প্রশ্ন : ৬। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ সম্পর্কে আলোচনা কর ।অথবা, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ লিখ ।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ

উত্তর : ভূমিকা
বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাসে দীর্ঘপথ পরিক্রমায় ১৯৭০ সালের ৭ মার্চ একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়। লাখো মানুষ তাদের নেতার নিকট থেকে নির্দেশ গ্রহণের জন্য জমায়েত হয়।

উপস্থিত জনতার প্রায় সকলেই তার কাছ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা আশা করেছিল। শেখ মুজিব নির্দিষ্ট সময়ের কিছু পরে সভাস্থলে আসেন এবং ১৮ মিনিট বক্তব্য প্রদান করেন। ঢাকা বেতার থেকে তার এ ভাষণ সরাসরি সম্প্রচারিত হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ পর্যন্ত হতে পারে নি। ঢাকা বেতার অবশ্য ধারণকৃত ভাষণটি পরদিন প্রচার করেছিল।

ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ : রেসকোর্স ময়দানের রেসকোর্স ময়দানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের শুরুতেই শেখ মুজিব ঘোষণা করেন, “আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সবই জানেন এবং বুঝেন। আমরা আমাদের জীবন দিয়ে চেষ্টা করেছি।

কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুরে আমার ভায়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার পেতে চায়। কি অন্যায় করেছিলাম? নির্বাচনের পর বাংলাদেশের মানুষ সম্পূর্ণরূপে আমাকে ও আওয়ামী লীগকে ভোট দেন।

আমাদের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বসবে, আমরা সেখানে শাসনতন্ত্র তৈরি করবো এবং এদেশকে আমরা গড়ে তুলবো। এদেশের মানুষ অর্থনীতি, রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ দুঃখের সাথে বলতে হয় ২৩ বছরের করুণ ইতিহাস বাংলার অত্যাচারের, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস।

২৩ বৎসরের ইতিহাস মুমূর্ষু নর-নারীর আর্তনাদের ইতিহাস। বাংলার ইতিহাস এদেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস। কিন্তু ২৩ বছরের ইতিহাস বাংলার মানুষের মুমূর্ষু আর্তনাদের ইতিহাস, রক্তদানের করুণ ইতিহাস, নির্যাতিত মানুষের কান্নার ইতিহাস।”

শেখ মুজিব তার ভাষণে আরো বলেন, “১৯৫২ সালে রক্ত দিয়েছি। ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করেও আমরা গদিতে বসতে পারি নি। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান মার্শাল ল’ জারি করে ১০ বছর বর্যন্ত আমাদের গোলাম করে রেখেছে।

১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলনে ৭ জুনে আমার ছেলেদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ১৯৬৯ সালের আন্দোলনে আইয়ুব খানের পতন হওয়ার পরে যখন ইয়াহিয়া খান সাহেব সরকার নিলেন, তিনি বললেন দেশে শাসনতন্ত্র দেবেন- গণতন্ত্র দেবেন, আমরা মেনে নিলাম —-

শুধু তাই নয় উক্ত জনসভায় শেখ মুজিব ভুট্টোর প্রতি প্রেসিডেন্টের নিলজ্জ পক্ষপাতিত্বের কথাসহ উপস্থিত জনতার সামনে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তার ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা কি হবে এবং জনগণের কর্তব্য বা করণীয়ই বা কি হবে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করেন ।

তিনি প্রত্যেক গ্রামে, মহল্লায়, ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম কমিটি গড়ে তোলার জন্য অনুরোধ করেন।

জনসাধারণের অসুবিধা বিবেচনায় তিনি কয়েকটি জনগুরুত্বপূর্ণ ও সেবাখাতে অসহযোগ আন্দোলনের শিথিলতার কথাও ঘোষণা করেন। তিনি সবাইকে হাতে যা আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলেন।

বঙ্গবন্ধু সর্বশেষ বলেন, “মনে রাখবা রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব, তবু এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” তিনি জনগণকে তাদের আন্দোলন অব্যাহত এবং তার পাশাপাশি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য এক উদাত্ত আহ্বান জানান ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, ঐতিহাসিক দিক থেকে শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণ ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। দেশ যখন এক ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে চলছিল ঠিক তখনই জাতির উদ্দেশ্যে তার ভাষণ জনসাধারণকে সঠিক দিক-নির্দেশনা দিয়েছিল। তার ঘোষণা অনুযায়ী বাঙালি সেদিন থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে।

Share post:

Subscribe

Popular

More like this
Related

৫ জিবি ফ্রি ইন্টারনেট পাবেন সকল গ্রাহক কিভাবে নিবেন? 5 GB free internet all sim| How to take 5 GB internet free 2024...

৫ জিবি ফ্রি ইন্টারনেট পাবেন সকল গ্রাহক: কিভাবে নিবেন?বাংলাদেশের...

সপ্তম / ৭ম শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি গাইড pdf গাইড ডাউনলোড ২০২৫| Class 7 Art & Culture Guide 2025

ভূমিকা: ৭ম শ্রেণির শিল্প ও সংস্কৃতি গাইড PDF ডাউনলোড...