সমাজবিজ্ঞান কাকে বলে? সমাজবিজ্ঞানের পরিধি কি কি?:

সমাজবিজ্ঞানের পরিধি
Scope of Sociology

সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা ও প্রকৃতি আলোচনা করতে গিয়ে আমরা যে বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছি তা হলে সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে সমাজের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞানভিত্তিক পাঠ।

সমাজবিজ্ঞানের মূল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে মানুষের পারস্পরি সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা। বাস্তবিক অর্থে সমাজবিজ্ঞানের উদ্দেশ্য হলো গোটা সমাজের নিখুঁত বিশ্লেষণ।

এ অর্থে আমরা পে সমাজকে সমাজবিজ্ঞানের পরিধি হিসেবে বিবেচনা করতে পারি। একটি প্রায়োগিক বিজ্ঞান এবং সমাজের বিজ্ঞান হিসে সমাজবিজ্ঞানের পরিধি কোথায় শুরু এবং কোথায় শেষ হয়েছে তা বলাও কষ্টসাধ্য।

অন্যান্য বিজ্ঞানের চে সমাজবিজ্ঞানের কর্মপদ্ধতি ব্যাপক ও বিস্তৃত। সমাজের বিভিন্ন দিক পঠন-পাঠন এবং গবেষণার জন্য সমাজবিজ্ঞানের যেস
শাখা-প্রশাখার উদ্ভব ঘটেছে তা নিচে আলোচনা করা হলো-

১.সমাজতাত্ত্বিক মতবাদ : সমাজবিজ্ঞান সমাজতাত্ত্বিক মতবাদ (Sociological Theory) সম্পর্কে আলোচনা করে।

এছাড়া সমাজবিজ্ঞান পদ, প্রত্যয়, নীতি এবং সাধারণীকরণ সম্পর্কে বিচার-বিশ্লেষণ করে। এটি তত্ত্ব গঠনের যৌক্তিক কৌশল এ পদ্ধতিগত ক্ষেত্রের ওপর আলোকপাত করে।

সমাজ কোন নিয়ম দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, সামাজিক পরিবর্তনের নেপথে কোন শক্তি কাজ করছে, সামাজিক সমস্যা প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে অগাস্ট কোঁৎ, কার্ল মার্কস, এমিল ডুর্খেইম, হার্বা স্পেন্সার, ম্যাক্সওয়েবার প্রমুখ সমাজবিজ্ঞানীদের দেওয়া তত্ত্ব এ শ্রেণির অন্তর্গত। সমাজকে বিশ্লেষণ করার জন্য সমাজবিজ্ঞানীদের প্রদত্ত মতবাদ সমাজবিজ্ঞানের পরিধিভুক্ত।

২.ঐতিহাসিক সমাজবিজ্ঞান :
সমাজবিজ্ঞান ইতিহাসভিত্তিক আলোচনা করে। অর্থাৎ ঐতিহাসিক সমাজবিজ্ঞান (Historical Sociology) প্রাচীন সমাজের উদ্ভব, বিকাশ ও জীবনযাত্রা সম্পর্কে গবেষণা করে এবং বর্তমান সম্পর্কে দিকনির্দেশনা প্রদান করে ।

সমাজের অতীত বিষয়াবলি যেমন নৃতত্ত্ব, প্রত্নতত্ত্ব, সমাজের প্রাচীন সভ্যতা প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে ঐতিহাসিক তত্ত্বের আলোকে প্রদত্ত তত্ত্বসমূহই ঐতিহাসিক সমাজতত্ত্ব।

বিবাহ ও পরিবারের সমাজতত্ত্ব : পরিবার হলো মানবসমাজের সবচেয়ে আদিম ও ক্ষুদ্রতম সংগঠন। সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো পরিবার।

তাই সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার মধ্যে পরিবারবিষয়ক সমাজবিজ্ঞান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

এখানে মানবসমাজে কীভাবে পরিবারের উৎপত্তি হয়েছে, কীভাবে এর বিকাশ ঘটেছে, সমাজে কোন কোন ধরনের পরিবার দেখা যায় এবং পরিবর্তনশীল পরিবারের কার্যাবলি ও সমস্যা নিয়ে সমাজবিজ্ঞান আলোচনা করে।

