প্রশ্ন : ৯। ২৫ মার্চের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দাও ।অথবা, ২৫ শে মার্চের গণহত্যা সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ । অপারেশন সার্চ লাইট বর্ণনা বা কালো রাতের বর্ণনা

২৫ মার্চের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিবরণ

উত্তর : ভূমিকা : বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে স্মরণীয় অধ্যায় হচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন। আর এ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় পাক হানাদার বাহিনীর দ্বারা সৃষ্ট বাংলার ইতিহাসে লিখিত কালরাত্রির মাধ্যমে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালিদের বিজয় এবং ছয় দফা প্রশ্নে মুজিবের অনড় অবস্থানের প্রেক্ষিতে পাকিস্তান শোষকগোষ্ঠী ২৫ মার্চ বাঙালিদের দমনের জন্য সেনাবাহিনী দ্বারা অতর্কিত আক্রমণের পরিকল্পনা করে এবং তা বাস্তবায়নের জন্য মনস্থির করে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের নৃশংস হত্যাকাণ্ড : ১৯৭১ সালের ১৫ মার্চ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত মুজিব- ইয়াহিয়া-ভুট্টোর বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে যেসব বিষয়ে সমঝোতা হয় তা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ২৫ মার্চ ঘোষণা দেওয়ার কথা ছিল। তাই ২৫ মার্চ সারা দিন পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।

সন্ধ্যায় কোনো রূপ ঘোষণা ছাড়াই ইয়াহিয়া ঢাকা ত্যাগ করেন। বিপদ আসন্ন বুঝতে পেরে বঙ্গবন্ধু নেতা-কর্মীদের ঢাকা ছাড়ার নির্দেশ দেন। তিনি ভেবে ছিলেন যে নেতা-কর্মীদের উপর পুলিশি অভিযান চালানো হবে; কিন্তু ঘুমন্ত নিরীহ জনগণের উপর পাক সেনাবাহিনী অতর্কিত আক্রমণ করবে তা তিনি কল্পনাও করেন নি।

আনুমানিক রাত ১১টার দিকে ঘুমন্ত ঢাকার উপর চড়াও হয় পাকবাহিনী। নিরস্ত্র, ঘুমন্ত মানুষের উপর পাকবাহিনী ট্যাঙ্ক, কামান, ভারী মেশিনগান ও অন্যান্য অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নির্বিচারের আক্রমণ চালায়। শুরু হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অপারেশন সার্চলাইট’।

তারা পিলখানা ই.পি.আর. ঘাটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রাবাস, তাঁতি বাজার, শাখারিপট্টি ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ একসাথে আক্রমণ করে। এরপর সারা ঢাকা শহরে পাকবাহিনী হত্যাযজ্ঞ চালায়। অগণিত নর-নারী, শিশু, বুদ্ধিজীবী হত্যার শিকার হয়। এসব কারণে এই রাত্রি বাঙালির জাতীয় ইতিহাসে কালরাত্রি হিসেবে পরিচিত।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রক্তপিপাসু পাক বাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞে শত শত নারী- পুরুষ, শিশু, ছাত্র এবং বুদ্ধিজীবী নিহত হয়। তাদের এই ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার জন্য পূর্ববাংলার সাহসী জনতা যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর ছিনিয়ে আনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ।

Share post:

Subscribe

Popular

More like this
Related

অ্যালোভেরা: প্রকৃতির সবুজ বিস্ময় ও তার অপর নাম

অ্যালোভেরা (Aloe Vera) — একটি নাম, একটি গাছ, এবং...

✅ অ্যালোভেরা ফুলের ব্যবহার:

ঔষধি গুণাগুণেঅ্যালোভেরা ফুলে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ থাকে।এটি...

🌿 অ্যালোভেরার অভ্যাস: প্রকৃতির নিরব চিকিৎসক

প্রকৃতি আমাদের জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে। গাছপালা,...

🌿 অ্যালোভেরা: প্রাকৃতিক উপহার ও তার বৈজ্ঞানিক পরিচয়

ভূমিকা:প্রকৃতি আমাদের জন্য এক অপার আশীর্বাদ। এই আশীর্বাদের মাঝে...