স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব
উত্তর : ভূমিকা : ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাঙালি জাতির জীবনে সর্বাপেক্ষা স্মরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা I পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার, শোষণ আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে পূর্ববাংলার আপামর জনসাধারণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার এক চূড়ান্ত ও দুর্বার সংগ্রামই ছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত বাঙালিরা অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় ১৯৭১ সালে। পশ্চিম পাকিস্তানের ভয়াল থাবাকে উপেক্ষা করে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে লক্ষ কোটি জনতা। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে প্রায় ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনদের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি। যুদ্ধে পাকিস্তানিরা সৈন্য, অস্ত্র ও শক্তির দিক থেকে শক্তিশালী থাকলেও মুক্তিযোদ্ধাদের দক্ষ সংগঠন, নেতৃত্ব ও কৌশলের কাছে তারা পরাজয় মানতে বাধ্য হয়।
স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিম্নোক্ত দু’ধরনের নেতৃত্ব ছিল :
(ক) রাজনৈতিক বা বেসামরিক নেতৃত্ব : বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার বা মুজিবনগর সরকার এই যুদ্ধে রাজনৈতিক বা বেসামরিক নেতৃত্ব দান করে। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি ও দল যেমন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী), ন্যাপ (মোজাফফর), সাম্যবাদী দল (তোয়াহা), ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া), কমিউনিস্ট পার্টি (কমরেড মণিসিংহ) যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব প্রদান করে, যা দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য একান্ত কাম্য ছিল ।
(খ) সামরিক নেতৃত্ব : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সামরিক নেতৃত্ব দান করে মুক্তিবাহিনী। মুক্তিবাহিনী আবার দুটি পৃথক অংশে বিভক্ত ছিল। (ক) নিয়মিত বাহিনী, (খ) অনিয়মিত বাহিনী। নিয়মিত সেনাবাহিনীর নিয়মিত সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল। গণবাহিনী গঠিত হয়েছিল ছাত্র, কৃষক ও শ্রমিকদের নিয়ে। মুক্তিবাহিনীতে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তাদের অধিকাংশই ছিল আওয়ামী লীগের সদস্য, কর্মী বা আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতিশীল। তবে অন্যান্য দল ও মতাদর্শে বিশ্বাসীদেরও মুক্তিবাহিনীতে যোগদানের পথ উন্মুক্ত ছিল। এছাড়াও সামরিক নেতৃত্ব দেয়– মুজিব বাহিনী, আফসার বাহিনী, হেমায়েত বাহিনী, কাদেরিয়া বাহিনী, সিরাজ বাহিনী ইত্যাদি।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট অনেক বড়। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল ক্ষণস্থায়ী। বিশ্বের খুব কম রাষ্ট্রই এত কম সময়ে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এই সাফল্যের পিছনে বাংলাদেশের সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক জনতার অবদান ছিল। তবে যৌথ বাহিনীর অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। তাদের দেওয়া নেতৃত্ব, রণকৌশল, সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করে। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল কৃতি সন্তানকে নিয়ে দেশ, জাতি গর্ববোধ করে। তাদের এই সফলতার জন্য বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের নাম যুক্ত হয় ।