৫ জিবি ফ্রি ইন্টারনেট পাবেন সকল গ্রাহক: কিভাবে নিবেন?
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি দেশব্যাপী অসংখ্য মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলেছে। চলতি বছরের ১৮ জুলাই রাত থেকে সারাদেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে জনজীবনে এক বিরাট অসুবিধার সৃষ্টি হয়েছে। টাকা-পয়সার লেনদেন থেকে শুরু করে বিভিন্ন অফিসিয়াল কাজ স্থবির হয়ে গিয়েছিল। এমনকি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজও বিঘ্নিত হয়েছিল।
ইন্টারনেট সেবা পুনরায় চালুর পর্যায়ক্রম
অবশেষে, ২৩ জুলাই রাত থেকে পরীক্ষামূলকভাবে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু করা হয়। প্রথম দিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ইন্টারনেট সেবা দেওয়া হয় ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ অফিস-আদালতে। এতে করে সেসব প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম পুনরায় চালু হতে শুরু করে এবং ব্যাহত হওয়া আর্থিক কার্যক্রম কিছুটা স্বাভাবিক হয়। পরে ২৫ জুলাই বৃহস্প���িবার রাত থেকে বাসা-বাড়িতেও ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা হয়।
একইসাথে, গুগল ক্যাশ সার্ভার পুনঃস্থাপন করে ধীরে ধীরে ইন্টারনেটের স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালু ছিল। এই উদ্যোগের ফলে, সাধারণ মানুষ ইন্টারনেট সেবা পাবার ক্ষেত্রে আরো সুফল ভোগ করতে সক্ষম হয়।
মোবাইল ইন্টারনেটের সেবা চালু করার সিদ্ধান্ত
অন্যদিকে, দেশের প্রায় ১৩ কোটি মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। এই অসুবিধার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে, অবশেষে সরকার মোবাইল ইন্টারনেট সেবা চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। তথ্য প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানিয়েছেন, রোববার বিকেলে একটি বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, সারাদেশে মোবাইল ইন্টারনেট কানেকটিভিটি বিকাল ৩টার পর থেকে পুনঃস্থাপন করা হবে। এর মাধ্যমে, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোকেও দ্রুত প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ফ্রি ৫ জিবি ইন্টারনেট সকল মোবাইল গ্রাহকদের জন্য
মোবাইল ইন্টারনেট সেবার বিঘ্নিত হওয়ার কারণে সকল মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকদের ক্ষতির সম্মানে, সরকার কর্তৃপক্ষ সকল গ্রাহককে ৫ জিবি ফ্রি ইন্টারনেট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ইন্টারনেট সেবা বিকাল ৩টা থেকেই সক্রিয় হবে এবং এর মেয়াদ থাকবে ৩ দিন। গ্রাহকদের এই ফ্রি ইন্টারনেট পেতে কোনো বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে না, বরং এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মোবাইল ইন্টারনেট চালুর সঙ্গে সঙ্গে সক্রিয় হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, ফ্রী ইন্টারনেটের বিষয়ে কোনো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বা কনফিগারেশনের দরকার নেই, এটি সরাসরি গ্রাহকের ইন্টারনেট ব্যালেন্সে যোগ হয়ে যাবে।
বন্ধ থাকা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম
তবে, মেটার তিনটি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম – ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এবং টিকটক এখনো বন্ধ রয়েছে। বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশন) এখনো জানায়নি কবে নাগাদ এই প্ল্যাটফর্মগুলো পুনরায় চালু হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে, অনেক ব্যবহারকারী ভিপিএনের মাধ্যমে এই প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করছেন।
ইন্টারনেট সেবা বন্ধের ফলাফল
ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকার ফলে মানুষের অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষাকার্যক্রম থেকে শুরু করে বিভিন্ন লাইভ স্ট্রিমিং প্রোগ্রাম, জরুরী বার্তা প্রেরণ এবং গ্রহণের সমস্যা সৃষ্টি হয়। এছাড়াও, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কেনাকাটা করতে গিয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের উভয়েরই নানা ধরনের অসুবিধার মুখোমুখি হতে হয়েছে।
ভবিষ্যতে সেবা বিঘ্ন না হওয়ার প্রতিশ্রুতি
তথ্য প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক আরও উল্লেখ করেছেন যে, ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের পরিস্থিতি আর না ঘটে সেজন্য সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করবে। ইন্টারনেট যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে এবং গ্রাহকদের সেবাপ্রাপ্তিতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়, সে বিষয়ে সজাগ থেকে কাজ করে যাবে।
