প্রশ্ন: ৭। ১১ দফা আন্দোলন বলতে কি বুঝ?অথবা, ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলন বলতে কি বুঝ?

১১ দফা আন্দোলন:

উত্তর : ভূমিকা : পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে ছাত্রদের ১১ দফা দাবির গুরুত্ব অপরিসীম। ক্ষমতার উচ্চাভিলাষী সামরিক শাসক আইয়ুব খানের শাসনামলের শোষণনীতি ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে যখন পূর্ববাংলার জনগণ সোচ্চার হয়ে উঠে তখন ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলন নতুন মাত্রা যোগ করে। মূলত ছাত্রদের ১১ দফাভিত্তিক আন্দোলন ছিল স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের শোষণনীতির বিরোধিতার বহিঃপ্রকাশ ।

ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলন :

সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ ১১ দফা দাবি পেশ করার পর তা বাস্তবায়নের জন্য তুমুল গণআন্দোলন গড়ে তোলে।

বিশেষ করে শেখ মুজিবুর রহমানকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার করা হলে যে রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি হয় তা পূরণের জন্য ছাত্রসমাজ ছয় দফার সাথে সাথে ১১ দফাভিত্তিক আন্দোলন গড়ে তোলে। ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করলে পুলিশ মিছিলে গুলি চালায়।

পুলিশের গুলিতে আসাদ নামে একজন মার্কসবাদী ছাত্রনেতা নিহত হন। তাৎক্ষণিকভাবে ছাত্ররা ২১, ২২ ও ২৩ জানুয়ারি ধর্মঘটের ডাক দেয় এবং ২৪ জানুয়ারি “মহাঅভ্যুত্থান দিবস” পালন করে। অভ্যুত্থান দিবসে ছাত্ররা ঘোষণা দেয় ১১ দফা দাবি বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত তারা বুকের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

ছাত্র আন্দোলন প্রশমনের জন্য ১৯৬৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সকল রাজবন্দিকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ।

ছাত্রসমাজ ১৪ ফেব্রুয়ারি গণতান্ত্রিক সংগ্রাম কমিটির মঞ্চ দখল করে নিলে সমবেত জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ১১ দফার প্রতি সমর্থন দান করে। তখন ১১ দফা আন্দোলন ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে কৃষক-শ্রমিকসহ সাধারণ জনতার আন্দোলনে পরিণত হয়।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ১৭নং আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হককে ১৯৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কারাগারে গুলি করে হত্যা করা হয় এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় শিক্ষক শামসুজ্জোহাকে ছাত্র বিক্ষোভ চলাকালে সেনাবাহিনী গুলি করে হত্যা করলে ছাত্র আন্দোলন অগ্নিশিখার ন্যায় প্রজ্বলিত হতে থাকে।

দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং স্কুলের ছাত্র-শিক্ষক রাজপথে নেমে আসে। ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনের তীব্রতায় স্বৈরাচারী আইয়ুব খান ইত্তিফাক পত্রিকার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেন এবং শেখ মুজিবুর রহমানসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সকল আসামিকে মুক্তি দেন। ছয় দফার পাশাপাশি ১১ দফার ভিত্তিতে আন্দোলন পরিচালনার জন্যই এটা ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলন নামে পরিচিত।

উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ছাত্রদের ১১ দফাভিত্তিক আন্দোলনের কারণেই পাকিস্তানের লৌহমানব খ্যাত সামরিক শাসক আইয়ুব খান ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। পরবর্তীকালে ১১ দফা আন্দোলন ছয় দফার সাথে যুক্ত হয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপ নেয় এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটায়।