গোষ্ঠী বা দলের শ্রেণিবিভাগ

গোষ্ঠী বা দলের শ্রেণিবিভাগ

Classification of Social Group

সামাজিক গোষ্ঠীকে বিভিন্নভাবে শ্রেণিবিভাগ করা হয়।

নিচে গোষ্ঠীর শ্রেণিবিভাগ নিয়ে আলোচনা করা হলো-
প্রথমত, সমাজবিজ্ঞানী সামনার তার ‘Folkways’ নামক গ্রন্থে মানবসমাজে গোষ্ঠীর দুটি শ্রেণিবিভাজন করেন।
যথা-

১. অন্তর্গোষ্ঠী (Internal group) : অন্তগোষ্ঠী হচ্ছে সেই গোষ্ঠী যাতে কোনো ব্যক্তি নিজে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত। এ ধরনের গোষ্ঠীকে আবার ‘আমাদের গোষ্ঠী’ও বলা হয়।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রহিম জেলে সম্প্রদায়ের লোক। এখানে রহিম প্রত্যক্ষভাবে জেলে সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
সুতরাং জেলে সম্প্রদায় রহিমের নিকট অন্তগোষ্ঠী।

২। বহিগোষ্ঠী (External group) : যে গোষ্ঠীর সঙ্গে কোনো ব্যক্তি সম্পর্কযুক্ত নয় বা তার সদস্য নয় সেটাই ওই ব্যক্তির কাছে বহিগোষ্ঠী বলে বিবেচিত।

এ গোষ্ঠীকে ‘অন্য গোষ্ঠী’ বলা হয়। গোষ্ঠীর এ বিভাজনটি একজন বিশেষ ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভরশীল। কেননা একজন ব্যক্তির কাছে যেটি অন্তর্গোষ্ঠী অন্য ব্যক্তির কাছে সেটি বহির্গোষ্ঠী বলে মনে হতে পারে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রহিম জেলে সম্প্রদায়ের লোক। এখানে রহিমের নিকট অন্যান্য সম্প্রদায় যেমন কামার, কুমার, তাঁতি ইত্যাদি সম্প্রদায় বহির্গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচিত হবে।

দ্বিতীয়ত, সমাজবিজ্ঞানী কুলি তার ‘Social Organization’ নামক গ্রন্থে গোষ্ঠীকে দুই ভাগে ভাগ করেন—

১. প্রাথমিক বা মুখোমুখি গোষ্ঠী (Primary or frontal group): ১৯০৯ সালে মার্কিন সমাজবিজ্ঞানী চার্লস কুলি মুখ্য দল শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যরা প্রত্যক্ষভাবে নিবিড় সম্পর্কে সম্পর্কযুক্ত।

এখানে সদস্যরা মুখোমুখি অবস্থান করে। প্রাথমিক দলের মধ্যে ‘আমরা ভাব’ বিদ্যমান থাকে। যেমন- পরিবার। পরিবারের সদস্যরা সবাই নিজেদের মধ্যে ‘আমরা মনোভাব পোষণ করে।
প্রাথমিক গোষ্ঠী (পরিবার)

২. মাধ্যমিক গোষ্ঠী (Secondary group) : প্রাথমিক গোষ্ঠীর গণ্ডি বেশ সীমিত। এর সদস্যদের মধ্যে আন্তরিকতাবোধও বেশ প্রবল এবং অকৃত্রিম।

অনেক ক্ষেত্রেই প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যরা একই পরিবার ও জ্ঞাতিগোষ্ঠীর সদস্য। পক্ষান্তরে, মাধ্যমিক গোষ্ঠীর গণ্ডি বেশ বৃহৎ এবং এর উদ্দেশ্য ও কর্মক্ষেত্র সম্প্রসারিত।

এখানে সদস্যরা তুলনামূলকভাবে কম নিবিড় এবং সম্পর্কটা অনেকটা আনুষ্ঠানিক নীতিমালা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এরা কিছু নীতি ও আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত থাকে। যেমন— সম্প্রদায়, সংঘ ইত্যাদি।

তৃতীয়ত, ম্যাকডোনাল্ড গোষ্ঠীকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন।
যথা-

১. সময়োচিত গোষ্ঠী (Accidental group) ও ২. উদ্দেশ্যমূলক গোষ্ঠী (Purposive group)।

চতুর্থত, সি. এ. এলউড তার ‘Psychology of Human Society’ গ্রন্থে গোষ্ঠীকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেন।
যেমন-

১. অনৈচ্ছিক ও ঐচ্ছিক গোষ্ঠী : পরিবার, নগর এবং রাষ্ট্র অনৈচ্ছিক গোষ্ঠীর উদাহরণ। কেননা এখানে ব্যক্তি ইচ্ছা ক নয় বরং জন্মগতভাবে সদস্যপদ লাভ করে।

অপরপক্ষে রাজনৈতিক দল, সংঘ বা সাংস্কৃতিক সংঘ ঐচ্ছিক গোষ্ঠ উদাহরণ। কেননা এখানে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ও সচেতন মনে সদস্য হিসেবে যোগদান করে ।

২. প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক গোষ্ঠী : স্থায়ী গোষ্ঠী; যেমন— চার্চ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রাতিষ্ঠানিক গোষ্ঠীর উদাহরণ।

অস্থায়ী গোষ্ঠী; যেমন— জনতা, ক্রীড়া সংঘ (যা প্রায় গড়ে ও ভাঙে) ইত্যাদি অপ্রাতিষ্ঠানিক গোষ্ঠীর উদাহরণ।

পঞ্চমত, পার্ক ও বার্জেস গোষ্ঠীকে আরও কয়েকটি ভাগে ভাগ করেন। যথা—

১. স্থানভিত্তিক গোষ্ঠী : যেসব গোষ্ঠী কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকায় গড়ে ওঠে তাকে স্থানভিত্তিক গোষ্ঠী বলা হয়। যেমন— সম্প্রদায়, রাষ্ট্র ইত্যাদি।

২. অস্থানভিত্তিক গোষ্ঠী : কোনো নির্দিষ্ট স্থানে আবদ্ধ নয় এমন গোষ্ঠীকে অস্থানভিত্তিক গোষ্ঠী বলা হয়। যেমন- সামাজিক শ্রেণি, জাতি-বৰ্ণ ইত্যাদি ।

পার্ক ও বার্জেস উপরিউক্ত শ্রেণিবিভাগ ছাড়াও গোষ্ঠীর একটি ব্যাপক শ্রেণিবিভাগের কথা উল্লেখ করেন।

এগুলো হলো- ক. পরিবার, খ. ভাষা বা নরবংশগত গোষ্ঠী, গ. স্থানভিত্তিক গোষ্ঠী,

ঘ. দ্বন্দ্বমূলক গোষ্ঠী (রাজনৈতিক দল, শ্রমিক সংঘ ইত্যাদি) ও ঙ. সামাজিকভাবে খাপ খাইয়ে চলা সংগঠিত গোষ্ঠী (সামাজিক শ্রেণি এবং জাতি-বর্ণ)।