মুজিবনগর সরকার সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর ।অথবা, মুজিবনগর সরকার সম্পর্কে টীকা লিখ :
উত্তর : ভূমিকা :
১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় সাড়ে সাত কোটি জনগণের এক অভূতপূর্ব কৃতিত্ব। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়।
মুজিবনগর সরকার আকারে বিশাল না হলেও অত্যন্ত সুসংগঠিত ছিল। মুজিবনগর সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল একটাই— দেশকে পাকিস্তানি কবলমুক্ত করে স্বাধীনতা অর্জন। তাছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ কেন- তা বহির্বিশ্বে প্রচার করা এবং এর প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টি ও সম্ভব হলে স্বীকৃতি আদায় করাও ছিল মুজিবনগর সরকারের অন্যতম লক্ষ্য।
মুজিবনগর সরকারের নামকরণ :
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জন্মলগ্ন ১০ এপ্রিল, ১৯৭১। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র (Proclamation of Independence) হলো আমাদের স্বাধীনতার সনদ।

এ ঘোষণায় সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে কোন কোন ক্ষমতার বলে এবং কোন পরিস্থিতিতে একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হলো, যে রাষ্ট্রের নামকরণ হলো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। যেহেতু এ সরকার মুজিবনগরে তার প্রধান দফতর স্থাপন করেছিল তাই এর ব্যাপক পরিচিতি হলো মুজিবনগর সরকাররূপে ।
মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ :
১০ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকার গঠিত হলেও মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে। মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার শপথ গ্রহণ করে। মুজিবনগর সরকারের শপথ পাঠ করান অধ্যাপক ইউসুফ আলী এমএনএ । শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলার প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। শেখ মুজিবুর রহমানের অবর্তমানে সৈয়দ নজরুল ইসলাম- অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস pdf :
মুজিবনগর সরকারের গঠন :
তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ১৯৭১-এর ২০ অক্টোবর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংগঠন এবং কার্যাবলির উপর একটি প্রতিবেদন পেশ করেন। সে প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, মুজিবনগর সরকারকে ১২টি মন্ত্রণালয়ে সংগঠিত করা হয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের বাইরে আরো ৫টি সংখা ছিল, যারা সরাসরি মন্ত্রিপরিষদের কর্তৃত্বাধীনে কাজ করতো।

স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে মুজিবনগর সরকারের প্রধান কার্যালয় কলকাতার থিয়েটার রোডে স্থাপন করা হয়।
মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ : মুজিবনগর সরকারের একটি বিশেষ প্রচেষ্টা ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধে দলমত-নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করা। এ কারণে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, কমরেড মণি সিং, প্রফেসর মোজাফফর আহমদ এবং শ্রী মনোরঞ্জন ধরকে নিয়ে সর্বদলীয় উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়।
উপসংহার :
পরিশেষে বলা যায়, বাংলার আপামর মানুষের দেশপ্রেম, ত্যাগ, মুক্তি কামনাকে সঠিক খাতে প্রবাহিত করে এবং দেশে ও বিদেশে সমর্থনের ব্যবস্থা করে মুজিবনগর সরকার যে অবিস্মরণীয় কীর্তি স্থাপন করেছিল, তা সমকালীন ইতিহাসের বিচারে অতুলনীয়। পাকিস্তান ও তার দোসরদের ব্যাপক অপপ্রচার সত্ত্বেও মুজিবনগর সরকারের প্রতি যে সহানুভূতি ও নৈতিক সমর্থন বিশ্বব্যাপী গড়ে উঠেছিল, তার প্রধানতম কারণ ছিল মুজিবনগর সরকারের স্বাধীন ও সার্বভৌম নীতিসমূহ এবং কার্যকলাপ ।
মুজিবনগর সরকার সম্পর্কে টীকা wiki
