পাঠ-১.২ প্রাচীন সভ্যতা কি বা কাকে বলে?:

পাঠ-১.২ প্রাচীন সভ্যতা কি
Ancient Civilization:

সৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকে নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে মানবসভ্যতা আজ এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে।

আর এ কারণে মানবসভ্যতার বিকাশ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে ঘটেছে। আজ থেকে আনুমানিক প্রায় ১০ হাজার বছর পূর্বে শিকারি সমাজ থেকে কৃষিভিত্তিক সমাজের উদ্ভব ঘটে।

ছয় থেকে সাত হাজার বছর পূর্বে মানুষ নগরকেন্দ্রিক সভ্যতার সৃষ্টি করে।

কৃষিভিত্তিক সভ্য সমাজ গড়ে ওঠার ফলে কৃষিজীবী ও পশুপালন বা শিকারি এ দুই ভাগে মানবসমাজ বিভক্ত হয়ে পড়ে।

ফলে কৃষক ও পশুপালন সমাজের মানুষেরা বহুবিধ কর্মকৌশল আবিষ্কার করতে থাকে এবং মানুষ স্থায়িভাবে গ্রামে বসবাসও শুরু করে।

ধারণা করা হয় এসব মানুষই ৬০০০ থেকে ৪০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যে পশুটানা লাঙল, চাকাওয়ালা গাড়ি, পালসহ নৌকা, প্রাথমিক ধাতু শিল্প এবং প্রাথমিক ধরনের সৌরপঞ্জিকা আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়।

আর এসব আবিষ্কার একের পর এক ঘটেছিল পশ্চিম এশিয়া, ভূমধ্যসাগরের কোলঘেঁষে পূর্ব ইউরোপ এবং তৎসংলগ্ন উত্ত আফ্রিকায়।

যার ফলে পশ্চিম এশিয়ার মেসোপটেমিয়া, পূর্ব ইউরোপের নিম্ন বলকান অঞ্চল ও মিশরে প্রথম নগরকেন্দ্রিক সভ্যতার উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে।

আর মানবসভ্যতার বিকাশের এ ধারাকে ঐতিহাসিকগণ কয়েকটি যুগে বিভক্ত
করেছেন।

যেমন—

১।প্রস্তর যুগ : প্রস্তর যুগ বা পাথরের যুগ বলতে মানব ও তার সমাজের বিবর্তনের ধারায় একটা পর্যায়কে বোঝানো হয় যখন মানুষ পাথর দ্বারা হাতিয়ার তৈরি করত।

প্রস্তর যুগ দু’ভাগে বিভক্ত। একটি পুরোপলীয় বা প্রাচীন প্রস্তর যুগ এবং অন্যটি নব্যপ্রস্তর যুগ, নতুন পাথরের যুগ বা নবোপলীয় যুগ হিসেবে পরিচিত।

২।পুরোপলীয় যুগ : ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ ও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় যে, অগণিত বছর অতিক্রম করে সভ্যতা আজকে এ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

এ বিশাল সময়ে পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব ঘটেছিল এখন থেকে ২০ লক্ষ বছর পূর্বে।

এ সময়ের মানুষকে আদিম মানুষ বলা হয়। এ শ্রেণির মানুষ ফসল ফলাতে ও প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বানাতে জানত না ।

তাই জীবনধারণের জন্য তাদের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করতে হতো।

তারা প্রথমদিকে গাছের বাকল, ফলমূল, লতাপাতা এবং পরে পশুপাখির মাংস খেয়ে জীবনধারণ করত ।

এভাবে প্রথমে জীবিকার প্রয়োজনে মানুষ শিকার করতে শেখে এবং শিকারের প্রয়োজনেই তারা পাথর ঘষে অস্ত্র বানাতে শেখে ও পরবর্তীকালে আগুন জ্বালাতে শেখে।

আদি মানবের এ পর্যায়কে প্রাচীন পাথরের যুগ বা পুরোপলীয় যুগ বলা হয়।

৩। নবোপলীয় যুগ বা প্রাগৈতিহাসিক যুগ :

