ধর্ম কি বা ধর্মের ধারণা

ধর্মের ধারণা

Concept of Religion

ধর্ম একটি মৌল ও সার্বজনীন সামাজিক প্রতিষ্ঠান। ধর্মের অস্তিত্ব নেই অথবা ছিল না এমন কোনো মানবসমাজের কথা।

সমাজবিজ্ঞানী বা নৃবিজ্ঞানীদের জানা নেই। ধর্ম মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনে এক
বিশেষ স্থান দখল করে আছে।

ধর্মের ইংরেজি প্রতিশব্দ Religion. এটি Religere শব্দ থেকে উৎপত্তি হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে বন্ধন।

বাংলা ‘ধর্ম’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে সংস্কৃত ‘ধৃ’ ধাতু থেকে। ধৃ ধাতু + মন প্রত্যয় = ধর্ম; যার অর্থ হচ্ছে ধারণ করা যা ধারণ করে মানুষ সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও পবিত্র জীবনযাপন করতে পারে তাকেই বলে ধর্ম।

সুতরাং ধর্ম বলতে আমরা এক বিশেষ শক্তিকে বুঝি, যা মানুষের সমগ্র জীবনকে ধারণ করে এবং পরিচালনা করে ।

নৃবিজ্ঞানী টেইলর (Tylor) বলেন, “Belief in spiritual beings.” (ধর্ম হলো আত্মিক জীবে বিশ্বাস।

সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুর্খেইম (Emile Durkheim) বলেন, “ধর্ম হলো পবিত্র জগৎ সম্পর্কে বিশ্বাস ও তৎসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানাদি ।”

মনীষী ফ্রেজার (Frazar) বলেন, “ধর্ম হলো মানুষের চেয়ে উচ্চতর এমন একটি শক্তিতে বিশ্বাস? যা মানবজীবন ও প্রকৃতির ধারাকে নিয়ন্ত্রণ করে ।”

তার মতে, ধর্মের মূল উপাদান ২টি। যথা- ক. মানুষের চেয়ে উচ্চতর শক্তিতে বিশ্বাস এবং খ. শক্তির আরাধনা ।

নৃবিজ্ঞানী র্যাগলান (Raglan) বলেন, “অতিপ্রাকৃতকে কেন্দ্র করে যেসব বিশ্বাস এবং ক্রিয়াকর্মের উদ্ভব হয়েছে, সেসব কিছুর সমষ্টিই হলো মানুষের ধর্ম।”

কার্ল মার্কস বলেছেন, ‘Religion is opium of the people’. তিনি মনে করেন যে, ধর্ম জনগণকে তন্দ্রাবিষ্ট করে রাখে। ধর্ম মানুষেরই সৃষ্টি; বস্তুত সমাজ ও রাষ্ট্রই ধর্মকে সৃষ্টি করে। কারণ তা মানবমনের একটি বিশেষ প্রক্রিয়া।

হার্বার্ট স্পেন্সার (Herbert Spencer) এর মতে, “ধর্ম হলো একটি আনুমানিক ধারণা, যা এ বিশ্বজগৎকে বোধগম্য করে
তোলে।”

অগবার্ন ও নিমকফ (Ogburn & Nimkoff) তাদের ‘A Handbook of Sociology’ গ্রন্থে বলেছেন “ধর্ম হচ্ছে অতিমানবীয় শক্তির প্রতি মনোভাব ।

অধ্যাপক ম্যাকাইভারের মতে, ধর্ম কেবল মানুষের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি করে তা নয়, ধর্ম মানুষ ও অন্য কোনো উর্ধ্বশক্তির মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি করে ।

দার্শনিক ম্যাকেঞ্জির ভাষায়, এক সর্বোচ্চ ও সর্বাধিক মূল্যবান সত্তার প্রতি অব্যাহত ভক্তিময় অনুরাগ হলো ধর্ম।

ধর্মের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Religion) : ব্রিটিশ ধর্মতাত্ত্বিক লুইসের (Cliver staples Lewis )-এর মতে, বিশ্বাস, অনুষ্ঠান ও অভিজ্ঞতা একযোগে ধর্মের তিনটি ভিত্তিমূলের মতো।

ধর্ম আমাদের মানসিক ও সামাজিক সমস্যার
সমাধান করে। নিচে ধর্মের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো-

ধর্ম হলো অদৃশ্য এক পরম সত্তায় বিশ্বাস, যিনি সত্য, সুন্দর ও পবিত্রতার প্রতীক।
ধর্ম হলো অতিপ্রাকৃত শক্তিতে বিশ্বাস ।
ধর্মবোধ মানুষের আত্মাকে বিশুদ্ধ করে।