সুশাসন পাঠের প্রয়োজনীয়তা বা সুশাসন আমরা কেন পাঠ করবো? (Necessity of Study of Governnce):

সুশাসন পাঠের প্রয়োজনীয়তা

সুশাসন জ্ঞানের একটি নতুন শাখা। আধুনিক শাসনব্যবস্থার জন্য সুশাসনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য ।

সুশাসনের মূল উদ্দেশ্য হলো রাষ্ট্রে আদর্শ ও জবাবদিহিমূলক শাসন প্রতিষ্ঠা করা। তাই একটি আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সুশাসন প্রয়োজন।

শুধু রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যও সুশাসন জরুরি। একটি কার্যকর ও দক্ষ শাসনব্যবস্থা
গড়ে তোলার জন্য সুশাসনের উপস্থিতি বাঞ্ছনীয়।

সুশাসনে শাসক ও শাসিতের সমন্বয়ে তথ্যভিত্তিক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার উপায় সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়।

সরকারের সাথে নাগরিকের সুসম্পর্ক স্থাপনের উপায়ও সুশাসনের মাধ্যমে জানা যায়। অর্থাৎ, সুশাসন সরকার ও নাগরিকের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করে।

আবার শাসকশ্রেণির দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার উপায়ও সুশাসন অধ্যয়নের মাধ্যমে অবহিত হওয়া যায়।

সুশাসন থাকলে নাগরিকগণ তাদের অভাব-অভিযোগগুলো সরকারের কাছে খুব সহজেই উপস্থাপন করতে পারে।

এর পাশাপাশি সুশাসন নাগরিকের অভাব-অভিযোগ সমাধানের উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

সুশাসন নাগরিকের উন্নত সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বদ্ধপরিকর। গণতন্ত্রের এ যুগে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে জনগণের অংশগ্রহণ অপরিহার্য।

সুশাসন জনগণকে বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে উৎসাহিত করে এবং অংশগ্রহণের উপায় সম্পর্কেও অবগত করে।

জনগণের বিপুল অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে সুশাসন গণতন্ত্রকে সফল করার প্রচেষ্টা চালায়।

সুশাসন অবাধ তথ্যপ্রবাহে বিশ্বাসী। তথ্যপ্রবাহের মাধ্যমে সুশাসন সরকারকে স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ করে।

সরকারের গোপনীয়তা ও দুর্নীতির বিলোপসাধনে সুশাসনের ভূমিকা অসামান্য।

তাই দুর্নীতিহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলতে সুশাসন সম্পর্কে অধ্যয়ন আবশ্যক ।
সুশাসন নাগরিকদের মধ্যে কোনো ধরনের বৈষম্য স্বীকার করে না।

সব নাগরিককে সমান মর্যাদাসম্পন্ন মনে করে তাদের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। রাষ্ট্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সুশাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ফলে রাষ্ট্রে সুষ্ঠু অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকে। তাছাড়া সুশাসন ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণেও সরকারকে উৎসাহিত করে।

সুশাসনের ফলে সরকারের শাসন ব্যয় হ্রাস পায় বলে কম খরচে সরকার বেশি সেবা প্রদান করতে পারে।

অর্থাৎ সুশাসনের জন্য সরকারের সেবা প্রদান করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
সুশাসন রাষ্ট্রে সাম্য প্রতিষ্ঠায় কাজ করে। এতে সব নাগরিক সমান সেবা ও সুযোগ পায়।
সুশাসন সুন্দর ও সুষ্ঠু আইনি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে, যা সবার জন্য সমান ও নিরপেক্ষভাবে প্রয়োগ করা হয়।

এছাড়াও সুশাসন মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করে এবং নাগরিকদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ করে দেয়।

সরকারের সমালোচনা করার পরিবেশ সৃষ্টি করে, যা সরকারকে স্বেচ্ছাচারী হতে দেয় না।

সুতরাং এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, রাষ্ট্রে সরকার ও নাগরিক কর্তৃক সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠা এবং জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতে সুশাসন অধ্যয়নের কোনো বিকল্প নেই।

তাই সমগ্র নাগরিকের, বিশেষ করে শাসনের সাথে সরাসরি জড়িত সবার সুশাসন অধ্যয়ন আবশ্যক।