এছাড়াও পরিবারের ধরন, রীতিনীতি ও প্রথা, আচার-অনুষ্ঠান, ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রভৃতি পরিবার সমাজবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়।

পাশাপাশি পরিবার গঠিত হওয়ার মূল ভিত্তি বিবাহ নিয়েও সমাজবিজ্ঞানের এ শাখা পর্যালোচনা করে। আলোচনার এ পর্যায়ে স্থান, কাল, পাত্রভেদে বিবাহের ধরন, প্রকৃতি, আচার-অনুষ্ঠান, রীতিনীতি প্রভৃতি বিষয় প্রাধান্য পায়।

৩.সামাজিক জনবিজ্ঞান : সমাজবিজ্ঞান সামাজিক জনবিজ্ঞান (Social Demography) নিয়ে আলোচনা করে।

যেমন- জনসংখ্যাতত্ত্ব, জনসংখ্যার কাঠামো, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জনসংখ্যা বণ্টন এবং তার সামাজিক প্রভাব ইত্যাদি বিষয়ে পঠন- পাঠন ও গবেষণা করে।

সমাজ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান অর্জন করতে হলে জনবিজ্ঞান পাঠ আবশ্যক। সমাজের অন্যতম প্রধান উপাদান জনসংখ্যা আর এ জনসংখ্যা জনবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়।

৪.গ্রামীণ এবং নগর সমাজতত্ত্ব : বাংলাদেশের ৭৬% মানুষ গ্রামে বাস করে। গ্রামীণ সমাজের কৃষি, কৃষি কাঠামো, অর্থনীতি বিবাহ, পরিবার, জ্ঞাতি সম্পর্ক, নেতৃত্ব, ক্ষমতা কাঠামো, মর্যাদা, সমাজ কাঠামো, সামাজিক স্তরবিন্যাস,

শ্রেণিবৈষম ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সমাজবিজ্ঞান আলোচনা করে, এসব বিষয় আলোচনা করার জন্য সমাজবিজ্ঞানের নতুন এক শাখার উদ্ভব হয় আর তা হলো গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান।

সমাজবিজ্ঞান গ্রামীণ সমাজতত্ত্বের পাশাপাশি নগর সমাজতত্ত্ব আলোচনা করে। নগর সমাজের পরিবর্তনের ফলে মানুষ বন্যদশা থেকে সভ্য ও শিল্পায়িত সমাজে এসে পৌঁছেছে।

নগর সমাজবিজ্ঞানের মূল আলোচ্য বিষয় হলো- সমাজ, অর্থনীতি, নেতৃত্ব কাঠামো, ক্ষমতা কাঠামো, মর্যাদা ও স্তরবিন্যাস অর্থাৎ সমাজবিজ্ঞান গ্রামীণ ও নগর সমাজতত্ত্ব, গ্রামীণ সমাজ এবং নগর সমাজ সম্পর্কে অধ্যয়ন করে।

৫.ধর্মের সমাজতত্ত্ব : সমাজবিজ্ঞান ধর্মের সমাজতত্ত্ব (Sociology of Religion) নিয়ে আলোচনা করে। যেমন- ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, বিশ্বাস, ধর্মের সামাজিক গুরুত্ব ইত্যাদি সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞান আলোচনা করে।

জার্মান দার্শনিক ম্যাক্স ওয়েবার তার ‘The Protestant Ethics and Spirit of Capitalism’ গ্রন্থে পুঁজিবাদের বিকাশে ধর্মের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন।

এ ধর্মের ভিত্তিতে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ, জাতি ও গোষ্ঠীগত পার্থক্য এবং শ্রেণিবিভাজন, নিয়মনীতি, প্রথা ইত্যাদি সমাজে পরিলক্ষিত হয়।

ধর্মীয় রীতিনীতি, মূল্যবোধ, বিশ্বাস, ধর্মের উৎপত্তি ও বিকাশ, ধর্মের প্রকারভেদ, ধর্মের সমাজতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা ও বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা ইত্যাদি ধর্মের সমাজবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়।

