ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ :
উত্তর : ভূমিকা : বাঙালি জাতির রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসে ছাত্রসমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ লক্ষণীয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা ছিল ইতিবাচক ও প্রশংসনীয়।
১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে বিশেষ করে ১৯৬৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এক নজিরবিহীন গণআন্দোলনের সূচনা করে । এ সময় ছাত্ররা গঠন করে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।
সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ : ৬ দফা দাবিকে কেন্দ্র করে পূর্ববাংলায় যখন ছাত্র-জনতা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে তখনই সরকার আন্দোলনের গতিধারা স্তিমিত করার জন্য শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ নামে এক মিথ্যা মামলা দায়ের করে। এ সময় একদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে কারারুদ্ধ অপরদিকে অন্যান্য দলের নেতৃবৃন্দের নিষ্ক্রিয়তায় পূর্ববাংলায় সরকার বিরোধী আন্দোলন অনেকটা স্তিমিত হয়ে পড়ে।
এ অবস্থায় ১৯৬৯ সালের ৫ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন গ্রুপ), ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া গ্রুপ) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ঐক্যবদ্ধ হয়ে আইয়ুব বিরোধী মঞ্চ হিসেবে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বা কমিটি গঠন করে। ডাকসুর সহ-সভাপতি (ছাত্রলীগ নেতা) তোফায়েল আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক (জাতীয় ছাত্র ফেডারেশন) নাজিম কামরান চৌধুরী এবং অন্য কয়েকজন ছাত্র নেতা কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদের সদস্য ছিলেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, এ সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগেই পূর্ববাংলার আপামর জনসাধারণের দাবি সংবলিত ঐতিহাসিক ১১ দফা দাবি প্রণীত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা ভবন প্রাঙ্গণে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ১৪ ফেব্রুয়ারির ছাত্রসভায় এটি পড়ে শোনানো হয়। মূলত ১৯৬৯ সালের ছাত্র সংগ্রাম কমিটির ১১ দফার ভিত্তিতে ব্যাপক গণআন্দোলন গড়ে উঠেছিল ।