প্রশ্ন ॥২.০৪। বাজারজাতকরণ পরিবেশ অধ্যয়নের গুরুত্ব আলোচনা কর ।
অথবা, বাজারজাতকরণ পরিবেশ অধ্যয়ন গুরুত্বপূর্ণ কেন?
অথবা, “একজন বাজারজাতকারী বাজারজাতকরণ পরিবেশকে কখনো উপেক্ষা করতে পারে না।”- ব্যাখ্যা কর ।
উত্তর : ভূমিকা : প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সফলতা অর্জনের জন্য বাজারজাতকারীর পরিবেশের গতি-প্রকৃতি, বাজারজাতকরণের উপর পরিবেশের সম্ভাব্য প্রভাব বিবেচনা করা প্রয়োজন। যেহেতু বাজারজাতকরণ পরিবেশ বাজারজাতকরণ কর্মকান্ডের উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে সেহেতু বাজারজাতকারীকে যে কোন কার্যক্রম বা পরিকল্পনা গ্রহণের সময় বাজারজাতকরণ পরিবেশ বিশ্লেষণ করতে হয়। নিম্নে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বাজারজাতকরণ পরিবেশ অধ্যয়নের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো :
১. কার্যক্রম পরিচালনা : বাজারজাতকরণ পরিবেশ দৈনন্দিন কার্যক্রমকে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত করে বিধায় বাজারজাতকারীকে অবশ্যই গভীরভাবে পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে হবে ।
- ২.SWOT বিশ্লেষণ : একজন ব্যবসায়ীকে বাজারে টিকে থাকতে হলে তার শক্তি দুর্বলতা, সুযোগ এবং হুমকি ইত্যাদি বিশ্লেষণ করতে হয়। এক্ষেত্রে সরল এবং দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করা এবং হুমকিগুলো থেকে সাবধানে থাকা এবং সুযোগগুলো কাজে লাগানোর জন্য অবশ্যই বাজারজাতকারীকে বাজারজাতকরণ পরিবেশ বিশ্লেষণ করতে হবে।
৩. প্রতিযোগী মোকাবিলা : বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্যবসায় করতে গেলে কম বেশি প্রতিযোগী মোকাবিলা করা কোন নতুন কিছু নয়। প্রতিযোগী সম্পর্কে অনেক তথ্য সংগ্রহ করে বাজারে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে। অর্থাৎ প্রতিযোগীকে ভালভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। প্রতিযোগী বিশ্লেষণ ব্যষ্টিক পরিবেশের একটা অংশ।
৪. তথ্য সংগ্রহ : একজন বাজারজাতকারীকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। যেমন- ক্রেতা সম্পর্কে তথ্য, মধ্যস্থকারবারিদের সম্পর্কে তথ্য, সার্বিক অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা, সর্বশেষ প্রযুক্তি প্রভৃতি তথ্য বাজারজাতকরণ পরিবেশ বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায়।
৫. খাপ খাওয়ানো : বাজারজাতকারীকে নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে হয়। বাজারজাতকারী যদি পরিবেশ সম্পর্কে সম্যক ধারণা না রাখেন তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে চলা তার জন্য সম্ভব হবে না।
৬. নিয়ন্ত্রণ করা : বাজার নিয়ন্ত্রণ বাজারজাতকারীর জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোথায়, কীভাবে কতটুকু, কখন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে তা বুঝার জন্য ব্যষ্টিক পরিবেশ জানা প্রয়োজন। তাই বাজারজাতকরণ পরিবেশ যথাযথভাবে অধ্যয়নের মাধ্যমেই কেবল ব্যষ্টিক পরিবেশ জানা ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
৭. পরিবর্তন চিহ্নিতকরণ: দিন দিন বাজারজাতকরণে পরিবর্তন আসছে। একজন বাজারজাতকারীকে এ পরিবর্তন সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে হবে। বাজারজাতকরণ পরিবেশ অধ্যয়নের মাধ্যমেই কেবল বিভিন্ন পরিবর্তন বণ্টন করা সম্ভব হয়।
৮. দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা : সফলভাবে বাজারে টিকে থাকতে হলে কৌশলগত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হয়। আর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য বাজারজাতকারীর বাজারজাতকরণ পরিবেশ অধ্যয়ন করা আবশ্যক।
৯. দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ: দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা বাজারজাতকারীর সফলতার অন্যতম চাবিকাঠি। পরিবর্তনশীল পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে হলে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। বাজারজাতকরণ পরিবেশ বিশ্লেষণের মাধ্যমে দ্রুত ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়।
১০. সমস্যা পূর্বানুমান : পূর্বানুমান বাজারজাতকারীর জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যার অভাবে সফলতার মুখ দেখা সম্ভব নাও হতে পারে। যে কোন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা আসতে পারে বা দেখা দিতে পারে। বাজারজাতকরণ পরিবেশ বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমস্যার পূর্বানুমান ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা যায়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, বাজারজাতকরণ কার্যক্রমের ওপর পরিবেশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে। একজন বাজারজাতকারীর বাজারজাতকরণ পরিবেশ অধ্যয়নের ওপর এর সাফল্য অনেকাংশে নির্ভরশীল।