নব্য প্রস্তর যুগকে নবোপলীয় যুগ বলা হয়। পুরোপলীয় যুগে মানুষ জীবনধারণের জন্য শিকারের উদ্দেশ্যে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাযাবরের মতো ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে একপর্যায়ে কৃষির আবিষ্কার শেখে।

এ সময়কে নবোপলীয় যুগ হিসেবে গণ্য করা হয়। কৃষি আবিষ্কারের ফলে মানবসভ্যতায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে।

কৃষি উৎপাদনের প্রয়োজনে মানুষ দলবদ্ধ হতে শুরু করে এবং যেখানে পানযোগ্য পানির সহজলভ্যতা রয়েছে সেখানে বসবাস করতে থাকে।

ফলে তাদের যাযাবর জীবনের অবসান ঘটে এবং গ্রামের পত্তন ঘটতে থাকে। এ যুগে মানুষ পশু শিকার করতে গিয়ে আহত পশু ও পশু শাবককে পালনের দ্বারা পশুপালনের বিকাশ ঘটে।

এভাবে স্থায়ী ও মিলিতভাবে বসবাস, কৃষি উৎপাদন ও শিকার করতে গিয়ে নবোপলীয় যুগে সমাজের বিকাশ ঘটে।

নবোপলীয় যুগে সামাজিক সংগঠন বা সমাজব্যবস্থার যাত্রা শুরু হলেও এ সময় লিখন পদ্ধতির আবিষ্কার না হওয়ায় এ যুগের কোনো লিখিত তথ্য পাওয়া যায়।

না। তাই এ সময়কে ‘প্রাগৈতিহাসিক যুগ’ বলা হয়। আধুনিক ঐতিহাসিক ও গবেষকগণ এ যুগের সময়কাল ৫০,০০০
খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে ১০,০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ বলে মনে করেন ।

৪।সভ্যতার যুগ বা ঐতিহাসিক যুগ :
প্রাগৈতিহাসিক যুগের অবসানের মধ্য দিয়ে সভ্যতার যুগ বা ঐতিহাসিক যুগের সূচনা ঘটে।

মানবজীবনের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক চূড়ান্ত রূপ হলো সভ্যতা।

আরনল্ড টয়েনবির মতে, “মানব ইতিহাসের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন অঞ্চলে যে বিশেষ বিশেষ কৃষ্টির উদ্ভব ঘটেছিল তাকেই সভ্যতা বলা হয়।”

সভ্যতার যুগের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল- ‘লিপির আবিষ্কার’ এবং ‘নগর সভ্যতার সৃষ্টি।

কৃষি আবিষ্কারের ফলে মানুষ সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করতে থাকায় এ সময় গড়ে ওঠে গোত্র ও কৌমব্যবস্থা এবং মানুষ আয়ত্ত করে ধাতুর ব্যবহার।

এর ফলে মানুষের জীবনযাত্রা যেমন গতিশীল হয়, তেমনি সমাজব্যবস্থাও উন্নত হয়। ফলে গ্রাম সংস্কৃতির পত্তন ঘটে এবং নগরসভ্যতার যাত্রা শুরু হয়।

আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৫,০০০ অব্দ থেকে নগরসভ্যতার যাত্রা শুরু হয়েছিল।

কোন সভ্যতার সূচনা প্রথম হয়েছিল তা নিয়ে মতভেদ থাকলেও একটি বিষয় নিশ্চিত যে প্রায় কাছাকাছি সময়ে নদীকে কেন্দ্র করে মিশরীয়, মেসোপটেমীয়, সিন্ধু, চৈনিক প্রভৃতি সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল।

সভ্যতা বিকাশের এ সময়ে যুক্ত হয়েছিল ফিনিশীয়, হিব্রু, গ্রিক, রোমান ও পারসিক সভ্যতার মতো অন্যান্য সভ্যতা।