জাতিসংঘ স্বীকৃত মানবাধিকার কি?:

জাতিসংঘ স্বীকৃত মানবাধিকার
Human Rights Recognised by UNO:

১৯৪৮ সালের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র গৃহীত হওয়ার আগে মানবাধিকারসংক্রান্ত অনেক ঘোষণাপত্র ও চুক্তি হয়েছে।

এসবের মধ্যে অন্যতম হলো ব্রিটিশ ম্যাগনাকার্টা (১২১৫), মানুষ ও নাগরিক অধিকারসংক্রান্ত ফ্রান্স ঘোষণাপত্র (১৭৮১) এবং আমেরিকার বিল অব রাইট্স (১৭৯১) ইত্যাদি।

অবশেষে ১৯৪৮ সালের ১০ই ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত ও ঘোষিত হয়।

এই ঘোষণাপত্রে ১টি প্রস্তাবনা এবং ৩০টি ধারা রয়েছে। নিচে জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের ধারাসমূহের ভিত্তিতে মানবাধিকারসমূহ উল্লেখ করা হলো-

ধারা-১: সব মানুষই স্বাধীন অবস্থায় এবং সমমর্যাদা ও অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। অতএব সকলের প্রতি ভ্রাতৃসুলভ আচরণ করতে হবে।

ধারা-২:জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নারী-পুরুষ-নির্বিশেষে সকলেই ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত সব অধিকার সমানভাবে ভোগ
করবে।

ধারা-৩: প্রত্যেকেরই জীবনধারণ, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার অধিকার থাকবে।

ধারা-৪: কাউকে দাস হিসেবে বা দাসত্বের বন্ধনে আবদ্ধ রাখা চলবে না। সব প্রকার দাসপ্রথা ও দাস ব্যবসা নিষিদ্ধ ।

কাউকে নির্যাতন অথবা নিষ্ঠুর, অমানবিক অথবা মর্যাদাহানিকর ব্যবহার ও কোনো প্রকার শাস্তি ভোগ
করতে বাধ্য করা চলবে না।

ধারা-৬: আইনের চোখে প্রত্যেকেরই সর্বত্র মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি লাভের অধিকার রয়েছে।

ধারা-৭: আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান এবং সকলেই আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারী।

ধারা-৮: কারও মৌলিক অধিকার খর্ব করা হলে উক্ত ব্যক্তি বিচারালয়ের মাধ্যমে যথার্থ বিচার লাভের অধিকারী।

ধারা-৯ : কাউকে বিনা কারণে গ্রেফতার, আটক বা নির্বাসন দেওয়া যাবে না।

ধারা-১০ : প্রত্যেক ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ব্যাপারে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারবে এবং এ ব্যাপারে নিরপেক্ষ সুবিচার পাওয়ার অধিকারী হবে।

ধারা-১১ : অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত ব্যক্তি নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করতে পারবে।

কেউ দোষী প্রমাণিত না হলে তাকে শাস্তি দেওয়া যাবে না।

ধারা-১২ : গৃহের নিরাপত্তা ও যোগাযোগের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার সকলের থাকবে।

কারও গৃহে বেআইনিভাবে হামলা করা যাবে না এবং কারও গোপনীয় যোগাযোগের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করা যাবে না।

ধারা-১৩ : প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজ দেশের সর্বত্র স্বাধীনভাবে চলাফেরা ও বসবাস করতে পারবে।

প্রত্যেকেরই নিজ দেশ বা যেকোনো দেশ ছেড়ে যাওয়ার ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের অধিকার থাকবে।

ধারা-১৪ : নির্যাতনের হাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য অন্য রাষ্ট্রের আশ্রয় গ্রহণের অধিকার রয়েছে।

ধারা-১৫ : প্রত্যেকেরই জাতীয়তার অধিকার রয়েছে। কাউকে যথেচ্ছভাবে তার জাতীয়তার অধিকার থেকে বঞ্চিত
করা যাবে না।

ধারা-১৬ : জাতি-বর্ণ-নির্বিশেষে সব প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পরিবার গঠন করতে পারবে।

বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদে নারী-পুরুষ উভয়েরই সমান অধিকার থাকবে।

