচরণ এক হবে না। কারণ বাংলাদেশের মানুষ বেশির ভাগই অদৃষ্টবাদী একজন বাজারজাতকারী শুধু বিরাজমান সংস্কৃতিই বিবেচনা করে না। বরং পরিবর্তিত সংস্কৃতি বিবেচনা করতে হবে।
২. উপসংস্কৃতি উপসংস্কৃতি : উপসংস্কৃতিও একজন মানুষের ক্রয় আচরণে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। একই সংস্কৃতি বা একই সমাজের মানুষের মধ্যে বিভিন্ন পার্থক্য দেখা যায় ঠিক তেমনি মানুষের ভাষা জাতি, বর্ণ ইত্যাদি পার্থক্যের কারণে একটি সংস্কৃতিকেই কতগুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপভাগে ভাগ করা হয় যার একেকটি ভাগকে উপসংস্কৃতি বলে ।
এ প্রসঙ্গে WJ Stanton বলেন, “Subculture that provide more specific identification and socialization for its numbers” চার ধরনের উপসংস্কৃতি লক্ষ্য করা যায়-
- জাতীয় দল- আইরিশ, ইন্ডিয়ান আমেরিকান ইত্যাদি
- ধর্মীয় দল- ক্যাথলিক মুসলিম হিন্দু ইত্যাদি
- জাতিগত দল- কৃষ্ণাঙ্গ, শ্বেতাঙ্গ।
- ভৌগোলিক দল- ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম ইত্যাদি । বাংলাদেশে চাকমা উপজাতিও বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে বিশ্বাস করে তার সাথে তাদের নিজেদের কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য তারা মেনে চলে যা ভোক্তা আচরণে প্রভাব বিস্তার করে থাকে ।
৩. সামাজিক শ্ৰেণী : প্রত্যেকটি সমাজ কতগুলো সামাজিক শ্রেণী কাঠামো দ্বারা গঠিত। যা দ্বারা ভোক্তার ক্রয় আচরণ প্রভাবিত হয়ে থাকে । মানুষের উপার্জন ক্ষমতা মূল্যবোধ ইত্যাদি কারণে সমাজে বসবাসকারী মানুষের বিভিন্ন ভাগে ভাগ করলে একেকটি ভাগকে একটি সামাজিক শ্রেণী বলে। বিভিন্ন উপাদান যেমন পেশা আয়, সম্পদ এর সমন্বয়ে সামাজিক শ্ৰেণী হয়ে থাকে। যার ফলে একই সমাজে মানুষের চাহিদা একেক রকম হয় একেকজন ভিন্ন ভিন্ন পণ্য ও ব্রান্ডের প্রতি আকৃষ্ট হয়।
মানুষের পার্থক্য ভেদে আমাদের সমাজে তিন ধরনের শ্রেণী বিভাগ লক্ষ্য করা যায়- উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত উপরোক্ত সামাজিক শ্রেণীর পার্থক্যভেদে তাদের পোশাক পরিচ্ছেদ, অবসরযাপন, গৃহ, আসবাবপত্র ইত্যাদি ক্ষেত্রে পণ্য ও ব্র্যান্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
উপসংহার: উপরোক্ত আলোচনা প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সংস্কৃতি, উপ-সংস্কৃতি এবং সামাজিক শ্রেণি দ্বারা একজন ভোক্তার ক্রয় আচরণ ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়।