[] পাঠ-৬.৪ : সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্বের ভূমিকা
Role of Leadership to Establish Good Governance:
একটি রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে কি না তা নির্ভর করে নেতৃত্বের উপর। কারণ নেতৃত্ব সমাজ ও রাষ্ট্রকে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে পরিচালিত করে।
তবে নেতৃত্ব যদি অসৎ, অদক্ষ, দুর্নীতিপরায়ণ হয় তাহলে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত না হয়ে রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ মন্দ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জাতীয় নেতাদের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত এ বিষয় নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো-
১। দেশপ্রেম বিদ্যমান : উত্তম নেতৃত্ব দেশকে ভালোবাসে। তাই ক্ষমতার পরিবর্তন হলেও রাষ্ট্রের উন্নতির ধারাবাহিকতা বজায় থাকে, যার মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়।
২। জবাবদিহির নিশ্চয়তা : নেতার নেতৃত্বে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, দায়িত্বশীলতার অভাব না থাকলে রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণের দায়িত্ব নেতারাই গ্রহণ করেন।
উত্তম নেতৃত্বের গৃহীত নীতি ও পরিকল্পনা উপর দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। নেতা যদি সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ না করেন তবে সুশাসন ব্যাহত হয়।
৩। সদিচ্ছার নিশ্চয়তা : বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আইনের শাসন, মানবাধিকার, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম উপাদান।
এগুলো নেতৃত্বের সদিচ্ছার মাধ্যমেই সম্ভব হতে পারে।
৪ । প্রশাসনিক গতিশীলতা বৃদ্ধি : একজন দক্ষ নেতা দক্ষ প্রশাসন গড়ে তুলতে পারেন, যা সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জরুরি।
দক্ষ নেতৃত্ব অধস্তন কর্মীদের মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয় আনয়ন করে প্রশাসনকে গতিশীল করে তোলে।
৫। গণতন্ত্রের ধারক ও বাহক : গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে থাকে, যা দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে ।
গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের প্রতি রাষ্ট্রের নাগরিকদের আস্থা থাকে। কিন্তু অগণতান্ত্রিক নেতৃত্বে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দায়িত্বশীলতার অভাব রয়েছে।
অগণতান্ত্রিক নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণে নাগরিক অংশগ্রহণ সমর্থন করে না, যা রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বড় বাধা।
৬। নেতৃত্ব নির্বাচন : নেতৃত্ব নির্বাচন যদি চাটুকারিতা, আত্মীয়তা, ধনসম্পদের দ্বারা হয় তাহলে কখনোই সেই রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয় না।
নেতৃত্ব নির্বাচনের মাধ্যমে বৈধ হতে হবে। বৈধ নেতৃত্ব বাকস্বাধীনতা, নাগরিক অধিকার রক্ষা করে।
৭। আইনের অনুশাসন নিশ্চিত করে : যোগ্য নেতা আইনের অনুশাসনে বিশ্বাস করেন। তাই তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করেন।
৮। জনমত সৃষ্টিতে সহায়তা : নেতা নিজের দক্ষতা ও প্রজ্ঞা দিয়ে জনমতকে স্বপক্ষে নিয়ে আসেন।
নেতৃত্বের মাধ্যমেই সাধারণ জনগণ রাজনৈতিকভাবে শিক্ষিত হয়ে ওঠে এবং সচেতন হয়। এমনিভাবে নেতা জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন।
৯। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়ন : রাষ্ট্রের অগ্রগতির জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া রাষ্ট্রের ব্যবসা-বাণিজ্যে অগ্রগতি অসম্ভব। রাষ্ট্রে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দিলে বিদেশি বিনিয়োগ অনাগ্রহী হয়।
নেতৃত্বের গুণে রাষ্ট্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় থাকে। ফলে সুশাসন ত্বরান্বিত হয়।
১০। সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন : সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে সুসম্পর্ক
স্থাপন আবশ্যক।
বিরোধী দল সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করলে এবং ভালো, উন্নয়নমূলক কাজে সহায়তা করলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
অর্থাৎ, দেশের স্বার্থে সব দল বা নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন।
১১। জনমতের প্রাধান্য : সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনমতের প্রাধান্য আবশ্যক। দেশের জনগণের মতামতের গুরুত্ব দিয়ে শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হলে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ গতিশীল হয়।
সৎ ও যোগ্য নেতা জনমতের প্রাধান্য দিয়ে কর্মসূচি দিয়ে থাকেন ।
১২। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দান : কোনো দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ।
দেশের নেতা তথা সরকার যদি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দান করে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে, তাহলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ত্বরান্বিত হয়।
১৩। ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা : ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা ছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠা বাধাগ্রস্ত হয়।
দেশের নেতৃবৃন্দ যদি
যোগ্য ও সৎ হন তবেই ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
১৪। মৌলিক অধিকার রক্ষা : সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা আবশ্যক। যোগ্য নেতৃত্ব দেশের জনগণের মৌলিক অধিকার সুরক্ষা করে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে।
১৫। আমলাতান্ত্রিক স্বচ্ছতা : সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দেশের আমলাদের সততা, দক্ষতা ও স্বচ্ছতার অধিকারী হতে হবে।
রাজনৈতিক বাধা যেন আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সৃষ্টি না করে, এ বিষয়ে দেশের নেতাদের খেয়াল রাখতে হবে।
আমলাদের দায়িত্ব ও পদোন্নতি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রেখে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ করতে নেতাকে সজাগ থাকতে হবে।
একমাত্র যোগ্য ও সৎ নেতৃত্বই পারে স্বচ্ছ আমলাতন্ত্র সৃষ্টির মাধ্যমে দেশে সুশাসন নিশ্চিত করতে।
উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, উত্তম নেতৃত্ব সুশাসনের জন্য জরুরি। সুদৃঢ় ও সুদক্ষ নেতৃত্ব জাতীয় সংকট দূর করতে পারে।
জাতীয় সংহতির জন্য সুযোগ্য নেতৃত্বের প্রয়োজন। কেননা সুযোগ্য ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব জাতিগত দাঙ্গা, বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করতে পারে।
উত্তম নেতৃত্ব রাষ্ট্রের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ভূমিকা রাখে, যা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত সহায়ক।