১.১ কমিউনিকেশন সিস্টেমের ধারণা (Concept of Communication System):
স্কুল থেকে সুজন খুবই উত্তেজিত হয়ে ফিরে আসে। বন্ধুদের কাছে সে শুনেছে আজ রাতে আকাশে সবুজ চাঁদ দেখা যাবে। বাসায় ফিরে সে সবাইকে খবরটি জানাল।
সুজনের মা-বাবা ও বোন খবরটি শুনে সুজনের মতোই উত্তেজিত হয়, কিন্তু সুজনের বড় ভাই এইচএসসি পরীক্ষার্থী রায়হান সুজনকে বলে, “দুর বোকা, চাঁদ কখনো সবুজ হয়।”
সুজন জোর দিয়ে বলে সে খুব ভালোভাবে বিষয়টি শুনেছে। তার | অন্যান্য কয়েক বন্ধুর বাবা-মাও নাকি বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
রায়হান তবু বিশ্বাস করে না এবং সুজনকে বলে, “এ রকম কিছু হতেই পারে না।” রায়হান বিষয়টি প্রমাণের জন্য তার কম্পিউটারে ইন্টারনেটের মাধ্যমে নাসা’র ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে।
সে অবাক হয়ে দেখে নাসা তার ওয়েবসাইটে সবুজ চাঁদ দেখা যাবে বলে ইন্টারনেটের বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইটে যে খবর প্রকাশ করেছে তাকে গুজব বলে আখ্যা দিয়েছে।
সুজনও ততক্ষণে কম্পিউটারের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। নাসা তার ওয়েবসাইটে সবুজ চাঁদ কেন দেখা যাবে না তার ব্যাখ্যাও দিয়েছে।
সুন্দর করে বিভিন্ন ছবি আর ভিডিও এর মাধ্যমে তাদের ওয়েবসাইটে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছে তারা।
রায়হান সুজনকে বলতে যায়, “দেখেছিস আমি বলেছিলাম না, সবুজ চাঁদ বলে কিছু হয় না………. কিন্তু ততক্ষণে সুজন ঘর থেকে চলে গেছে।
| রায়হান শুনতে পায় সুজন টেলিফোনে তার বন্ধুকে জানাচ্ছে যে, সবুজ চাঁদ দেখা যাবার খবরটি ঠিক না।
উপরের রূপকল্পটি তোমরা বুঝতে পেরেছ কি? এটি আসলে নানা ধরনের কমিউনিকেশন সিস্টেমের একটি উদাহরণ মাত্র।
মানুষ যখন তার নানা প্রয়োজনে (ভাব বিনিময় বা তথ্য শেয়ার প্রভৃতি) একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করে তখন যোগাযোগের এই পূর্ণাঙ্গ প্রক্রিয়াটিকে কমিউনিকেশন সিস্টেম বলা হয় ।
অর্থাৎ, এক পক্ষ হতে অন্য পক্ষে কোনো মাধ্যম দ্বারা তথ্য প্রবাহের প্রক্রিয়াকে কমিউনিকেশন বা যোগাযোগ বলা হয়। কমিউনিকেশন হলো মেসেজ প্রেরণ ও গ্রহণের ক্ষমতা।
যে ব্যক্তি নিজের চিন্তাভাবনা ও আইডিয়াগুলোকে অন্যদের সাথে শেয়ার করার জন্য তাদের কাছে তথ্যকে পাঠিয়ে দিলেন তিনি হলেন সেন্ডার বা প্রেরণকারী (প্রথম পক্ষ)।
যে ব্যক্তি প্রেরণকারীর কাছ থেকে তথ্যটি গ্রহণ করলেন, সে অনুযায়ী সাড়া দিলেন ও ফিডব্যাক পাঠালেন তাকে রিসিভার বা গ্রহণকারী (দ্বিতীয় পক্ষ) বলা হয়।
উপরের রূপকল্পে সুজন স্কুল থেকে ফিরে তার উত্তেজনার কারণ বাবা, মা, বোন এবং বড় ভাইয়ের কাছে প্রকাশ করেছে।
অর্থাৎ সুজন একটি মেসেজ প্রদান করে তার মনের ভাব এদের সবার সাথে শেয়ার করেছে।