ধারা-১৭ : প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত ও যৌথভাবে সম্পত্তির মালিক হওয়ার অধিকার রয়েছে।
কাউকে জোরপূর্বক তার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

ধারা-১৮ : প্রত্যেকেরই চিন্তা, বিবেক ও ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে।

সবাই নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুষ্ঠানকে স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারবে।
সকলের ও বিশ্বাস পরিবর্তনের অধিকার রয়েছে।

ধারা-১৯ : প্রত্যেক ব্যক্তির স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করার অধিকার রয়েছে।
কোনো পেশাভিত্তিক সংস্থার সদস্য হওয়ার জন্য বাধ্য করা যাবে না।

ধারা-২০ : প্রত্যেকেরই শান্তিপূর্ণভাবে সম্মিলিত হওয়ার অধিকার রয়েছে।

কাউকে রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা অন্য কোনো পেশাভিত্তিক সংস্থার সদস্য হওয়ার জন্য বাধা করা যাবে না।

ধারা-২১ : সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সকলের নিজ রাষ্ট্রের সরকার গঠনের অধিকার থাকবে।

সকলেই নিয় দেশের সরকারি চাকরি লাভের ক্ষেত্রে সমান সুযোগ পাবে।

ধারা-২২ : সমাজের সদস্য হিসেবে সকলের সামাজিক নিরাপত্তা লাভের অধিকার রয়েছে।

ধারা-২৩ : প্রত্যেক ব্যক্তির স্বাধীনভাবে যেকোনো পেশা বা বৃত্তি গ্রহণ করার অধিকার ও উপযুক্ত পারিশ্রমিক লাভের অধিকার রয়েছে।

বেকারত্ব থেকে অব্যাহতি লাভ এবং শ্রমিক সংঘ গঠন করার অধিকার থাকবে।

ধারা-২৪ : প্রত্যেকেরই কর্মজীবনে বিশ্রাম ও অবকাশ এবং কার্য থেকে অবসর ও বেতনসহ ছুটি ভোগের অধিকার
থাকবে।

ধারা-২৫ : প্রত্যেক ব্যক্তির নিজের ও পরিবারের স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার উপযোগী খাদ্য, বাসস্থান ও চিকিৎসা লাভের অধিকার থাকবে।

এছাড়া বেকারত্ব, অসামর্থ্য, অসুস্থতা, বৈধব্য, বার্ধক্য কিংবা অন্যান্য অপারগতার ক্ষেত্রে পূর্ণ সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার লাভ করবে।

মা ও শিশুর বিশেষ যত্ন লাভের অধিকার থাকবে।

ধারা-২৬ : সকলের শিক্ষা লাভের অধিকার রয়েছে। ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশ ও কাজের যোগ্যতা অর্জনের জন্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাসহ বিভিন্ন ধরনের উচ্চশিক্ষা লাভে সকলের অধিকার থাকবে ।

ধারা-২৭ : প্রত্যেকেই সমাজের সাংস্কৃতিক সব ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
প্রত্যেক ব্যক্তি শিল্প ও বিজ্ঞানের বিকাশে সুবিধা লাভের পূর্ণ অধিকার সমভাবে ভোগ করবে।

ধারা-২৮ : সন্ত্রাস, অশান্ত ও কলহপূর্ণ বিশ্বে জাতিসংঘ ঘোষিত মৌলিক মানবিক অধিকারসমূহ সব সময় উপভোগ করা সম্ভব নয় বলে সকলের জন্য সামাজিক ও আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার অধিকার থাকবে।

ধারা-২৯ : ব্যক্তির পরিপূর্ণ বিকাশ লাভের জন্য প্রত্যেককে অধিকার ভোগের সাথে সাথে তার সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্য পালন করতে হবে।

কিন্তু জাতিসংঘের আদর্শ ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থী কোনো অধিকার ও স্বাধীনতা কেউ ভোগ করতে পারবে না।

ধারা-৩০ : এ ঘোষণায় উল্লেখিত কোনো বিষয়কে এরূপভাবে ব্যাখ্যা করা চলবে না যাতে মনে হয়, এ ঘোষণার অন্তর্ভুক্ত কোনো অধিকার বা স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্যে কোনো রাষ্ট্র, দল বা ব্যক্তিবিশেষের আত্মনিয়োগের অধিকার রয়েছে।