৬.শিক্ষার সমাজতত্ত্ব : শিক্ষার সমাজবিজ্ঞান হলো সমাজবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। শিক্ষা প্রাচীন সমাজকে নিরক্ষরতার অন্ধকার থেকে মুক্ত করে বর্তমান আধুনিক সমাজের আলোকিত পথে ধাবিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

তাই সমাজবিজ্ঞানের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে এই শাখাটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব, শিক্ষার সাথে সামাজিক শ্রেণির সম্পর্ক, সমাজজীবনে শিক্ষার প্রভাব প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা করে ।

৭.রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব : রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের ঐতিহ্য অতি প্রাচীনকালের হলেও এর স্বতন্ত্র বিকাশ পরিলক্ষিত হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে।

রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান সামাজিক পটভূমি, উপযোগিতা, রাজনৈতিক আদর্শসমূহের উদ্ভব ও বিকাশ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি, রাজনৈতিক উন্নয়ন, রাজনৈতিক আদর্শ ও আন্দোলন, রাজনৈতিক পরিবর্তন, সরকার এবং রাষ্ট্রের গঠন ও কার্যাবলি নিয়ে আলোচনা করে।

এছাড়াও রাজতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ইত্যাদি বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান বিশদভাবে আলোচনা করে।

৮.আইনের সমাজতত্ত্ব : আইনের সমাজবিজ্ঞান হলো সমাজবিজ্ঞানের পরিধিভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ শাখা। আইনের সমাজতত্ত্ব (Sociology of Law) সমাজবদ্ধ মানুষের রীতিনীতি ও আইনগত বিষয়াদি পর্যালোচনা করে।

আইনের সমাজতত্ত্ব ‘সামাজিক নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া, সমাজবদ্ধ মানুষের সামাজিক, আইনগত অধিকার ও কর্তব্য, সমাজে আইনের প্রভাব, কার্যকারিতা ইত্যাদি বিষয়সমূহ পর্যালোচনা করে।

এছাড়াও সমাজের কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে এবং সমাজের অবস্থার প্রেক্ষাপটে কোন ধরনের আইনের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছে এবং কোন কোন আইন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা আইনের সমাজবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়।

৯.সমাজ-মনোবিজ্ঞান : সমাজবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো সমাজ-মনোবিজ্ঞান (Social Psychology)। সমাজবিজ্ঞানের এ শাখা মানুষের আচার-আচরণ নিয়ে আলোচনা করে।

তাই তাকে আচরণের বিজ্ঞানও বলা হয়। সমাজবিজ্ঞান সমাজের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির চরিত্র এবং ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে বিচার-বিশ্লেষণ করে। এটি ব্যক্তির সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করে।

প্রেষণা, ব্যক্তিত্ব, মনোভাব, গোষ্ঠী, নেতৃত্ব, সামাজিকীকরণ, প্রচারণা ইত্যাদি বিষয় সামাজিক মনোবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়। এছাড়াও ব্যক্তির সহজাত প্রবৃত্তি, ব্যক্তিত্ব শিক্ষণ, মনোভাব, আবেগ, অনুভূতি,

নেতৃত্ব, সামাজিকীকরণের বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের ভূমিকা, জনমত, জনসাধারণ, জনতা, সামাজিক গোষ্ঠী, দল ইত্যাদি বিষয় সামাজিক মনোবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় যা সমাজবিজ্ঞানের পরিধিভুক্ত।

অর্থাৎ সমাজবিজ্ঞান সামাজিক মনোবিজ্ঞান (Social Psychology) সম্পর্কে আলোচনা করে ।

১০.সাংস্কৃতিক সমাজতত্ত্ব : আমাদের জীবন প্রণালিই আমাদের সংস্কৃতি। মূলত মানুষের বেঁচে থাকা বা জীবনধারণের কৌশলগুলোর সমন্বয় হলো সংস্কৃতি।