সুতরাং, সুজন এখানে প্রথম পক্ষ। অন্যদিকে সুজনের মা, বাবা এবং বোন সুজনের কথায় উত্তেজনা প্রকাশ করেছে এবং সুজনের বড় ভাই রায়হান তার কথার প্রতিবাদ করেছে ।
এক্ষেত্রে তারা সবাই সুজনের প্রেরিত মেসেজে সাড়া প্রদান করায় সকলেই পৃথক পৃথকভাবে ২য় পক্ষ।
অন্যদিকে আবার রায়হান সুজনের মেসেজের সাথে দ্বিমত পোষণ করে তার নিজের মতামত ব্যক্ত করেছে।
রায়হান যখন নিজের মতামত প্রকাশ করেছে তখন সুজন আবার তার কথার প্রতিবাদ করেছে।
এক্ষেত্রে রায়হান হচ্ছে প্রথম পক্ষ এবং সুজন ২য় পক্ষ। এটিই একটি পূর্ণাঙ্গ কমিউনিকেশন সিস্টেমের ধারণা বা উদাহরণ।
কমিউনিকেশন বা যোগাযোগের প্রক্রিয়ায় বক্তা যা বলেছে হুবহু সে তথ্যটিকে অবশ্যই গ্রহণকারীর কাছে পৌঁছাতে হয়।
গ্রহণকারী যদি বক্তার প্রতি কোনো ধরনের ফিডব্যাক দিতে ব্যর্থ হয়, তবে সে কমিউনিকেশন বা যোগাযোগকে অকার্যকর ও অসম্পূর্ণ বলে গণ্য করা হয়
যেমন উপরের রূপকল্পে রায়হান ইন্টারনেটের নানা তথ্য দেখিয়ে সুজনকে যখন মেসেজ দিল যে, তার খবরটি সঠিক নয় ততক্ষণে সুজন কিন্তু ঘর থেকে চলে গেছে।
অর্থাৎ, রায়হানের এই সুনির্দিষ্ট মেসেজটি সুজনের কাছে পৌঁছায়নি।
অর্থাৎ কমিউনিকেশনের এই অংশটি ব্যর্থ বা অকার্যকর বলে গণ্য হবে।
একটি কমিউনিকেশন সিস্টেমে সাধারণত তিনটি অংশ পাওয়া যায়।
এগুলো হলো: ছি প্রেরণকারী বা সেন্ডার (Sender)
গ্রহণকারী বা রিসিভার (Receiver) গ. মাধ্যম (Media)
উপরের আলোচনায় প্রেরণকারী এবং গ্রহণকারী সম্পর্কে আমরা জেনেছি।
কমিউনিকেশন সিস্টেমের ৩য় অংশ অ
মাধ্যম হলো এমন একটি দৃশ্যমান বা অদৃশ্যমান বহনকারী যা বক্তার মেসেজটি বহন করে নিয়ে গিয়ে প্রেরকের
প্রদান করে ।
মাধ্যম ব্যতীত কোনো ধরনের কমিউনিকেশন সিস্টেম সম্ভব নয়।
বিভিন্ন ধরনের কমিউনিকেশন সিস্টেম (Different types of Communication System) যোগাযোগের ধরন অনুযায়ী কমিউনিকেশন বিভিন্ন প্রকার হতে পারে।
যেমন- ক. বায়োলজিক্যাল কমিউনিকেশন বা জৈবিক যোগাযোগ :
সকল প্রকার কমিউনিকেশন যেখানে শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন— মস্তিষ্ক, স্বরযন্ত্র, কান, বাহু, হাত ইত্যাদি ব্যবহার করে মেসেজসমূহকে সঞ্চালন ও গ্রহণ করা হয়।
উপরের রূপকল্পে সুজন এবং তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভাব বিনিময়ের সকল অংশই হলো বায়োলজিক্যাল কমিউনিকেশনের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
খ. গ্রাফিক কমিউনিকেশন : সকল ধরনের কমিউনিকেশন যেখানে লিপি, চিহ্ন বা ছবির মাধ্যমে মেসেজসমূহকে ভিজ্যুয়ালি প্রেরণ ও গ্রহণ করা হয়।
হাতে লেখা ডাক বিভাগের মাধ্যমে প্রেরিত চিঠি এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ ।
সভ্যতার প্রথমভাগে এটি যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হলেও বর্তমানে আধুনিক পৃথিবীতে এটি প্রায় ইতিহাসে পরিণত হয়েছে।
অবশ্য পৃথিবীর অনেক অনুন্নত এলাকায় এখনও যোগাযোগ বা কমিউনিকেশনের প্রধান মাধ্যম এটি
