চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী

[] পাঠ-৬.২ : চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী
Pressure Group

চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী কোনো রাজনৈতিক দল নয়। এদের কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে না।

এরা সরকারি নীতি প্রভাবিত করে নিজেদের স্বার্থ যথাযথভাবে প্রতিফলিত করতে সর্বদা সচেষ্ট থাকে।

চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ, আধুনিকীকরণ, স্বার্থের সংহতিসাধন ও ঐক্যবদ্ধকরণ, সরকারের নীতিনির্ধারণ এবং সিদ্ধান্তের উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে।

গোষ্ঠীকেন্দ্রিক দৃষ্টিকোণের অন্যতম প্রবক্তা বারট্রাম ল্যাথামের মতে, “সমাজ হলো একটি গোষ্ঠী জগৎ।

সমাজে গোষ্ঠীসমূহ একত্রিত হয়, ভেঙে যায়, বিরামহীন অবস্থায় ক্ষমতার জোট গঠন করে এবং একত্রে অবস্থান করে।

গোষ্ঠীর বিরোধ প্রতিরোধের মাধ্যমে সমাজের গতি অব্যাহত থাকে। প
চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর আলোচনার পূর্বে গোষ্ঠী বলতে কী বোঝায় তা আলোচনা করা প্রয়োজন।

ডেভিড ট্রমানের মতে, “গোষ্ঠী হলো বহু ব্যক্তির সমষ্টি।

এই ব্যক্তিসমষ্টি এক বা একাধিক মনোভাবের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে তারা ঐ মনোভাবের মধ্যে নিহিত আচার-আচরণ প্রতিষ্ঠা, সংরক্ষণ এবং প্রসারের জন্য সমাজের অন্য গোষ্ঠীর উপর কতকগুলো দাবি পেশ করে— এই অংশীদারি মনোভাবই স্বার্থের জন্ম দেয়।”

চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী সরকারের নীতিনির্ধারণের বিষয়টিকে প্রভাবিত করে নিজেদের অনুকূলে আনতে সচেষ্ট থাকে।

তবে তারা সরকারি ক্ষমতা দখলে উদ্যোগী হয় না।

সাধারণভাবে বলা যায়, চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী এমন এক ব্যক্তিসমষ্টি, যার সদস্যগণ নির্দিষ্ট লক্ষ্যের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয় এবং নিজেদের লক্ষ্য সম্পর্কে সচেতন থাকে ।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর সংজ্ঞা নিয়ে মতভেদ রয়েছে।

চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর সংজ্ঞা দিতে দিয়ে
অধ্যাপক নিউম্যান (Prof. Newman) বলেন, “Fundamentally Pressure groups are the representation homogeneous interests seeking influence.”

অর্থাৎ, “প্রভাব বিস্তারে ইচ্ছুক একইরূপ স্বার্থের প্রতিনিধিত্বকার গোষ্ঠী হচ্ছে মূলত চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী।”

আলফ্রেড গ্র্যাজিয়ার (Alfred Grazia) মতে, “চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী হচ্ছে যেকোনো সংগঠিত সামাজিক গোষ্ঠী, এ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করে রাজনৈতিক কর্মকর্তাদের আচরণকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে।

অধ্যাপক বেরিং (Bering) বলেন, “আধুনিক সমাজব্যবস্থা মূলত বিভিন্ন চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত।

এরা সরকারি নীতিমালা প্রণয়ন, পরিবর্তন ও সরকারি সিদ্ধান্তকে নিজেদের অনুকূলে প্রভাবিত করতে সচেষ্ট থাকে Gabriel Almond And Powell-এর মতে, “নির্দিষ্ট স্বার্থের বন্ধনে সংযুক্ত এবং এই সংযোগ সম্পর্কে সা ব্যক্তিসমষ্টিকে চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বলে।”

অধ্যাপক অ্যালান আর. বল (Prof. Allan R. Ball) বলেন, “A Pressure group can be defined as a group whose members hold shared attitude.”

অর্থাৎ, “সমভাবাপন্ন সদস্যগণের সমন্বয়ে যে গোষ্ঠী গঠিত হয় তাকে চা সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বলে।”

এইচ. জিগলার (H. Zeigler)-এর মতে, “চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী সংগঠিত সংঘবিশেষ, যা এর সদস্যদের আনুষ্ঠানিক সরকারি পদে আসীন করার চেষ্টা না করে সরকারি সিদ্ধান্তের পটভূমিকে প্রভাবিত করে।”

J. D. B. Miller চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীকে ‘স্বার্থকামী গোষ্ঠী’ নামে অভিহিত করেছেন।

তিনি বলেন, “Interes Groups are simply the most noticeable and best organized of interests.”

অর্থাৎ “স্বার্থকামী গোষ্ঠীসমূহ সাধারণভাবে সর্বাধিক লক্ষণীয় এবং সর্বাপেক্ষা সুসংহত স্বার্থের প্রতিভূস্বরূপ।”

অধ্যাপক মাইরন ওয়েনার (Prof. Myron Weiner)-এর মতে, “চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বা স্বার্থকামী গোষ্ঠী বলতে এমন এক গোষ্ঠীকে বোঝায়, যা স্বেচ্ছামূলকভাবে সংগঠিত, যা সরকারি কাঠামোর বাইরে অবস্থান করে সরকারি কর্মকর্তা মনোনয়ন ও নিয়োগ, সরকারি নীতিমালা গ্রহণ, পরিচালনা বা নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারে সচেষ্ট থাকে।”

বার্নস্টেইন এবং মার্ফির মতে, “স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী হলো অনেক ব্যক্তির একটি আনুষ্ঠানিক সংগঠন।

ওই সব ব্যক্তি কে বা একাধিক লক্ষ্যের অংশীদার। তারা ওই লক্ষ্য সংরক্ষণ ও প্রসারের জন্য সরকারি নীতির উপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে।”

জন সি. পিয়ার্স-এর মতে, “স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী হলো এমন একটি ব্যক্তিসমষ্টি, যার লক্ষ্য হলো রাজনৈতিক ব্যবস্থ উপর দাবি পেশের মাধ্যমে সরকারি নীতিকে প্রভাবিত করা।”

উপর্যুক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে বলা যায় যে, চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী আইনসভার বাইরে থেকে সরকারি নীতিকে প্রভাবিত করে তাদের স্বার্থ যথাযথভাবে প্রতিফলিত করতে সর্বদা সচেষ্ট থাকে ।

এর আলোচনা ব্যতিরেকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে যথার্থ অনুধাবন ও মূল্যায়ন সম্ভব নয়।