পাঠ-৫.৫ : অধিকার ও কর্তব্যের সম্পর্ক Relation between Rights and Duties:
শরীর ও আত্মার মধ্যে যেমন কাছে সম্পর্ক, অধিকার এবং কর্তব্যের মধ্যে ঠিক তেমন সম্পর্ক নিহিত।
অধ্যাপক লাঙ্কি অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যকার নিম্নলিখিত সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন।
১। একজনের অধিকার অন্যের কর্তব্যের সাথে জড়িত। যদি একজনের অধিকার থাকে তবে সেই অধিকারের সাথে অপরের কর্তব্য জড়িত।
একজনের অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে অন্যের বাধা হয়ে দাঁড়ানো উচিত নয়।
উদাহরণস্বরূপ, আমি যদি জীবনধারণের অধিকার ভোগ করি তবে এক্ষেত্রে অপরের কর্তব্য হলো আমার জীবনধারণের ক্ষেত্রে হুমকি হয়ে না দাঁড়ানো ।
অধিকার ও কর্তব্য পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। অধিকার ভোগ করলে কর্তব্য পালন করতে হবে।
অপরের সাথে আমরা যেমন আচরণ করব, ঠিক তেমনি আমরাও অপরের কাছ থেকে অনুরূপ আচরণ পাব।
যদি অন্যের জীবনধারণের ও নিরাপত্তার অধিকার থাকে তবে আমাদের কর্তব্য হলো তাদের জীবনধারণের ও নিরাপত্তার অধিকারের ক্ষেত্রে হুমকি হয়ে না দাড়ানো।
অন্যের অধিকারের প্রতি সঠিকভাবে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা আমাদের কর্তব্য।
৩। রাষ্ট্র প্রতিটি নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করবে। কিন্তু একই সাথে প্রতিটি নাগরিকের উচিত প্রতিটি অধিকারের
সদ্ব্যবহার করে সমাজের কল্যাণ সাধন করা।
যেমন: যদি আমার ভোটাধিকার থাকে তবে আমার উচিত সং প্রার্থীকে ভোট প্রদান করা।
৪। রাষ্ট্র যদি নাগরিকের অধিকার রক্ষা করে তবে নাগরিকের উচিত পুরোদমে রাষ্ট্রের সেবা করা।
যেমন : রাষ্ট্র যেহেতু নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করে তাই নাগরিকের কর্তব্য হলো রাষ্ট্রকে নিয়মিত কর প্রদান করা।
এছাড়া অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে নিম্নলিখিত সম্পর্কগুলো লক্ষ করা যায়-
উৎপত্তিগত মিল : অধিকার
কর্তব্য সৃষ্টি হয়েছে সমাজ ও রাষ্ট্রে।
এ দুটির সংরক্ষণও রাষ্ট্র করে থাকে। রাষ্ট্র নাগরিকের বিভিন্ন অধিকার ভোগের সুযোগ করে দেয়।
তার বিনিময়ে নাগরিকদের রাষ্ট্রের প্রতি কিছু কর্তব্য পালন করতে হয়। রাষ্ট্র নাগরিককে ধর্ম পালনের অধিকার দিলে নাগরিক ধর্মচর্চার মাধ্যমে কল্যাণ সাধন করবে।
এ থেকে বোঝা যায়, অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে উৎপত্তিগত মিল রয়েছে।
একই বিষয়ের দুটি দিক : অধিকার ও কর্তব্যকে একই বিষয়ের দুটি দিক বলা যায়।
কেননা অধিকার ভোগ করলে কর্তব্য পালন করতে হয়।
অধিকার ভোগের মাধ্যমে নাগরিকগণ দেশের প্রতি যে দায়িত্ব পালন করে থাকে, সেটি নাগরিকের কর্তব্য।
শিক্ষা লাভ নাগরিকের অধিকার, আবার নিজ সন্তানকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলা নাগরিকের কর্তব্য।
সর্বজনীন : অধিকার ও কর্তব্য ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়। দুটি সর্বজনীন। রাষ্ট্রের সবাই অধিকার ভোগ করতে পারে, তেমনি সব নাগরিকই রাষ্ট্রের প্রতি তার কর্তব্য পালন করতে পারে।
উভয়ই নৈতিক ও আইনগত : নাগরিকের অধিকার প্রদানে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাষ্ট্র বাধ্য থাকে।
আবার রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্য পালনে রাষ্ট্র নাগরিকদের বাধ্য করতে পারে। সুতরাং, অধিকার ও কর্তব্য কখনো নৈতিক আবার কখনো আইনগত ।
এ দুটির অনুপস্থিতিতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় : রাষ্ট্র ও নাগরিকদের কল্যাণসাধনে অধিকার ও কর্তব্যের চর্চা আবশ্যক।
কেননা অধিকার ও কর্তব্যের অনুপস্থিতিতে ব্যক্তিজীবন ও রাষ্ট্রে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
নাগরিক জীবন বিপন্ন হয় এবং রাষ্ট্রে প্রশাসন যন্ত্র বিকল হয়ে পড়ে। সুতরাং, রাষ্ট্রের সুশৃঙ্খল পরিবেশ ও সুষ্ঠু নাগরিক জীবনের জন্য অধিকার ও কর্তব্যের উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজন ।
পরিশেষে বলা যায়, অধিকার ও কর্তব্য একে অপরের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ মাত্র।
একজনের অধিকার অন্যের কর্তব্যরূপে পরিগণিত হয়। এ বিষয়ে কার্ল মার্কস (Karl Marx) বলেছেন,
“No rights without duties, no duties without rights.” অর্থাৎ, “কর্তব্য ব্যতীত কোনো অধিকার নেই, তেমনি অধিকার ব্যতীত
কোনো কর্তব্য নেই।”