গ. টেলি-কমিউনিকেশন : দূরবর্তী স্থানে যন্ত্র বা ডিভাইসনির্ভর যোগাযোগের পদ্ধতি। যেমন- টেলিফোন, মোবাইল ফোন, টেলিভিশন, রেডিও ইত্যাদি।
যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে কমিউনিকেশন সিস্টেম বলতে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাকেই বোঝানো হয়।
ডিভাইসসমূহের মধ্যে কমিউনিকেশন বা যোগাযোগের এই স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাকে বলা হয় ডেটা কমিউনিকেশন।
১.২ ডেটা কমিউনিকেশ
বর্তমানে টেলিকমিউনিকেশন্স সিস্টেমের এতটা আধুনিকায়ন ঘরে আধুনিক টেলিকমিউনিকেশন্স এর ধারণা যে, তা তথ্য প্রযুক্তির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে।
শুরুর টেলিফোনই একমাত্র টেলিযোগাযোগ যন্ত্র থাকলেও পরবর্তীর তারবিহীন বার্তা প্রেরণ বা বেতার টেলিযোগাযোগ আবিষ্কার হয়েছে যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ রেডিও।
বর্তমানে ইলেকট্রনিক ট্রান্সমিটার ব্যবহার করে তড়িৎ চুম্বক তরঙ্গের সাহায্যে যোগাযোগ প্রক্রিয়া এক অত্যাধুনিক পর্যায়ে পৌঁছেছে যা আধুনিক টেলিকমিউনিকেশন্স নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিত ও বিস্তৃত।
টেলিকমিউনিকেশনে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রকে পরস্পরে পাবলিক টেলিফোন নেটওয়ার্ক, রেডিও নেটওয়ার্ক, কম্পিউটার সাথে সংযুক্ত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্ক রয়েছে।
যেমন- কম্পিউটারের সাথে আরেকটি কম্পিউটারের সংযোগ স্থাপনও একপ্রকার নেটওয়ার্ক এবং টেলিভিশন নেটওয়ার্ক। ইন্টারনেটের মাধ্যমে একটি টেলিযোগাযোগ।
টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার মূল তিনটি অংশ রয়েছে। এগুলো হলো-
ট্রান্সমিটার বা প্রচারযন্ত্র : এটি বার্তাকে প্রচার উপযোগী সংকেতে পরিণত করে ।
ট্রান্সমিশন মিডিয়া বা প্রচার মাধ্যম ৪ এর মধ্য দিয়ে সংকেত বা সিগন্যাল পাঠানো হয়।
যেমন— ৰায়ু ।
রিসিভার বা গ্রাহকযন্ত্র : এটি সংকেত গ্রহণ করে এবং সংকেতকে ব্যবহারযোগ্য বার্তায় পরিবর্তন করে।
উদাহরণস্বরূপ বেতার সম্প্রচারের কথা বলা যায়। এক্ষেত্রে, সম্প্রচার টাওয়ারটি হলো ট্রান্সমিটার, রেডিও হলো রিসিভার এবং প্রচার মাধ্যম এগুলোকে বলা হয় ট্রান্সিভার।
যেমন- মোবাইল ফোন একটি হলো বায়ু। অনেক ক্ষেত্রেই টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা দ্বিমুখী যোগাযোগ রক্ষা করে এবং একই যন্ত্র ট্রান্সমিটার ও রিসিভার হিসেবে কাজ করে ট্রান্সিভার।
ফোনের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগকে বলা হয় পয়েন্ট-টু পয়েন্ট যোগাযোগ। কারণ এক্ষেত্রে একটিমাত্র ট্রান্সমিটার ও রিসিভারের মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হচ্ছে।
তারবিহীন তথা বেতার সম্প্রচারের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগকে বলা হয় ব্রডকাস্ট (সম্প্রচার)।