Table of Contents
ক্রয় আচরণে প্রভাব:
উত্তর : ভূমিকা : একজন ব্যক্তির ক্রয় আচরণে সাংস্কৃতিক সামাজিক ব্যক্তিগত উপাদান যেমন প্রভাব বিস্তার করে তেমনি মনস্তাত্ত্বিক উপাদানও প্রভাব বিস্তার করে। একজন ব্যক্তির ক্রয় আচরণ চার ধরনের মনস্তাত্ত্বিক উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয়।
নিম্নে ভোক্তার ক্রয় আচরণে প্রভাব বিস্তারকারি মনস্তাত্ত্বিক উপাদানগুলো আলোচনা করা হলো-
(ক) প্রেষণা :
একজন মানুষ কোন না কোন উদ্দীপকের দ্বারা। উদ্দীপ্ত হয়েই তার কাজ সম্পাদন করে থাকে। প্রেষণা হলো এমন এক শক্তি যা মানুষের মনের মধ্যে কোন কার্য সম্পাদন করতে সহায়তা করে । যেমন কোম্পানি Grameen কোম্পানি Djuice sim, Aktel ক্রয় করার জন্য ভোক্তাকে উদ্দীপনায় উদ্দীপ্ত হয়ে ভোক্তা এসব কোম্পানির উদ্দীপনায় উদ্দীপ্ত হয়ে সে কোম্পানির Aktel Joy sim ক্রয় করে থাকে।
মানুষের কিছু প্রয়োজন থাকে জৈবিক। যেমন- বাঁচার জন্য খাদ্য, পানীয়, আশ্রয় ইত্যাদি আর কিছু প্রয়োজন থাকে মানসিক। যেমন, নিরাপত্তা, সম্মান অর্জন, ভালবাসা ইত্যাদি । মানুষের মনের মধ্যে নিজের অজান্তেই তা অনুভব করে ও আচরণে প্রকাশ করে। প্রেষণা সম্পর্কে বিভিন্ন মনোবিজ্ঞানী বিভিন্ন মতামত ব্যাক্ত করেছেন। তাদের মধ্যে Sigmund Frend এবং Abraham Maslow এর প্রদত্ত মতবাদ ভোক্তা বিশ্লেষণ এবং বাজারজাতকরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অর্থ প্রকাশ পায় ।

(খ) প্রত্যক্ষণ :
প্রত্যক্ষণ হচ্ছে একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মানুষ কোন কিছু সম্পর্কে অবগত হয়। আর এ প্রত্যক্ষণ মানুষ প্র তার আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ করে।
মানুষ তার পাঁচটি ইন্দ্রিয় = যথা চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহবা ও ত্বক দ্বারা যখন কোন কিছুকে উপলব্ধি করে তখন প্রত্যক্ষণ ঘটে থাকে। একই প্রেষণার একেক জন ব্যক্তি একেক ভাবে তার প্রত্যক্ষণ প্রকাশ করে। নিজের মত করে তথ্য নির্বাচন করে সংগঠন করে ও ব্যাখ্যা করে থাকে।ক্রয় আচরণে প্রভাব
তিনটি প্রত্যক্ষণ প্রক্রিয়ার কারণে ভিন্ন ভিন্ন প্রক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
(i) নির্বাচিত প্রভাবাধীন (Selective attention)
(ii) নির্বাচিত বিকৃতকরণ (Selective Disfortion)
(iii) নির্বাচিত ধারণ (Selective retention)
(i) নির্বাচিত প্রভাবাধীন: প্রত্যেক ব্যক্তি প্রতিদিন অসংখ্য বিজ্ঞাপনের মুখোমুখী হয়ে থাকে। সকলেই সকল বিজ্ঞাপনের প্রতি আকর্ষিত হয় না বেশির ভাগই এগিয়ে চলে তবে সেই মুহূর্তে যে জিনিসটি দরকার বা প্রয়োজন সে ঐ সকল বিজ্ঞাপনের প্রতি বেশি মনোযোগী হয়। অর্থাৎ ব্যক্তির যে জিনিসটির প্রয়োজন সে জিনিস সম্পর্কিত যে বিজ্ঞাপন তার প্রতি বেশি মনোযোগী হয়।
অর্থাৎ ব্যক্তির যে জিনিসটির প্রয়োজন সে জিনিস সম্পর্কিত যে বিজ্ঞাপন তার প্রতি মনোযোগী/প্রভাবিত হওয়াই হলো নির্বাচিত প্রভাবাধীন। যেমন- কোন ব্যক্তির ফ্রিজ কিনার প্রয়োজন অর্থাৎ কম দামের মধ্যে ভাল ফ্রিজ তখন সে ব্যক্তি ফ্রিজ কোম্পানিগুলোর দিকে নজর দিবে। আবার কেউ টেলিভিশন কিনার বিশ্বকাপ ফুটবল দেখার জন্য তখন সে ব্যক্তি টিভি কোম্পানি গুলোর দিকে নজর দিবে।

