বাজারজাতকরণ কার্যাবলি :
ভূমিকা : বিভিন্ন লেখক বাজারজাতকরণ কার্যাবলীকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে দেখিয়েছেন। বিভিন্ন লেখক ৫ থেকে ১৫০টি বাজারজাতকরণ কাজের কথা উল্লেখ করেছেন।
নিম্নে বাজারজাতকরণের কার্যাবলি বর্ণনা করা হল ।
(ক) মালিকানা হস্তান্তর সংক্রান্ত কার্যাবলী :
১. ক্রয় : কী পণ্য ক্রয় করা হবে তা নির্ধারণ করা, পণ্যের উৎস অনুসন্ধান, মূল্য পরিশোধ, পণ্য পরীক্ষা করা, পণ্যের মালিকানা বিক্রেতার নিকট থেকে গ্রহণ করার সামগ্রিক প্রক্রিয়াকে ক্রয় বলে ।
২. বিক্রয় : বাজারজাতকরণের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কার্য হলো বিক্রয়। কারবার প্রতিষ্ঠান তার ক্রেতা বা ভোক্তার হাতে পৌঁছে দেবার জন্য যে কাজ সম্পাদন করে তাকেই বিক্রয় বলে।
৩. মান নির্ধারণ : ক্রেতা বা ভোক্তারা পণ্যের যে বিশেষ বৈশিষ্ট্য পছন্দ বা অপছন্দ করে সে অনুযায়ী বিভিন্ন পণ্যের একটি মান তালিকা প্রস্তুত করাকে মান নির্ধারণ বলে।
৪. শ্রেণীবদ্ধকরণ : পূর্বনির্ধারিত মান অনুযায়ী পণ্যকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করাকে শ্রেণীবদ্ধকরণ বা পর্যায়িতকরণ বলে।
৫. ঝুঁকি গ্রহণ : উৎপাদনকারীর নিকট থেকে পণ্য ভোগকারীর নিকট পৌঁছানো পর্যন্ত বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন প্রকার ঝুঁকি আসতে পারে। এসব ঝুঁকি মোকাবিলা করেই বাজারজাতকরণ কার্যাবলী সম্পাদন করতে হয় ।
(খ) বণ্টন কার্যাবলী :
১. পরিবহণ : পরিবহণ হচ্ছে পণ্য স্থানান্তর সংক্রান্ত বাজারজাতকরণ কাজ। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পণ্য নিয়ে যাওয়াই পরিবহণ। এটা বিভিন্নভাবে হয় যেমন- সড়কপথ, আকাশ পথ, নদীপথ, সমুদ্র পথ ইত্যাদি।
২. গুদামজাতকরণ: বাজারজাতকরণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল গুদামজাতকরণ। সঠিকভাবে পণ্য গুদামজাতকরণ করতে না পারলে পণ্যের ব্যবসায়িক সফলতা আনা যাবে না। অন্যদিকে এখানে পণ্য সংরক্ষণ করা যায়।
৩. মোড়কিকরণ : পণ্যের উপর আবরণ তৈরি করে পণ্যকে নিরাপদ করা, গুণগত মান রক্ষা করা, পণ্যকে ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা, বহনযোগ্য করা ইত্যাদি পণ্যের মোড়কিকরণ।
৪. ফরমায়েশ সংগ্রহ: এখানে বিক্রেতা ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে তার কাছ থেকে ফরমায়েশ সংগ্রহ করে সেই অনুযায়ী পণ্য প্রেরণের ব্যবস্থা করে।
৫. পৃথকীকরণ :ক্রেতার প্রয়োজন অনুযায়ী পণ্যকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে পৃথক করাকে পৃথকীকরণ বলে।
(গ) সহায়ক কার্যাবলী :
১. নীতি নির্ধারণ : সুষ্ঠুভাবে বাজারজাতকরণ কার্যাবলী নীতি নির্ধারণ করা
পরিচালনার জন্য নীতি নির্ধারণ করা
প্রয়োজন হয় । বাজারজাতকরণ সাধারণত নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারণ করে (i) মূল্য নীতি
(ii) পণ্য নীতি
(iii) বণ্টন নীতি
(iv) প্রথার নীতি।
২. অর্থসংস্থান : কোন প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড, পরিচালনার জন্য অর্থের প্রয়োজনীয়তা নির্ণয়, পরিমাণ নির্ণয়, উৎস চিহ্নিতকরণ এবং অর্থের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে ঐ প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জনের প্রক্রিয়াকে ব্যবসায় অর্থসংস্থান বলে।
৩. যন্ত্রপাতি সংগ্রহ: বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়াকে সচল রাখার জন্য সাজসরঞ্জাম অত্যাবশ্যক। ভারী যন্ত্রপাতি, খুচরা যন্ত্রাংশ, শ্রম সংক্ষেপে যন্ত্র, যানবাহন বা গাড়ি ইত্যাদি সংগ্ৰহ করা বাজারজাতকরণ কাজের অন্তর্ভুক্ত।
৪. তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ : প্রতিষ্ঠানের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য গৃহীত কার্যাবলির তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কি না তা তত্ত্বাবধান করা হয় এবং প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়।
৫. প্রসার: প্রসার হচ্ছে সংগঠনের বাজারজাত করণ মিশ্রণের উপাদান যা বাজারকে সংগঠন এবং পণ্য সম্পর্কে অবহিত, প্ররোচিত এবং স্মরণ করানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। বিজ্ঞাপন, ব্যক্তিক বিক্রয়, বিক্রয় প্রসারে জনসংযোগ কৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা হয়।
৬. বাজার তথা সংগ্রহকরণ : বাজারজাতকরণ কার্যাবলীর পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল তথ্য ‘সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও বণ্টন বাজার তথ্য কাজের অন্তর্ভুক্ত।
৭. বিক্রয়োত্তর সেবা : বর্তমানে বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদান বাজারজাতকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে গণ্য হচ্ছে। অনেক ক্রেতা এর মাধ্যমে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য তুলনা করছে। এছাড়াও গ্যারান্টি, বাসায় ডেলিভারি প্রভৃতির মাধ্যমে বাজারজাতকারী প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জন করতে চেষ্টা করেছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, উপরোক্ত বাজারজাতকরণ কার্যাবলীর প্রত্যেকটিই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ একটি পণ্যের বাজারজাতকরণ কার্যে নিয়োজিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এক বা একাধিক পর্যায়ে এসব কার্যাবলী সম্পাদন করে থাকে।