১২.৪১৷৷ ঋণদানের সময় ব্যাংকের বিবেচ্য বিষয়। Considerable factor for issuing Bank Loan অথবা, ঋণদানের সময় ব্যাংকের অনুসরণীয় নীতি/সাবধানতামূলক ব্যবস্থা।

ঋণদানের সময় ব্যাংকের বিবেচ্য বিষয়

ব্যাংক জনগণের আমানত দ্বারা ব্যবসা করে থাকে। যদিও ব্যাংক জনগণের নিকট থেকে আমানত গ্রহণ করার সময় তেমন কোন বিচার-বিবেচনা করে না। কিন্তু সে যখন ঋণ প্রদান করে তখন তাকে নানা রকম বিচার-বিবেচনা করে ঋণ প্রদান করতে হয়।
কেননা ত্রুটিপূর্ণ ঋণদান নীতি ব্যাংকের বিপদ ডেকে আনতে পারে। ঋণ মঞ্জুরের সময় যে বিষয়গুলো ব্যাংক বিবেচনা করে থাকে ‘5C’ দ্বারা বুঝানো যেতে পারে।

যথা :
Character
চরিত্র

Capacity
ক্ষমতা

Collateral
জামানত

Contract
চুক্তি

Capital
মূলধন

উপরোক্ত ‘5C’ ছাড়াও আরো অন্য যেসব বিষয় ব্যাংক ঋণদানের সময় বিবেচনা করে থাকে নিম্নে তা আলোচনা করা হলো :

তারল্য নীতি (Liquidity policy) : ঋণদানকালে ব্যাংককে অবশ্যই তারল্য নীতি মেনে ঋণদান করতে হবে। অর্থাৎ চাহিবামাত্র আমানতকারীকে নগদ অর্থের দাবি পূরণ করা যায় এরূপ সম্পদ নগদ আকারে হাতে রেখে বাকি আমানত হতে তাকে ঋণ প্রদান করতে হবে। আবার ঋণের টাকা যাতে দীর্ঘকাল আবদ্ধ হয়ে না থাকে সেদিকেও লক্ষ্য রেখে ঋণ প্রদান করতে হয় । তাই ব্যাংক সহজে আদায়যোগ্য ও স্বল্পমেয়াদি ঋণ প্রদান করে থাকে।

৩. ঋণ গ্রহীতার চরিত্র (Charecter of borrower) : ব্যাংককে ঋণ প্রদানের সময় ঋণ গ্রহীতার চরিত্র বিবেচনা করতে হবে। এখানে ঋণ গ্রহীতার চরিত্র বলতে বুঝায়-

(ক) চরিত্র- নৈতিক চরিত্র, সততা, ব্যক্তিগত অভ্যাস।
(খ) মূলধন- আর্থিক সচ্ছলতা, ব্যবসায় সুনাম।
(গ) সামর্থ্য- ঋণ ব্যবহারের ক্ষমতা।

8.নিরাপত্তার নীতি (Safety Principle) : ঋণ প্রদানকালে ব্যাংকের অন্যতম প্রধান নীতি হলো ঋণের নিরাপত্তা অর্থাৎ প্রদত্ত ঋণের ফেরতের নিশ্চয়তা। তাই ব্যাংকে উপযুক্ত জামানতের বিপরীতে ঋণ প্রদান করতে হবে। যদি পরবর্তীতে ঋণ গ্রহীতা ঋণ প্রদানে ব্যর্থ বা অস্বীকার করে তাহলে ব্যাংক উক্ত জামানত বিক্রয় করে তার ঋণের টাকা আদায় করতে পারে।

ঋণের উদ্দেশ্য (Objectives of Loan): ঋণ গ্রহীতা প্রাপ্ত ঋণ কোন খাতে বিনিয়োগ করবে তা ব্যাংক পর্যালোচনা করবে। ব্যাংক সাধারণত উৎপাদনশীল ও সামাজিক কাম্য খাতে ঋণ প্রদানে অধিক আগ্রহ ও উৎসাহিত হয়। ঋণের পরিমাণ (Amount of Loan) : ব্যাংক সাধারণত একজন ব্যক্তিকে অধিক ঋণ প্রদান করে না। বরং একাধিক ব্যক্তিকে অল্প টাকা ঋণ দিয়ে থাকে। এতে ব্যাংকের ঝামেলা কম হয় আবার ঋণ ফেরতের নিশ্চয়তা থাকে।