সমাজবিজ্ঞানের একটি শাখা হলো সাংস্কৃতিক সমাজতত্ত্ব (Cultural Sociology)। সাংস্কৃতিক সমাজতত্ত্ব বস্তুগত এবং অবস্তুগত সংস্কৃতির উদ্ভব, ক্রমবিকাশ এবং সমাজজীবনে তার প্রভাব সম্পর্কে বিচার- বিশ্লেষণ করে।

সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষই একমাত্র সংস্কৃতিবান প্রাণী। আধুনিক সমাজব্যবস্থায় উন্নতির ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়।

এতে করে এক অঞ্চলের মানুষ অন্য অঞ্চলে আসার সুযোগ পায়। আর এ যোগাযোগের মাধ্যমেই এক অঞ্চলের সংস্কৃতি অন্য অঞ্চলের সংস্কৃতির সাথে পরিচয় ঘটে।

এর ফলশ্রুতিতে এক জাতির সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, ক্রিয়াকর্ম, রীতিনীতি ইত্যাদি অন্য জাতির ওপর প্রভাব ফেলে। সমাজবিজ্ঞানে সংস্কৃতির ধরন, প্রকৃতি, প্রকারভেদ ইত্যাদি বিষয় গুরুত্ব সহকারে সাংস্কৃতিক সমাজতত্ত্ব আলোচনা করে ।

১১.সামাজিক পরিসংখ্যান : সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো সামাজিক পরিসংখ্যান (Social Statistic বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ ও ফলাফলের জন্য সমাজবিজ্ঞানকে প্রতিনিয়ত পরিসংখ্যানের সাহায্য নিতে হয়।

সামাজিক পরিসংখ্যান সামাজিক প্রপঞ্চ বা ঘটনাসমূহের সংখ্যাতাত্ত্বিক বিচার-বিশ্লেষণ করার পন্থা ও কৌশল সম্পর্কে ব্যাখ্যা করে ।

মূলত সমাজবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান পর্যায়ভুক্ত হয়ে ওঠার পিছনে সামাজিক পরিসংখ্যানের ব্যাপক ভূমিকা বিদ্যমান।

১২. পরিবেশের সমাজবিজ্ঞান : সমাজবিজ্ঞানের একটি গতিশীল শাখা হিসেবে পরিবেশ সমাজবিজ্ঞান অতি সম্প্রতি সংযোগ নি হয়েছে। মানব সমাজের ওপর পরিবেশের যেমন ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে, তেমনি পরিবেশের সমাজে বসবাসকারী মানুষের প্রভাব রয়েছে।

কাজেই বলা যায়, পরিবেশের ওপর এ উভয়মুখী প্রভাবকে সমতায়ন। নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে সংকট সৃষ্টি হবে এবং পৃথিবী বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠবে।

তাই এসব বিষয়ে গবেষণা পর্যালোচনা করে এর কারণ ও প্রতিকার করাই পরিবেশ সমাজবিজ্ঞানের মুখ্য উদ্দেশ্য।

১৩.জেন্ডার উন্নয়ন : বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জেন্ডার উন্নয়ন (Gender Development) সমাজবিজ্ঞানের একটি অন্যতম গুরুত্বপ গবেষণা ক্ষেত্র।

বিভিন্ন সমাজ ও পরিবারে নারীর মর্যাদা, অবস্থান ও ভূমিকা সম্পর্কে এটি পঠন-পাঠন ও গবেষণা করে।

১৪.এ চিকিৎসা সমাজবিজ্ঞান : চিকিৎসা সমাজবিজ্ঞান (Medical Sociology) স্থান, কাল, পাত্রভেদে রোগের কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের ধ্যানধারণা এবং বিশ্বাস সম্পর্কে অনুসন্ধান চালায়।

সমাজজীবনে মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যায় চিকিৎসা সমাজবিজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অসুস্থ ব্যক্তির সামাজিক পটভূমি, প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার সফলতা ও ব্যর্থতা, অসুস্থ রোগীর সুস্থতা ও পরবর্তী পুনর্বাসন প্রক্রিয়া প্রভৃতি বিষয় নিয়ে চিকিৎসা সমাজবিজ্ঞান আলোচনা করে।

