প্রশ্ন ॥২.১৭॥ সামষ্টিক বাজারজাতকরণ পরিবেশের উপাদানসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, বিপণন পরিবেশে সামষ্টিক উপাদানসমূহ আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা ভূমিকা : সামষ্টিক পরিবেশ বলতে এমন এক ধরনের কতিপয় শক্তির সমষ্টিকে বুঝায় যা প্রতিষ্ঠানের ব্যষ্টিক পরিবেশের অন্তর্গত পক্ষগুলোকে প্রভাবিত করে এবং এই শক্তিগুলো নিজেরাই আলাদা পরিবেশ সৃষ্টি করে তাকেই সামষ্টিক পরিবেশ বলে।
সামষ্টিক পরিবেশকে ছয় ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১. জনসংখ্যাবিষয়ক পরিবেশ (Demographic environment)
২. অর্থনৈতিক পরিবেশ (Economic environment)
৩. প্রকৃতিক পরিবেশ (Natural environment)
৪. প্রযুক্তিগত পরিবেশ (Technological environment)
৫. রাজনৈতিক পরিবেশ (Political environment)
৬. সাংস্কৃতিক পরিবেশ (Cultural environment)
নিম্নে এদের বর্ণনা করা হল-
১. জনসংখ্যা বিষয়ক পরিবেশ : বাজারজাতকারীর জন্য প্রথম এবং প্রধান বিষয় হলো জনসংখ্যা। কারণ জনসংখ্যা ব্যতীত বাজারের প্রশ্নই আসে না। যে কোন পণ্য বাজারজাত করার পূর্বে বাজারজাতকারীর জনসংখ্যা সম্পর্কিত যে সমস্ত বিষয় জানা প্রয়োজন বা বিবেচনা করা উচিত তা হচ্ছে : (ক) জনগণের ভৌগোলিক অবস্থান;
(খ) জনসংখ্যার ঘনত্ব
(গ) জনসংখ্যার গতিশীলতার ধারা;
(ঘ) বিভিন্ন বয়সের জনসংখ্যা:
(ঙ) জন্মহার এবং মৃত্যুহার;
(চ) জাতিগত বৈষম্য;
(ছ) ধর্মগত অবস্থান।
২. অর্থনৈতিক পরিবেশ : বাজারে কেবল লোকজন থাকলেই চলবে না, সাথে সাথে তাদের ক্রয়ক্ষমতা ব্যতীত বাজার অর্থহীন। সুতরাং পণ্যের বাজারজাতকরণে ক্রেতার অর্থনৈতিক অবস্থাও প্রভাব বিস্তার করে থাকে। যে কোন পণ্য বাজারজাতকরণের প্রাক্কালে বাজারজাতকারীকে অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে যা জানতে হয় তা হলো : (ক) যে এলাকায় পণ্যটি বাজারজাত করা হবে সেখানকার লোকদের আয়ের প্রকৃত অবস্থা
(খ) কাদের আয় কোন্ স্তরে;
(গ) বাজারে মুদ্রাস্ফীতি আছে কি না;
(ঘ) লোকদের সঞ্চয়ের অভ্যাস কেমন এবং সঞ্চয়ের প্রকৃতি কিরূপ এবং
(ঙ) উপার্জিত আয়ের কত অংশ তারা ভোগের জন্য ব্যয় করে।
৩. প্রাকৃতিক পরিবেশ কোন দেশের জলবায়ু, আবহাওয়া, প্রাকৃতিক সম্পদ, নদনদী ইত্যাদির সমন্বয়েই উক্ত দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ গঠিত। প্রাকৃতিক পরিবেশ নির্ধারণ করে কোন অঞ্চলের বা দেশের লোকের জীবনযাত্রা ও ভোগের ধরন। প্রাকৃতিক পরিবেশ যেহেতু লোকের জীবনযাত্রা ও ভোগ অভ্যাসকে প্রভাবিত করে সেহেতু এটা বাজারজাতকরণকেও প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত করে। | কোন্ দেশে কি পণ্য ও সেবা উৎপাদিত হবে ও বাজারজাত করা যাবে কি না তা সে বিশেষ অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ অনেকাংশেই নির্ধারণ করে। তাই বলা যায় যে, প্রাকৃতিক পরিবেশ বাজারজাতকরণকেও প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত করে।
প্রাকৃতিক পরিবেশ বর্তমান যান্ত্রিক যুগে বাজারজাতকারীকে যে সকল সুবিধা দিচ্ছে সেগুলো হলো :
(ক) কাঁচামালের যোগান
(খ) জ্বালানি ব্যয় হ্রাস (প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ তেল ইত্যাদির মাধ্যমে) এবং
(গ) পরিবেশ শোধন (প্রাকৃতিক উপায়ে গাছপালা, বনজঙ্গল ইত্যাদির মাধ্যমে)।
৪. প্রযুক্তিগত পরিবেশ : ‘মানবজীবনের সবচেয়ে নাটকীয় শক্তি হচ্ছে কারিগরি শক্তি। এ কারিগরি পরিবেশ পেনিসিলিন আবিষ্কার করে রোগ প্রতিরোধে সক্ষম হয়েছে। জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি আবিষ্কার করে মানুষকে চমৎকৃত করে দিয়েছে। ভূ-উপগ্রহের আবিষ্কারের মাধ্যমে ঘরে বসে পৃথিবীর কোথায় কখন কি হচ্ছে তা দেখা যাচ্ছে। প্রযুক্তিগত কোন আবিষ্কার, পরবর্তী সময়ে পূর্বে আবিষ্কৃত কোন জিনিসকে আবার ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয় যার প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক।
৫. রাজনৈতিক পরিবেশ : রাজনৈতিক পরিবেশ পণ্য এবং সেবার বাজারজাতকরণের সিদ্ধান্তে প্রভাব বিস্তার করে। রাজনৈতিক পরিবেশ অত্যন্ত ব্যাপক এবং তা আইন, সরকারের প্রতিনিধি এবং প্রভাববিস্তারকারী দলের পারস্পরিক ক্রিয়া প্রক্রিয়ার সমন্বয়ে গঠিত যা সমাজের উপর প্রভাব বিস্তার করে।
৬. সাংস্কৃতিক পরিবেশ : সামষ্টিক পরিবেশের আর একটি উপাদান হলো সাংস্কৃতিক পরিবেশ। একজন লোক যে সমাজে লালিত হয়ে বড় হয়ে উঠবে তার উপর সে সমাজের বিশ্বাস, মূল্যবোধ, রীতিনীতির প্রভাব পড়বে। বাজারজাতকারীকে সে অনুযায়ীও পণ্য বাজারজাত করতে হবে। যে সমস্ত সাংস্কৃতিক উপাদান বাজারজাতকরণে প্রভাব রাখে তা হলো সমাজের প্রচলিত বিশ্বাস, মূল্যবোধ, রীতিনীতি ।
উপসংহার: উপরোক্ত আলোচনায় সামষ্টিক বাজারজাতকরণ পরিবেশের উপাদানগুলো উল্লেখ করা হলো। বাজারজাতকারীকে এ সব উপাদান অত্যন্ত যত্ন ও সতর্কতার সাথে বিবেচনা করে বাজারজাতকরণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়।