Table of Contents
পৃথকীকরণের উপায়
উত্তর : ভূমিকা : পৃথকীকরণ কৌশলের সাহায্যে প্রতিযোগীদের তুলনায় নিজেদের অর্পণ তথা পণ্য, সেবা ও অভিহজ্ঞতা একটু ভিন্নভাবে বাজরে উপস্থাপন করা হয়। বর্তমান বাজার চরম প্রতিযোগীতাপূর্ণ । এরূপ প্রতিযোগীতাপূর্ণ বাজারে সাফল্যজনকভাবে টিকে থাকার জন্য কোম্পানিগুলো নিজেদের পণ্য সামগ্রী অন্যান্যদের তুলনায় আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করে থাকে পৃথকীকরণরূপে অভিহিত করা হয়

পৃথকীকরণের উপায় :
প্রতিযোগীদের তুলনায় নিজেদের পণ্য সামগ্রী ক্রেতাদের নিকট বা বাজরে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনের জন্য কোম্পানিগুলো যেসব হাতিয়ার ব্যবহার করে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো :
(ক) পণ্য পৃথকীকরণ : বাজারে বিদ্যমান কোম্পানিগুলোর পৃথকীকরণের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হলো পণ্য। কোম্পানিগুলো প্রতিযোগীর পণ্যের তুলনায় নিজেদের পণ্যকে পৃথক বা ভিন্নভাবে উপস্থাপনের জন্য নিজস্ব পণ্যের গুণাগুণ, কার্যকারিতা, বৈশিষ্ট্য, ব্যবহারবিধি, সহজ সেবাগত যোগ্যতা, নড়াচড়া, স্থায়ীত্বতা, ডিজাইন ইত্যাদিতে ভিন্নতা জানার চেষ্টা করে। যেমন- আসবাবপত্র, গাড়ি, ফ্লাট, ইলেকট্রিক ও ইলেক্ট্রনিকসের পণ্য দ্রব্য পৃথকীকরণের মাধ্যমে উপস্থাপন করলে ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়া পাওয়া যায়।
(খ) সেবা পৃথকীকরণ : পণ্যের মতো সেবা পৃথকীকরণের মাধ্যমেও কোম্পানিগুলো প্রতিযোগীদের চেয়ে অনেক বেশি বাড়তি সুবিধা অর্জন করতে পারে অর্থাৎ পৃথকীকরণের হাতিয়ার বা উপাদান হিসেবে সেবাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন প্রতিযোগীর তুলনায় দ্রুত এবং ক্রেতার সুবিধাজনক স্থানে অতি যত্নসহকারে পণ্য পৌঁছে দেওয়া, পণ্যে কোনো রকম ত্রুটি দেখা দিলে গুরুত্বের সাথে তা মেরামত করা, পণ্য ক্রয় এবং ব্যবহার প্রসঙ্গে ক্রেতাদেরকে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান এবং বাকিতে বা কিস্তিতে ক্রয়ের সুবিধা ইত্যাদি প্রতিযোগীর তুলনায় অধিক সেবা প্রদান করলে ক্রেতারা সহজে আকৃষ্ট হয় ।

(গ) প্রণালি পৃথকীকরণ : কোম্পানিগুলোর প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জনের ক্ষেত্রে প্রণালি পৃথকীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার বা উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়। অধিকাংশ কোম্পানি বর্তমানে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য ক্রেতা বা ভোক্তাদের হাতের কাছে সবসময় পণ্য বা সেবা পৌঁছানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এ ক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করার পাশাপাশি নিজস্ব পরিবহণ ব্যবস্থার সাহায্য নিচ্ছে এবং নিজস্ব ব্যবস্থাপনার অধিক
সংখ্যক শোরুম স্থাপন করে ক্রেতাদেরকে সার্বক্ষণিক সেবা প্রদান দিচ্ছে। যেমন- ডাচবাংলা ব্যাংক ঢাকা শহরের প্রায় প্রতিটি মোড়ে মোড় ATM বুথ স্থাপনের মাধ্যমে গ্রাহকদেরকে সর্বাধিক পরিমাণ সেবা প্রদান করছে।

(ঘ) ব্যক্তি বা কর্মী পৃথকীকরণ : কর্মী পৃথকীকরণের • মাধ্যমেও কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জনের কৌশল অবলম্বন করে থাকে। প্রতিযোগীদের তুলনায় অনেক বেশি, স্মার্ট, দক্ষ, শিক্ষিত, মার্জিত রুচি, সৌজন্যবোধ, সুদর্শন,নির্ভরশীল ও দায়িত্বসম্পন্ন কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে ক্রেতাদেরকে সন্তুষ্ট রাখতে চায়। কারণ এসব কর্মকর্তা কর্মচারীরা অনেক বেশি সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাবের হয়ে থাকে।
(ঙ) ভাবমূর্তি পৃথকীকরণ : বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে ভাবমূর্তি বা ইমেজ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্রেতা বা ভোক্তারা বিখ্যাত কোম্পানিগুলোর পণ্য ব্যবহার করে ভাবমূর্তি বৃদ্ধির জন্য। তাছাড়া সর্বাধিক প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জনের জন্য কোম্পানিগুলো বিভিন্ন ধরনের সমাজকল্যাণ বা সমাজ সচেতনামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে। যেমন- আপনার শিশুকে টিকা খাওয়া, পরিবেশ রক্ষামূলক কর্মসূচি গ্রহণ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন এবং বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা ও অন্যান্য উৎসবের মাধ্যমে তাদের ভাবমূর্তি উন্নত ও বৃদ্ধির জন্য প্রচেষ্টা চালায়। পরিশেষে বলা যায় যে, চরম প্রতিযোগীতাপূর্ণ বাজারে প্রতিযোগীতা মোকাবিলা করে দীর্ঘ মেয়াদে বাজারে টিকে থাকার জন্য কোম্পানিগুলো উক্ত হাতিয়ারগুলির মধ্যে যে কোনো এক বা একাধিক হাতিয়ার ব্যবহার করে থাকে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, উপরোক্ত হাতিয়ারসমূহের মাধ্যমে কোম্পানি ভার অর্পণকে প্রতিযোগী থেকে পৃথক করে প্রতিয়োগিতামূলক সুবিধা অর্জনের চেষ্টা করে থাকে।