১৫. শিল্প সমাজবিজ্ঞান : সমাজবিজ্ঞানের জন্মই হয়েছে শিল্পনির্ভর আর্থসামাজিক পরিমণ্ডলে। তাই শিল্প সমাজবিজ্ঞান (Industrial Sociology) শিল্পায়নের সঙ্গে সমাজ কাঠামোর সম্পর্ক বিশ্লেষণের প্রয়াস পায়।

এটি শিল্প বিপ্লব, শিল্পায়ন সমস্যা, শিল্পায়িত সমাজের সমস্যাদি সম্পর্কে অনুসন্ধান চালিয়ে থাকে।

এটি শিল্পকারখানার কর্মরত বিভিন্ন পেশাজীবী শ্রেণির মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক এবং তাদের অধিকার ও স্বার্থ সম্পর্কে সমীক্ষা চালায়।

১৬.শিল্পকলার সমাজবিজ্ঞান : শিল্পকলা হচ্ছে সমাজের দর্পণ। শিল্পকলার মধ্যে ফুটে ওঠে সমাজজীবনের বিভিন্ন দিক এবং বিভিন্ন পেশাজীবী শ্রেণির জীবনের নানা খুঁটিনাটি বিষয়।

শিল্পকলার সমাজবিজ্ঞান (Sociology of Art) শিল্পকলার সঙ্গে সমাজ কাঠামোর সম্পর্ক বিশ্লেষণ করার প্রয়াস চালায়। বুলবন ওসমানের মতে, টিভি, সিরিয়াল, পত্রিকার সাহিত্য-পাত্তা ইত্যাদি সবই আজ শিল্পকলার অন্তর্ভুক্ত।

১৭.সাহিত্যের সমাজতত্ত্ব : সাহিত্যকে সমাজের দর্পণ বলে অভিহিত করা হয়। কেননা সাহিত্যের মাঝেই সমাজের প্রতিফলন ঘটে।

সাহিত্যের সমাজতত্ত্ব (Sociology of Literature) সমাজ ও তার কাঠামোকে জানার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

১৮. সমাজ চিন্তা : সমাজবিজ্ঞানে বিভিন্ন মনীষী সমাজ সম্পর্কিত চিন্তাচেতনা এবং সামাজিক ক্রিয়াকর্ম সম্পর্কে তাত্ত্বিক ও দার্শনিক ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন ।

আর এ তাত্ত্বিক ব্যাখ্যার জন্য সমাজবিজ্ঞানে তাদের অবদান নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে।

১৯. অপরাধ সমাজবিজ্ঞান : সমাজবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো অপরাধ সমাজবিজ্ঞান।

অপরাধবিজ্ঞান মূলত অপরাধের বিজ্ঞানভিত্তিক অধ্যয়ন। অপরাধ, অপরাধের ধরন, অপরাধের কারণ, অপরাধপ্রবণতা, দারিদ্র্য, কিশোর অপরাধ, ভদ্রবেশী অপরাধ, অপরাধ সংঘটনে পরিবেশের প্রভাব, অপরাধের তত্ত্ব, অপরাধের স্বরূপ, পতিতাবৃত্তি, সামাজিক স্থিতিশীলতা ভেঙে পড়া এবং

অপরাধ প্রতিরোধে পরিবার, সমাজ ও প্রশাসনের ভূমিকা ইত্যাদি বিষয় অপরাধ সমাজবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়।

উপরিউক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও সমাজবিজ্ঞানের আরও অনেক শাখা রয়েছে।

যার মধ্যে অন্যতম হলো- সামরিক সমাজতত্ত্ব (Military Sociology), সমর
সমাজতত্ত্ব (Sociology of War), লোক সমাজতত্ত্ব (Folk Sociology), গোষ্ঠী
সমাজতত্ত্ব (Sociology of a Group) ইত্যাদি।

এসব শাখাকে কেন্দ্র করে সমাজবিজ্ঞানের গতিশীল পাঠ আরও ত্বরান্বিত হচ্ছে। অতএব এ কারণেই ওইসব শাখা-প্রশাখার বিষয়বস্তুও সমাজবিজ্ঞানের পরিধির অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হয়।