কার্য বিশ্লেষণের উদ্দেশ্যসমূহ
উত্তর : ভূমিকা : কার্য বিশ্লেষণ পদ্ধতির মাধ্যমে কাজের বর্তমান পরিস্থিতি কাজ সম্পাদনের অবস্থা এবং অন্যান্য কাজের সাথে এর সম্পর্ক নির্ণয় করা হয়। তাই প্রতিষ্ঠানে সার্থক মানব সম্পদ পরিকল্পনা প্রণয়ন, কর্মী নির্বাচন, স্থাপনা, প্রশিক্ষণ, মজুরি প্রদান, কার্য মূল্যায়ন ক্ষেত্রে কার্য বিশ্লেষণ বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। কার্য বিশ্লেষণের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি কাজ কিভাবে সম্পাদিত হলো তা ব্যবস্থাপনাকে জানানো। কার্য বিশ্লেষণের উদ্দেশ্যগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. সংগঠন কাঠামো : সংগঠন কাঠামো তৈরিতে কার্য বিশ্লেষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শ্রম বিভাগ সম্পর্কে পূর্ণ তথ্য পাওয়া যায় এখান থেকে । ফলে সংগঠন কাঠামো নির্ধারণ সহজতর হয়।
২. কার্যাবস্থার উন্নয়ন : কার্যক্ষেত্রে কর্মীদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগসুবিধা প্রদান করা হয়। এসব সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণের ক্ষেত্রেও কার্য বিশ্লেষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।
৩. বেতন ও মজুরি নির্ধারণ : কার্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে কাজের প্রকৃতি, গুরুত্ব এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ায় এর অবস্থান নির্ণয় করা হয়। এছাড়া কাজের পরিবেশ কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য বিপদ ও ঝুঁকিসমূহ ও এর দ্বারা নির্ধারণ করা যায়। ফলে এসব তথ্যের ভিত্তিতে কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত মানব সম্পদের বেতন, ভাতা, পারিতোষিক ইত্যাদি নির্ধারণ করা সহজ হয়। কাজের প্রকৃতি এবং মানব সম্পদের যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে বেতন ভাতা নির্ধারিত না হলে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার সাফল্য আসে না ।
৪. কার্যফল মূল্যায়ন : কার্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে কাজের একটি আদর্শমান প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং এ মানের উপর ভিত্তি করেই নিয়োজিত মানব সম্পদের কার্যফল মূল্যায়ন করা হয়। অর্থাৎ সংগঠনের কাজসমূহ সঠিকভাবে সম্পাদিত হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্যও কার্য বিশ্লেষণ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করা হয়।
৫. কর্মী সংগ্রহ ও নির্বাচন : কার্য বিশ্লেষণ পদ্ধতির প্রধান উদ্দেশ্যই হলো কর্মী সংগ্রহ ও নির্ধারণ। কারণ এই পদ্ধতিতে একটি পদের প্রকৃতি, দায়িত্ব, গুরুত্ব ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা থাকে এবং পদে নিয়োজিত ব্যক্তির গুণাবলি শিক্ষা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, যোগ্যতা ইত্যাদি নিয়ে আলোকপাত করা হয়। সেক্ষেত্রে কর্মী সংগ্রহ ও নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যাদি প্রদান করে কার্য বিশ্লেষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।
৬. ভুল বোঝাবুঝি নিরসন : বিভিন্ন সময় কাজ সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার দরুন কর্মীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয় এ ধরনের ভুল ধারণা অনেক সময় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করে। কার্য বিশ্লেষণ পদ্ধতি এসব ভুল বোঝাবুঝি নিরসনেরও সাহায্য করে ।
৭. প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা : বেশির ভাগ সময়ই দেখা যায় কর্মীদের যোগ্যতা শিক্ষা থাকলেও কাজের সরাসরি অভিজ্ঞতা নেই অথবা অন্য কোথাও চাকরির অভিজ্ঞতা বর্তমান প্রতিষ্ঠানের কাজের ক্ষেত্রে সহায়ক নাও হতে পারে। এ ধরনের তথ্য কার্য বিশ্লেষণ থেকে সহজেই পাওয়া যায় এবং কর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় ।
৮. কর্মী বদলি ও পদোন্নতি : কার্য বিশ্লেষণ তথ্যের মাধ্যমে কর্মীকে বদলি ও পদোন্নতি প্রদান করা হয়। কার্য বিশ্লেষণ সম্পাদনের পর তা যাচাই করে কর্মীদের যোগ্যতা বিবেচনা করে সেই অনুসারে তাদের পদোন্নতি বা বদলি করা হয় ।
৯. দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করা : নিযুক্ত মানব সম্পদ কাজে যোগ দিয়েই জানতে পারে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য কি, তারা কার দ্বারা পরিচালিত হবে এবং সে কাকে পরিচালনা করবে। সে কার কাছে দায়বদ্ধ থাকবে সংগঠনে তার অবস্থান কি এবং তার কাজের গুরুত্ব কতটুকু এসব তত্ত্ব কার্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে নির্ধারিত থাকে। আর এসব তত্ত্ব মানব সম্পদকে তার কাজ সঠিক ও সুন্দরভাবে করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কার্য বিশ্লেষণ মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার প্রয়োগিক কাজকে সহজ করে তোলে। উপযুক্ত কাজের জন্য উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন মানব সম্পদ নিয়োগের ক্ষেত্রে কার্য বিশ্লেষণ বিশেষ ভূমিকা রাখে। এটি কেবল মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নয়, নিযুক্ত মানব সম্পদকে দায়িত্ব সম্পর্কে ওয়াকিফহাল করার জন্য কার্য বিশ্লেষণ ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।