Table of Contents
ব্র্যান্ডের গুরুত্ব
উত্তর ভূমিকা: পণ্য বাজারজাত করার পূর্বেই কোম্পানিকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় পণ্যের ব্র্যান্ড নাম রাখা হলে কোম্পানি কি ধরনের সুবিধা পেতে পারে এবং উল্লিখিত সুবিধা প্রাপ্তির জন্য কোম্পানি পণ্যের ব্র্যান্ড নাম রাখবে কি না। পণ্যের ব্র্যান্ড নাম ক্রেতাকে পণ্যের মান সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা ‘প্রদান করে। ক্রেতারা ব্র্যান্ড নাম দেখে পণ্য ক্রয় করতে পারে। ব্র্যান্ডকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে ক্রেতারা পণ্যের মান এবং মূল্য বিবেচনা করে থাকে। নিচে ব্র্যান্ডিং-এর সুবিধাগুলো আলোচনা করা হলো:
ব্র্যান্ডের সুবিধা

১. পৃথক মর্যাদা : পণ্যের ব্র্যান্ডগুলোর প্রত্যেকটিরই পার্থক্যকৃত বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। পণ্যটি একই প্রকৃতির হলেও প্রত্যেক ব্র্যান্ডের ভিন্ন মর্যাদা থাকে এবং ভোক্তাদের মনে ভিন্ন। প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে থাকে। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পণ্যের মান এবং মূল্য সম্পর্কে অবগত হয়। এভাবে উৎপাদনকারী বাজারে প্রচলিত অন্যান্য ব্র্যান্ড অপেক্ষা নিজ পণ্যের পার্থক্যকৃত বৈশিষ্ট্য নিয়ে বাজারে অবস্থান করে।
২. মান এবং ভ্যালু সম্পর্কে নিশ্চয়তা দান: ব্র্যান্ড নাম দ্বারা পণ্য পৃথক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন করা হলে ক্রেতারা পণ্যের মান, মানের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং সুনির্দিষ্ট ভ্যালু সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারে। সাধারণত ব্র্যান্ডের নাম দ্বারা পণ্যের মান, স্ট্যান্ডার্ড এবং ভ্যালু প্রকাশিত হয়। ব্র্যান্ডকৃত পণ্য সর্বদাই সঠিক মানসম্পন্ন ও ভ্যালুর হয়।

৩. ক্রেতাদের সময় এবং পরিশ্রম লাঘব: ব্র্যান্ডকৃত পণ্য ক্রয় করা হলে ক্রয় সময় এবং পরিশ্রম উভয়ই হ্রাস করা সম্ভব হয়। ব্র্যান্ডকৃত পণ্য সহজেই চিহ্নিত করা যায় এবং ক্রেতাদের ক্রয় সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করা যায়। বিশেষভাবে শিল্প পণ্য ক্রয়- বিক্রয়ের ব্র্যান্ড নাম অত্যন্ত কার্যকরী হয়।
৪. ব্যবসায়িক ও আইনগত সংরক্ষণ : ব্র্যান্ডকৃত পণ্যের মান, মূল্য, গুণাবলি ইত্যাদি সম্পর্কে নিশ্চয়তা থাকে বিধায় পণ্যের মধ্যে উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলোর অভাব থাকলে ক্রেতা সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ করতে পারে। এরূপ ক্ষেত্রে ক্রেতারা অসাধু ব্যবসায়িক প্রবণতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ব্যবসায়িক ও আইনগত সহায়তা পেতে পারে।
৫. বিশাল সম্পদ: ব্র্যান্ডকে গুরুত্বপূর্ণ অদৃশ্যমান সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়। কারণ প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড নাম সাধারণত অবিকল অথবা নকল করা যায় না। কোম্পানির অবস্থান বাজারে সুসংহত অথবা অসংগঠিত হলেও ব্র্যান্ড নামগুলো সাধারণত অধিকতর কার্যকর হয়। ফলে প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড নাম কোম্পানির বিশাল সম্পদ হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে।

৬. মধ্যস্থকারবারিদের উৎসাহ দান নির্দিষ্ট কোন ব্র্যান্ডের প্রতি ক্রেতাদের আনুগত্য সৃষ্টি হলে ঐ পণ্যের উৎপাদন এবং বণ্টন প্রণালির উপর উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পায়। তবে পণ্য বিক্রয়ের ঝামেলা হ্রাস এবং বিক্রয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় বলে মধ্যস্থ ব্যবসায়ীরা বিক্রয়ে আগ্রহবোধ করে।
৭. আইনগত প্রতিরক্ষা : প্রতিযোগীরা যাতে বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো নকল করতে না পারে সেজন্য ব্র্যান্ড নাম এবং ট্রেড মার্ক বিক্রেতাদেরকে আইনগত প্রতিরক্ষা প্রদান করে।
৮. অনুগত ক্রেতা সৃষ্টি: ব্র্যান্ডিং এর মাধ্যমে একদল অনুগত এবং লাভজনক ক্রেতা আকৃষ্ট করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। ব্র্যান্ডের প্রতি ক্রেতার আনুগত্য বিক্রেতাকে প্রতিযোগিতার হাত থেকে কিছুটা রক্ষা করে এবং বাজারজাতকরণ পরিকল্পনা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে থাকে।
৯. বাজার বিভাজনে সহায়ক ব্র্যান্ডিং বিক্রেতাকে বাজার বিভক্তিকরণে সহায়তা করে। ফৌজি ফ্লাওয়ার মিল দুই ব্র্যান্ডের আটা তথা “ফৌজি আটা’ এবং “অ্যাংকর আটা” বাজারজাত করে থাকে। যদিও উভয়ই একই ধরনের পণ্য, মানও একই, মূল্যও সমান তথাপি পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য এরূপ ব্র্যান্ডিং কৌশলের আশ্রয় নিয়ে থাকে।

১০. ইমেজ সৃষ্টি: কোন একটি ভাল ব্র্যান্ড করপোরেট ইমেজ সৃষ্টিতে সহায়তা করে। তাছাড়া কোম্পানির নাম, বিজ্ঞাপন কার্যক্রম ইত্যাদি তুলে ধরতে সহায়তা করে। যেমন- বাংলাদেশে Fuji Film একটি বহুল পরিচিত ব্র্যান্ড হওয়ায় ফুজি কোম্পানি কর্তৃক বাজারজাত ক্যামেরা ব্যাটারি, ভিডিও টেপ, অ্যালবাম ইত্যাদি পণ্যের বিক্রয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, একটি পণ্য তখনই জনপ্রিয়তা অর্জন করবে যদি কোম্পানির পণ্যের ব্র্যান্ড আকর্ষণীয় ও শ্রুতিমধুর হয়। তাই কোন কোম্পানিকে বাজারে টিকে থাকতে হলে দৃষ্টিগোচরও আকর্ষণীয় ব্র্যান্ড ব্যবহার করতে হবে।