সরকারি উদ্দেশ্য হলো সহিংস পরিস্থিতি কার্যকরভাবে মোকাবেলা করা এবং একইসাথে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এই লক্ষ্যে ইন্টারনে�� সেবা পুনঃস্থাপনের প্রচেষ্টা একটি প্রধান পদক্ষেপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রভাব
মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকার ফলে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে বিশাল প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইন শিক্ষার ওপর নির্ভর করছে। এ থেকে পিছিয়ে পড়া বা কাঙ্ক্ষিত জ্ঞান অর্জনে অসম্পূর্ণতা সৃষ্টি হতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা অনলাইন ক্লাস, প্রেজেন্টেশন, প্রজেক্ট সাবমিশন প্রভৃতি কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার কারণে ব্যাপক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। এমনকি দেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন শিক্ষাক্রম নির্ভরতা যেখানে প্রধান হয়েছে, সেখানে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় সমস্যাটি আরও ডোবারগন্ধ দিয়েছে।
ই-কমার্স এবং আর্থিক খাতে প্রভাব
ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকার ফলে ই-কমার্স খাতেও বিশাল ধাক্কা লাগে। বিশেষ করে যারা অনলাইনের মাধ্যমে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করেন, তারা একইসঙ্গে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকে নানা ধরনের অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছেন। ডেলিভারি সেবা থেকে শুরু করে পেমেন্ট সেবা পর্যন্ত সবকিছুই স্থবির হয়ে পড়েছিল।
অন্যদিকে, আর্থিক খাতে অফলাইন সাধারণ কার্যক্রমের উপর নির্ভরতা থাকার ফলে নারীদের দ্রুত কার্যক্রম পরিচালনা করায় সময় ও অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং, পেমেন্ট গেটওয়ে এবং অন্যান্য ডিজিটাল লেনদেন প্রয়োজনীয় কার্যক্রমও সমস্যা তৈরি করেছে।
সরকারি পদক্ষেপ ও আশ্বাস
এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। তথ্য প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক আশ্বাস দিয়েছেন যে, ভবিষ্যতে যাতে ইন্টারনেট সেবা বন্ধের এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করা হবে। এটি নিশ্চিত করার জন্য প্রতিনিয়ত মনিটরিং ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
দেশের বিভিন্ন অবস্থায় ইন্টারনেট
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ইন্টারনেট সংযোগ ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রচলিত রয়েছে। শহুরে এলাকার সাথে তুলনায় গ্রামীণ এলাকাগুলিতে ইন্টারনেট সুবিধা সীমিত। ইন্টারনেট সেবা পুনঃস্থাপনের সাথে সাথে, গ্রামীণ এলাকায় এই সেবার গুরুত্ব বিশাল পরিসরে প্রতিফলিত হয়েছে। অনেক কৃষক ও ব্যবসায়ী ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাদের পণ্য বিপণন করে থাকেন। তাই ইন্টারনেট সেবা পুনঃস্থাপন তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
ব্যক্তি ও সমাজে যোগাযোগের প্রভাব
মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হওয়ার পর থেকেই ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে বেশ কিছু অস্থিরতা দেখা যায়। পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ, প্রয়োজনীয় তথ্য ও সংবাদ প্রাপ্তি, এবং অন্যান্য দৈনন্দিন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। বিশেষ করে যারা দূরত্বে থাকেন, তাদের জন্য এটি ছিল অত্যন্ত সমস্যাজনক।
ভবিষ্যতে প্রযুক্তি ও ডিজিটালাইজেশনের উন্নয়ন
বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্য রয়েছে। ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে। তবে, এই ধরনের ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হওয়ার পরেও আমরা বুঝতে পারছি যে, প্রযুক্তি নির্ভরতার পাশাপাশি একটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাও অপরিহার্য। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরও উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
সংক্ষেপে
ইন্টারনেট সেবা পুনঃস্থাপনের সাথে সাথে গ্রাহক, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলির মধ্যে পুনরায় সক্রিয়তা ফিরে আসবে, যা দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও সামাজিক স্থিতিশীলতায় সহায়ক হবে। একইসঙ্গে, ফ্রি ৫ জিবি ইন্টারনেট প্রদানের মাধ্যমে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের আর্থিক ক্ষতি কিছুটা হলেও পূরণ করা হবে।
উপরের ধর্মনার সাথে আরও কিছু নির্দিষ্ট ডোমেইনে বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং অন্যান্য বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ এবং সমাধান নিয়ে পর্যালোচনা করলে এটি আরও বিস্তৃত কনটেন্ট হতে পারে। আপনার কাঙ্ক্ষিত দৈর্ঘ্য ও বিস্তারিত বিষয়ে আরও স্পষ্ট করার জন্য দয়া করে আরও নির্দেশনা প্রদান করুন।