পাঠ-২.৮ গনতন্ত্রের গুনাবলি কি ?

গনতন্ত্রের গুনাবলি কি
Merits of Democracy:

বর্তমান বিশ্বে গণতন্ত্র সর্বোৎকৃষ্ট শাসনব্যবস্থা। গণতন্ত্রের অন্তর্নিহিত গুণাবলির জন্য বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের জয়ধ্বনি শোনা যায়।

এ শাসনব্যবস্থায় জনগণ সর্বাধিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকে বলে এটি অত্যধিক জনপ্রিয়।

নিচে গণতন্ত্রের গুণাবলি আলোচনা করা হলো-
১। রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে জনগণের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে।

ফলে সর্বোত্তম শাসন নিশ্চিত হয়। জনগণই তাদের ভালো- মন্দের প্রধান নির্ণায়ক ও নির্ধারক হওয়ায় তাদের সর্বোচ্চ কল্যাণ নিশ্চিত হয় ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা জনগণের অংশগ্রহণকে বিভিন্নভাবে উৎসাহ প্রদান ও নিশ্চিত করে থাকে।

২। গণতন্ত্র ব্যক্তিস্বাধীনতার ধারক : গণতন্ত্র নাগরিক স্বাধীনতাকে সংরক্ষণ করে ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথকে সুগম করে।

গণতন্ত্রে ধনী-দরিদ্র, ছোট-বড়, সাধারণ-অভিজাত সব মানুষ এক ও অভিন্ন। তাই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সবাই ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকারী হয়।

৩। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা : গণতন্ত্র আইনের শাসনকে সমুন্নত রাখে।

আইনের দৃষ্টিতে সব ব্যক্তি সমান এবং সমভাবে আইনের আশ্রয় লাভের সুযোগ গণতন্ত্রই নিশ্চিত করে।

গণতন্ত্র বিশ্বাস করে, কোনো ব্যক্তিকে বিনা কারণে শাস্তি দেওয়া যাবে না এবং বিনা বিচারে আটক রাখা যাবে না। আইনের চোখে সবাই সমান ।

৪। দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা শাসকগণের দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে।

গণতান্ত্রিক সরকার তাদের কৃতকর্মের জন্য জনগণের কাছে দায়ী থাকে। পরবর্তী নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্য সরকার জনগণের কাছে তার কাজের জবাবদিহি করে।

ফলে স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ হয়।

৫। মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ : নাগরিকদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ অপরিহার্য।

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা জনগণের এ মৌলিক অধিকার সংরক্ষণে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

এ শাসনব্যবস্থায় নাগরিকের মৌলিক অধিকারসমূহ সংবিধানে লিপিবদ্ধ থাকে বলে কারোরই এগুলো ক্ষুণ্ণ করার ক্ষমতা থাকে না।

তাছাড়া বিচার বিভাগ মৌলিক অধিকার রক্ষায় অভিভাবকের ভূমিকা পালন করে। তাই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার মাধ্যমে মৌলিক অধিকার সংরক্ষিত ও নিশ্চিত হয়।

৬। জনগণের সার্বভৌমত্ব : গণতন্ত্র শক্তিতে বা ক্ষমতায় বিশ্বাস করে না। ফলে গণতন্ত্রে চূড়ান্ত কর্তৃত্বের অবকাশ নেই।

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনগণই সব ক্ষমতার উৎস। জনগণের সম্মতির ভিত্তিতেই সরকার গঠিত ও পরিচালিত হয়।

জনমত উপেক্ষা করে রাষ্ট্রীয় শাসনক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়। এভাবে গণতন্ত্রের মাধ্যমে জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত।

৭। রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি : গণতন্ত্র জনগণকে রাজনৈতিক দিক থেকে শিক্ষিত এবং রাজনৈতিক অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তোলে।

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম, আইনসভার কার্যাবলি, সরকারের জবাবদিহিতা, বিরোধীদের সমালোচনা, নির্বাচনি কর্মকাণ্ড জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে ।

৮। বিপ্লবের আশঙ্কা কম : গণতন্ত্রে জনমতকে প্রাধান্য দিয়ে সরকার গঠিত হয়। আবার আইন প্রণয়ন ও শাসন পরিচালনার ক্ষেত্রেও জনসাধারণের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

ফলে জনসাধারণের মধ্যে এসব বিষয়ে অসন্তোষ কম থাকে।

এছাড়া প্রয়োজনীয়তা সাপেক্ষে গণতন্ত্রে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকারের পরিবর্তন করা যায়। তাই গণতন্ত্রে বিপ্লবের আশঙ্কা খুবই কম।

৯। দেশপ্রেম জাগায় : গণতন্ত্রে দেশপ্রেমের উন্মেষ ঘটে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনগণের দ্বারা সরকার নির্বাচিত ও পরিচালিত হয়।

ফলে জনগণ উপলব্ধি করে, সরকার তাদের দ্বারাই গঠিত এবং সরকারের কার্যাবলিতে তাদের অংশীদারিত্ব রয়েছে। আর এ অনুভূতি জনগণের মধ্যে দেশাত্মবোধ জাগ্রত করে ।

১০। সংখ্যালঘুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা : গণতন্ত্র সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন হলেও সংখ্যালঘুরা শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রে
সমালোচনা করার পূর্ণ সুযোগ পেয়ে থাকে।

ফলে সরকার ক্ষমতার অপব্যবহার করতে সাহস পায় না। এছাড়া সংখ্যালঘুরা নিজেদের স্বার্থরক্ষার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।

ফলে সংখ্যালঘুদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় ।