পাঠ-৩.৩ সুশাসন প্রতিষ্ঠায় চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর নেতিবাচক ভূমিকা আলোচনা করা হলো:

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর নেতিবাচক ভূমিকা:

প্রত্যেকটি বিষয়ের ক্ষেত্রেই ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক পরিলক্ষিত হয়।

তাই চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীরও ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক রয়েছে।

চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী একদিকে যেমন সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক উপাদান হিসেবে কাজ করে, তেমনি অন্যদিকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতাও সৃষ্টি করে।

নিচে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর নেতিবাচক ভূমিকা তুলে ধরা হলো-

১।বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি : সুশাসন একটি সুশৃঙ্খল শাসনব্যবস্থা।

সুশাসনের জন্য প্রয়োজন হয় সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ।

কিন্তু চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী যখন তাদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য দাঙ্গাহাঙ্গামা, বিক্ষোভ, মিছিল, অপহরণ, গুপ্তহত্যা, হরতাল, অবরোধ, ধর্মঘট ও পিকেটিং করে, তখন রাষ্ট্রের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়।

ফলে রাষ্ট্রে এক ধরনের বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়, যা সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে।

২।অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত ও কার্যকলাপ :

সুশাসনের প্রধান শর্ত হলো গণতন্ত্র।

কিন্তু চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর সিদ্ধান্ত ও কার্যকলাপ অগণতান্ত্রিক।

কেননা এ ধরনের গোষ্ঠী সাংগঠনিকভাবে গণতান্ত্রিক নয় এবং এদের দ্বারা গৃহীত সিদ্ধান্ত ও কার্যকলাপের অধিকাংশই গোষ্ঠীস্বার্থ উদ্ধারের জন্য।

এক্ষেত্রে জনগণের সমর্থন প্রতিফলিত হয় না। ফলে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়।

৩।রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা : চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী অরাজনৈতিক সংগঠন।

এ গোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় স্বার্থের কথা চিন্তা না করে গোষ্ঠীস্বার্থ অর্জনের কথা চিন্তা করে। আর উক্ত স্বার্থ হাসিলের জন্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে।

এতে রাষ্ট্রে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়। মানুষের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি হয়, যা সুশাসনের গতিরোধক হিসেবে কাজ করে।

৪।বৈষম্য সৃষ্টি : চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য অর্জন ও স্বার্থ আদায়ের উদ্দেশ্যে সংগঠিত হয়।

এ গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ ও লক্ষ্য পূরণের জন্য বিভিন্ন ধরনের কৌশল অবলম্বন করে।

নানাভাবে সরকারের সিদ্ধান্তের উপর প্রভাব বিস্তার করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করে।

মাঝে মাঝে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের প্রাপ্যের চেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নেয়।

ফলে সমাজ ও রাষ্ট্রে বৈষম্য ও অসমতা প্রতিষ্ঠিত হয়।


৫।গুটিকয়েকের আধিপত্য :
চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী গুটিকয়েক ব্যক্তির সমষ্টি।
এ গোষ্ঠী এক ও অভিন্ন লক্ষ্যার্জনের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়।

তাই চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীকে সংখ্যালঘিষ্ঠের একটি দল বলা যায়। কিন্তু এ সংখ্যালঘিষ্ঠরা যদি শক্তিশালী ও প্রভাবশালী হয় তাহলে তাদের আধিপত্য বিস্তারে কোনো সমস্যা হয় না।

অর্থাৎ শক্তি ও প্রভাবের প্রতিফলন ঘটিয়ে চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী গুটিকয়েকের আধিপত্য কায়েম করে।

এমনকি চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে এ গুটিকয়েক ব্যক্তি সংখ্যাগরিষ্ঠের অধিকারও হরণ করতে পারে।

যেমন— অধিকাংশ সময়েই মালিকশ্রেণি কর্তৃক দরিদ্রশ্রেণির উপর আধিপত্য বিস্তার ও অধিকারহরণের দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।

অতএব চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর নেতিবাচক ভূমিকা যেকোনো রাষ্ট্রেই সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

তবে বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীসমূহ নিজেদের তথা দেশ ও জাতির কল্যাণে সরকারি কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত করতে সচেষ্ট থাকছে।

চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীসমূহ সরকারি বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বশীলতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অগ্রগামী ভূমিকা রাখছে।

আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তাই চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর ভূমিকা ও গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।