(ii) নির্বাচিত বিকৃতকরণ: নির্বাচিত বিকৃতকরণ বলতে বুঝায় ভোক্তার নিকট প্রচারিত তথ্য বিকৃত অবস্থায় পৌঁছে। যারা উদ্দীপক হয়ে ভোক্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁর তথ্যগুলি সঠিকভাবে উপদ্দীপিত করেনা। ফলে কোন ভোক্তা যদি উহা নিজের মত করে ভাবার চেষ্টা করে তবে শেষ পর্যন্ত তথ্যগুলো তার নিকট বিকৃত হয়ে পৌঁছে। তাই সর্বদাই একজন বাজারজাতকারীকে একজন ক্রেতার কি প্রয়োজন এবং কি ভাবে বিজ্ঞাপন উপস্থাপন করে সেই মোতাবেক তার কার্যক্রম পরিচালনা করবে।ক্রয় আচরণে প্রভাব
iii) নির্বাচিত ধারণ : ধারণ করা বলতে বুঝায় মানুষ যা শিখে সেগুলোর যতটুকু অংশ ধরে রাখতে পারে তাই নির্বাচিত ধারণ অর্থাৎ যে সকল বিষয় তাদের মনে বিশ্বাস এবং মনোভাবকে সমর্থন করে সে সকল তথ্য মনে ধারণ করার প্রবণতা বেশি। তাই একজন বাজারজাতকারীকে তার বিক্রয় বার্তা যথাযথভাবে ভোক্তা বা ক্রেতার নিকট পৌঁছাতে উপরোক্ত প্রত্যক্ষণগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।
৩. শিক্ষক: মূলত শিক্ষণ হলো কোন বিষয় সম্পর্কে জানা বা শেখা। মানুষ তার পরিবার থেকে যা শেখে তাই শিক্ষণ । মানুষের জীবনে শিক্ষণের বেশির ভাগ অংশই পরিবার থেকে শিখে। অর্থাৎ মানুষের আচরণের যে বহিঃপ্রকাশ তাকেই শিক্ষণ বলে। কিন্তু বাজারজাতকরণ নীতিমালার দৃষ্টিকোণ থেকে শিক্ষণ হলো কোন জিনিস ক্রয়ের ক্ষেত্রে ভোক্তার ক্রয় আচরণে যে বহিঃপ্রকাশ ঘটে অর্থাৎ যে সকল উপাদান প্রভাবিত করে তাকে শিক্ষণ বলে।
উপাদানগুলির মধ্যে রয়েছে- তাড়না, উদ্দীপক, ইঙ্গিত, সাড়া এবং পুনরুজ্জীবক ইত্যাদি যা ভোক্তার ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রভাবিত করে। আর এগুলোর মাধ্যমেই শিক্ষণ সম্পন্ন হয়। একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি দেখানো যেতে পারে। কোন ব্যক্তির মোবাইল Sim ক্রয়ের ক্ষেত্রে সে কি Blink কিনবে নাকি Aktel নাকি Grameen কিনবে সেই ক্রয় কার্যসম্পাদনার আচরণের যে বহিঃপ্রকাশ ঘটে তাই শিক্ষণ। তাই একজন বাজারজাতকারীকে শিক্ষণের সকল উপাদানের দিকে নজর রাখতে হবে এবং সে অনুযায়ী তার কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

৪. বিশ্বাস ও মনোভাব : বিশ্বাস ও মনোভাব ভোক্তার ক্রয় আচরণের ব্যাপক ভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। কেননা মানুষের যে জিনিসের প্রতি/ব্রান্ডের প্রতি বিশ্বাস সৃষ্টি হবে সে ঐ ব্রান্ডের পণ্য ছাড়া অন্য ব্রান্ডের পণ্য কিনবে না। যেমন- মোবাইল ক্রয় করার ক্ষেত্রে Nokia, Samsung. Sony erricson ইত্যাদি সেটগুলির মধ্যে মানুষের বিশ্বাস Nokia সেটের sagum প্রতি। কারণ Nokia সেট বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয়। আবার বিশ্বাস পণ্যের প্রতি ভোক্তার মনোভাব তৈরি করে।ক্রয় আচরণে প্রভাব
Philip Kotler And Gary Armstrong -এর মতে, An attitude describes a person’s relatively consistent evaluations feeling and tendencies towards an object or idea.

মনোভাব হলো একটি মাধ্যম যা কোন বিষয় বা ধারণার প্রতি ব্যক্তির তুলনামূলক দৃঢ় মূল্যায়ন অনুভূতি এবং প্রবণতা প্রকাশিত হয়। মনোভাব মূলত মানুষের পছন্দ অপছন্দের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। যেমন- মোবাইল Sim কিনতে গেলে কোন সিম কিনবে সে ক্ষেত্রে Grameen-এর নেট ওয়ার্ক অন্যান্য কোম্পানির চেয়ে ভাল হওয়ায় তাদের Sim বেশি বিক্রয় হয়ে থাকে।
Grameen এর যে শ্লোগান দূরত্ব যতই হোক কাছে থাকুক যা ভোক্তার মনোভাবকে দৃঢ় করে। ভোক্তার মনোভাব নির্ধারণ করা খুবই কঠিন তাই বাজারজাতকারীকে ভোক্তার বিদ্যমান সে মনোভাব তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে পণ্য তৈরি করতে হবে।
উপসংহার : উপরোক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, উপরোক্ত উপাদানগুলো ভোক্তার ক্রয় আচরণে ব্যাপক ভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। তাই একজন বাজারজাতকারীকে উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে বাজারজাতকরণ মিশ্রণ তৈরি করতে হবে।