প্রশ্ন : ৮। ছাত্রসমাজের ১১ দফা কর্মসূচির বর্ণনা কর।অথবা, ছাত্রদের ১১-দফা আন্দোলনের কর্মসূচি কি ছিল?

ছাত্রসমাজের ১১ দফা

উত্তর : ভূমিকা : পাকিস্তানি শোষণ বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাসে ছাত্রসমাজের নেতৃত্বে যে কয়টি আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তার মধ্যে ১১ দফা আন্দোলন ছিল উল্লেখযোগ্য।

১৯৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি করলে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ এই ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে প্রচণ্ড বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং ১৯ জানুয়ারি সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে ধর্মঘট আহ্বান করে।

এমতাবস্থায় আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনকে বেগবান করার লক্ষ্যে ছাত্রসমাজকে আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত করার জন্য আওয়ামী লীগ ও কমিউনিস্ট পার্টি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের মধ্যে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলে।

এই দুই ছাত্র সংগঠন ১৯৬৯ সালের ৫ জানুয়ারি ‘ছাত্র সংগ্রাম কমিটি’ গঠন করে এবং আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে ১১ দফা দাবি ঘোষণা করে।

১১ দফার ভিত্তিতে ছাত্রদের আন্দোলন স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকারের পতনকে ত্বরান্বিত করেছিল।
ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা কর্মসূচি : ১৯৬৯ -এর গণআন্দোলনে মূল চালিকাশক্তি ছিল ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা কর্মসূচি।

নিম্নে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা কর্মসূচি উল্লেখ করা হলো :
১. শিক্ষার প্রসার ও ছাত্রদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি
২. সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বাধীনতা প্রদানের দাবি।
৩. পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবি।
৪. পশ্চিম পাকিস্তানে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তনের দাবি। ৫. শিল্প প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবি ।
৬. কৃষকদের খাজনা ও ঋণ মওকুফের দাবি।
৭. শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের দাবি।
৮. পূর্ব পাকিস্তানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও জনসম্পদের ব্যবহার সুনিশ্চিতকরণের দাবি।
৯. নির্যাতনমূলক আইন প্রত্যাহারের দাবি।
১০. নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণের দাবি।
১১. রাজবন্দীদের মুক্তি ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের দাবি।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ৬ দফা যেমন ছিল পূর্ব পাকিস্তানিদের মুক্তির সনদ তেমনি ছাত্রসমাজের ১১ দফা ছিল সমগ্র পাকিস্তানিদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার বলিষ্ঠ দিক-নির্দেশনা। ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলন শেষ পর্যন্ত গণআন্দোলনে রূপ লাভ করে এবং ১১ দফা দাবির যৌক্তিকতা পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক সাড়া জাগায়। বস্তুত ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনের শেষ পরিণতি ছিল ১৯৬৯ সালের অণঅভ্যুত্থান যা আইয়ুব খানের পতনকে অবশ্যম্ভাবী করে ছাত্র জনতার বিজয় কেতন উড়িয়েছিল।