[] পাঠ-২.৩ : সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য
Role of Citizens in Order to Establish Good Governance
যেকোনো রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে।
রাষ্ট্রের নাগরিকগণ নিজেদের অধিকার ভোগের পাশাপাশি কিছু কর্তব্যও পালন করে থাকে।
সরকারের পাশাপাশি নাগরিকগণও রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ত্বরান্বিত করতে পারে।
নিচে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ আলোচনা করা হলো :
১। রাজনৈতিক অংশগ্রহণ : সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম উপায় হলো রাজনীতিতে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ।
রাজনীতিতে জনগণের অংশগ্রহণের ফলে সরকারের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পায়। এতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়।
২। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ : রাষ্ট্রের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ রাষ্ট্রের উন্নয়নের পাশাপাশি সুশাসনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
রাষ্ট্রের অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন : রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট ইত্যাদি নির্মাণ ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহ গড়ে তোলায় নাগরিকদের অংশগ্রহণ জরুরি।
৩। সৎ ও নিষ্ঠাবান হওয়া : নাগরিকগণের ন্যায়নীতি ও সততা একটি রাষ্ট্রের উন্নয়নের চাবিকাঠি।
সৎ ও নিষ্ঠাবান নাগরিক সমাজকে দুর্নীতিমুক্ত রাখে এবং প্রশাসনব্যবস্থাকে সচল রাখতে ভূমিকা পালন করে। এতে সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে এবং সুশাসন ত্বরান্বিত হয়।
৪। সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি : সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকদের রাজনৈতিক ও সামাজিক সচেতনতা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ।
রাষ্ট্রের সচেতন নাগরিক হিসেবে সন্তানদের শিক্ষাদান, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া, ভোটদান, সামাজিক সম্প্রীতি স্থাপন, সামাজিক কুসংস্কার দূরীকরণে তৎপর হওয়া, বিভিন্ন শিক্ষাদান কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ইত্যাদি সচেতনতাবোধ সুশাসনের জন্য জরুরি।
৫। আইন মান্য করা : জনসাধারণের আইন মান্য করার মাধ্যমে রাষ্ট্রের শান্তি-শৃঙ্খলা ও জনগণের নিরাপত্তাবিধান সম্ভব হয়।
জনগণ আইন মান্য করলে সমাজ ও রাষ্ট্রে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে, অধিক জনকল্যাণ সাধিত হয়।
সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পায়, যা সুশাসনে সহায়ক।
৬। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়া : সত্যিকারের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ জনগণ রাষ্ট্রের সব কার্যক্রমে নিষ্ঠাবান থাকে।
দেশপ্রেমিক নাগরিক রাষ্ট্রীয় সম্পদের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারে এবং দেশের কল্যাণে ব্রতী হয় ৷
৭। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন হওয়া : গণতন্ত্র সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম নিয়ামক হিসেবে পরিগণিত।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহনশীলতা, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও নির্বাচনের ফল মেনে নেওয়ার সংস্কৃতি ইত্যাদি জনগণকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন করে তোলে।
৮। নিয়মিত কর প্রদান : রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে নিয়মিত কর প্রদান করা নাগরিকদের আইনগত কর্তব্য।
নাগরিকগণ কর ফাঁকি দিলে রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। তাই রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন তথা সুশাসনের জন্য সঠিক নিয়মে নাগরিকদের কর প্রদান করা উচিত।
৯। সন্তানদের শিক্ষাদান : নাগরিকের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো সন্তানদের শিক্ষিত করে তোলা।
সন্তানদের যথাযথ নৈতিক ও মানবিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলা প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব।
সন্তানকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে জাতীয় অগ্রগতিতে সহায়তা করে সুশাসনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে সচেতন নাগরিক সমাজ ।
১০। রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন : নাগরিকের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হলো রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা। রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যবোধ থেকেই নাগরিকের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত হয়।
নাগরিকদের দেশের কল্যাণে নিয়োজিত থাকা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার মধ্যেই সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়ন নির্ভরশীল।
১১। ভোটাধিকার প্রয়োগ : ভোটাধিকার প্রয়োগ করা নাগরিকের রাজনৈতিক অধিকার।
এ অধিকারের যথাযথ সদ্ব্যবহার করাও নাগরিকের অন্যতম দায়িত্ব। দেশের উন্নতির স্বার্থে যোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করে দেশ পরিচালনায় সহযোগিতা করা নাগরিকের কর্তব্য।
সাধারণ নাগরিকদের বিচক্ষণতা ও দূরদর্শী সিদ্ধান্তের উপর ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নির্ভরশীল।
কাজেই ভোটাধিকারের মতো পবিত্র দায়িত্ব পালন করে নাগরিকগণ সুশাসনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।