৬.মুনাফা অর্জন (Profit Earning) : ব্যাংকের প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে মুনাফা অর্জন। তাই তাকে ঋণ প্রদানের সময় বিবেচনা করতে হয় যে, প্রদত্ত বা বিনিয়োগকৃত অর্থ হতে যথেষ্ট মুনাফা অর্জন হবে কি না। কেননা আমানতকারীকে আমানতের উপর সুদ প্রদান এবং বিনিয়োগকৃত অর্থের সুদ আদায়ের পার্থক্যই হলো ব্যাংকের মুনাফা। তাই ব্যাংকে অধিক হারে সুদ প্রদান করতে হয় ।

৭. বিকেন্দ্রীকরণ (Decentralization) : ব্যাংক ঋণ প্রদানের সময় বিকেন্দ্রীকরণ নীতি অনুসরণ করে থাকে। অর্থাৎ ব্যাংক
ঋণের বিনিয়োগ কোন একটি নির্দিষ্ট খাতে সীমাবদ্ধ হওয়া উচিত নয়। যাতে একটি খাতের ক্ষতি অন্য একটি খাত দ্বারা
পূরণ বা সর্বনিম্ন করা যায়।

৮. জামানতের প্রকৃতি (Nature of Security) : ব্যাংককে ঋণ প্রদানের সময় জামানতের প্রকৃতি বিবেচনা করতে হবে। ব্যাংককে উপযুক্ত জামানতের বিপরীতে ঋণ প্রদান করতে হবে। উপযুক্ত জামানতের বিপক্ষে ঋণ প্রদান করলে ঋণফেরতের সম্ভাবনা থাকে। তাই সহজে বিক্রয় করা যায় এরূপ জামানতের বিপরীতে ব্যাংককে ঋণ প্রদান করতে হবে।

৯. ঋণের মেয়াদ (Duration of loan) : ব্যাংককে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদান করা উচিত নয়। কেননা এতে ঝুঁকি বেশি হয় । তাই তাকে একই পরিমাণ অর্থ স্বল্পমেয়াদে বারবার ঋণ দেয়া উচিত। এতে মুনাফা বেশি হয় এবং ঝুঁকি কম থাকে।

১০. জামানতের দায়মুক্ততা (Liability free of security) : যে সমস্ত জামানতের বিপরীতে ঋণ প্রদান করা হয়ে থাকে, সে সমস্ত জামানতের দায়মুক্ততা সম্পর্কে ব্যাংককে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। কারণ অপরের নিকট দায়বদ্ধ সম্পত্তির বিপরীতে ঋণ মঞ্জুর করা ব্যাংকের উচিত হবে না।

১১. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি (Policy of Central Bank) : ঋণ মঞ্জুরের সময় ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণদান নীতি
অনুসরণ করতে হয়। কাজেই ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত খাতে ঋণ প্রদান করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক যেমন কৃষি ও শিল্প খাতকে অগ্রাধিকার দেয় তেমনি ব্যাংককেও ঋণ প্রদানের সময় এ দু’টি খাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

১২. জাতীয় স্বার্থ (National Interest) : সর্বোপরি ব্যাংককে ঋণ প্রদানের সময় জাতীয় স্বার্থকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে
হবে। জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী এমন কোন খাতে ঋণ দেয়া উচিত হবে না। তাই ব্যাংককে কৃষি, শিল্প তথা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ঋণ প্রদান করতে হবে।

ঋণদানের মাধ্যমেই মূলত ব্যাংকের অধিকাংশ আয় অর্জিত হয়। কিন্তু ঋণ প্রদানের সময় সতর্কতা অবলম্বন না করলে প্রতিষ্ঠানের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। কারণ ঋণ শুধু দিলেই হবে না বরং তা আদায়ের উপরেই ব্যাংকের সফলতা নির্ভর
করে।

সুতরাং ঋণ মঞ্জুরের সময় উপরোক্ত বিষয়াদি পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই ঋণ মঞ্জুর করতে হবে।

Share post:

Subscribe

Popular

More like this
Related