বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য:
উপমহাদেশের একটি প্রাচীন জনপদের নাম বঙ্গ। মুসলমান আমল হতে বাংলা ভাষাভাষী ভুভাগ বঙ্গ বা বাংলা নামে পরিচিত হয়। তখন বাংলা বলতে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাকে বুঝানো হতো।
ঐতিহাসিক আবুল ফজল বলেন, চট্টগ্রাম হতে রাজমহল পর্যন্ত অঞ্চলের নাম বঙ্গ । সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ লক্ষ্মণাবতী, রাঢ়, বাংলা, প্রভৃতি অঞ্চলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক ঐক্য স্থাপন করেন এবং নিজে শাহ-ই-বাঙ্গালা ও সুলতান-ই-বাঙ্গলা উপাধি ধারণ করেন। এ সময় হতে সমগ্র বাংলা ভাষাভাষী ভূভাগ বাংলা নামে পরিচিত হয়।
বাংলার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য : নিমে বাংলার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. প্রাকৃতিক সীমান্ত ও প্রবেশ পথ : এ দেশের চারিদিক দিয়ে ছিল প্রাকৃতিক সীমান্ত । যেমন— পূর্বে ত্রিপুরা ও আসামের পর্বতমালা, উত্তরে হিমালয়ের অংশবিশেষ, পশ্চিমে-রাজমহল ঝাড়খণ্ডের জঙ্গল, বীরভূম মালভূমির পার্বত্য অঞ্চল এবং দক্ষিণ দিকে, বঙ্গোপসাগর এবং দুর্গম সুন্দরবন এলাকা। প্রাকতিক ধারার জন্য বিদেশিদের পক্ষে বাংলা আক্রমণ সহজসাধ্য ছিল না। তবে তিনটি দুর্গম গিরিপথ দিয়ে বাংলায় প্রবেশ করা যেত।
২. বাংলার নদ-নদী:
বাংলাদেশের অগণিত নদ-নদী এদেশের মানুষের জীবনযাত্রার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে ।
যমুনা, করতোয়া, মেঘনা প্রভাতি বাংলার বড় নদী এখানকার অর্থনেতিক কাঠামোর উপর বিস্তার করেছে। পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, করতোয়া , মেঘনা প্রভৃতি বাংলার বড় নদী। এসব নদীর তীরে গড়ে উঠেছে নতুন শহর-বন্দর। এসব বন্দর বিদেশিদের ব্যবসা ক্ষেত্রে পরিণত হয়।
৩.আবহাওয়া ও জলবায়ু :
কর্কটক্রান্তি রেখা এ দেশের উপর দিয়ে চলে গিয়েছে। এজন্য এখানকার আবহাওয়া মৃদু । এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং বায়ুমণ্ডল আর্দ্র জলীয় বাষ্পপূর্ণ থাকে।।
এখানে কালবৈশাখী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস মাঝে মাঝে ভীষণ প্রলয়ঙ্করী রূপ ধারণ করে। ভৌগােলিক অবস্থানের দরুন এখানে কালবৈশাখী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস মাঝে মাঝে ভাব
৪.দ্বীপ : নদীবাহিত পলিমাটি এবং অন্যান্য কারণে দেশের দক্ষিণ ও পূর্ব অঞ্চলে অসংখ্য ছোট ছোট দ্বীপ সৃষ্টি হয়েছে। বছরের অধিকাংশ সময়েই এসব দ্বীপাঞ্চল জোয়ারের পানিতে জলমগ্ন থাকে।
৫. বনভূমি : বাংলার ভূ-প্রকৃতিতে আর একটি বিষয় হচ্ছে বনভূমি। খুলনা, বরিশাল ও চব্বিশ পরগনার দক্ষিণাংশের এক বিস্তৃত এলাকা ঘন বনরাজির জন্য দুর্গম এলাকা হিসেবে পরিগণিত হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকতিক বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশের ইতিহাসের ধারাকে বহুলাংশে নিয়ন্ত্রীত করেছে। পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, করতোয়া, মেঘনা প্রভৃতি বাংলার বড় বড় নদী যুগে যুগে বহুবার তাদের গতিপথ পরিবর্তন করে নতুন নতুন খাতে প্রবাহিত হয়েছে। এর ফলে কালে কালে বহু সমৃদ্ধ নগর, বন্দর, রাজধানী ও রাজ্যপাট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে অথবা জনবসতিহীন অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। এভাবে বাংলার ইতিহাসে অনেক পুরনাে অধ্যায়ের সমাপ্তি ও নতুন অধ্যায়ের সংযোজন ঘটেছে।