সামাজিক নিরাপত্তার উপায়
Way of Social Security
শ্রমিক ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা সামাজিক নিরাপত্তার একটি অন্যতম উপায়। বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তার ভিত্তি গড়ে ওঠে শ্রামিক ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে।
১৯২৩ সালে কারখানা, রেলপথ, খনি, বন্দর ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত কর্মীদের পেশাগত আকস্মিক দুর্ঘটনায় সৃষ্ট বিপর্যয় মোকাবিলার লক্ষ্যে শ্রমিক ক্ষতিপূরণ আইন প্রণীত হয়।
প্রণীত আইন অনুযায়ী কোনো কর্মচারী তার পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে দুর্ঘটনায় আহত বা নিহত হলে অথবা কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেললে তার জন্য ক্ষতিপূরণ পাবে।
বর্তমানে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণের সর্বোচ্চ পরিমাণ ৩৫ হাজার টাকা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ পরিমাণ নগণ্য। সুতরাং ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বৃদ্ধি করা উচিত।
সামাজিক নিরাপত্তার একটি অন্যতম উপায় হলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত গর্ভবতী মহিলাদের সন্তান জন্মদানের আগে ও পরে ছুটি ভোগ করা এবং এ সময় প্রয়োজনীয় আর্থিক ও চিকিৎসা সহায়তা প্রাপ্তি।
২০০৬ সালে প্রণীত ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন’ অনুযায়ী কর্মরত মহিলাদের ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটির বিধান থাকলেও এ বিধান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে যথাযথভাবে কার্যকর হচ্ছে না। সরকারকে এ ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
সামাজিক নিরাপত্তার আরেকটি উপায় হলো চাকরিজীবীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ব্যবস্থা। চাকরিজীবীদের অবসর গ্রহণের পর আর্থিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ১৯২৩ সালে প্রভিডেন্ট ফান্ড আইনটি প্রণীত হয়।
এ আইনের বিধান অনুযায়ী চাকরিজীবীদের অবসর ভাতা, ভবিষ্য তহবিল, আনুতোষিক প্রভৃতি আর্থিক সুবিধাদান এ আইনের উদ্দেশ্য।
অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে দেখা যায়, এ আইনটির বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। সরকারকে এ ব্যাপারে তদারকি করতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তার আরেকটি উপায় হলো চাকরিজীবীদের অবসর ভাতা প্রদান।
নির্ধারিত বয়সসীমা অতিক্রমের কিংবা | নির্দিষ্ট চাকরিকালের (কমপক্ষে একটানা দশ বছর) পর সরকারি চাকরিজীবিগণ বাকি জীবন মাসে মাসে অবসর ভাতা পেয়ে থাকেন।
অবসর ভাতাভোগীর মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রী পুনর্বিবাহ না করলে আজীবন স্বামীর প্রাপ্য অবসর ভাতা পাবেন।
কোনো কোনো আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানেও অবসর ভাতা প্রদান করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সকল বেসরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে অবসর ভাতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশে সকল সরকারি কর্মচারীকে প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা চিকিৎসা ভাতা ও বাড়ি ভাড়া ভাতা হিসেবে দেওয়া হয়।
কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এসবের কোনো বালাই নেই। সরকারকে এ ব্যাপারে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
যৌথ বিমা সরকারি, আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের পরিবারের জন্য একটি সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম।
চাকরিকালে কর্মচারীদের যৌথ বিমা তহবিলে একটি নির্দিষ্ট হারে টাকা জমা দিতে হয়।
চাকরিরত অবস্থায় কোনো কর্মচারীর মৃত্যু হলে তার পরিবার কর্মচারীর বিমা তহবিলে জমাকৃত টাকার দ্বিগুণ পেয়ে থাকে।বেসরকারি পর্যায়েও বিষয়টির বাস্তবায়ন করতে হবে।
আমাদের সমাজে যারা ভূমিহীন, বিত্তহীন, উদ্বাস্তু এবং বার্ধক্যের কারণে যারা দৈহিক পরিশ্রমে অক্ষম সরকার তাদের জন্য ১৯৯৮ সালের ১ এপ্রিল থেকে বয়স্কভাতার ব্যবস্থা করেছে।
দেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিটি ওয়ার্ডে সর্বাপেক্ষা বয়োজ্যেষ্ঠ, যাদের বার্ষিক আয় সর্বসাকল্যে অনূর্ধ্ব ৩ হাজার টাকা তেমন ৫ জন পুরুষ এবং ৫ জন মহিলাকে বয়স্কভাতা প্রদান করা হয়। এ ব্যবস্থার আওতায় সকল অক্ষম ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
গ্রামের দরিদ্র, অসহায় ও অবহেলিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা মহিলাদের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। এক্ষেত্রে সরকারি পর্যায়ে যে ব্যবস্থা রয়েছে তা অপ্রতুল।
কাজেই সকল অক্ষম বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা মহিলাদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করার জন্য ভাতার ব্যবস্থা কিংবা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
বাংলাদেশে এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় প্রতিবছর অসংখ্য মহিলা প্রতিবন্ধী হচ্ছে। তাদের ও অন্যান্য শারীরিক প্রতিবন্ধীর পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ২০০২-২০০৩ অর্থবছরে ‘এসিডদগ্ধ মহিলা ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসন কার্যক্রম’ চালু হয়েছে।
এ কর্মসূচির বাস্তবভিত্তিক সফল কার্যক্রম পরিচালিত করতে হবে।
ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চল। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ২০০২ সাল হতে সরকার প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা কার্যক্রম গ্রহণ করে।
এ কর্মসূচির লক্ষ্য হলো ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং সহজ শর্তে সুদবিহীন ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা। এ কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে।
সম্পূর্ণভাবে অক্ষম প্রতিবন্ধীদের জীবনধারণে সহায়তাদানের উদ্দেশ্যে মাসিক ভাতা প্রদান করা হয়। এ ভাতার পরিমাণ নগণ্য । ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে।
সামাজিক নিরাপত্তার অংশ হিসেবে বাংলাদেশে কিছু শিশুকল্যাণ কার্যক্রম চালু আছে। যেমন- শিশু সদন, ছোটমণি নিবাস এবং প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র।
চাহিদার প্রতি লক্ষ রেখে সারাদেশে আরও শিশু সদন, ছোটমণি নিবাস এবং প্রশিক্ষণ ওপুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।
আমরা জানি, শিক্ষা একটি মৌলিক প্রয়োজন ও অধিকার। মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষার বিকল্প নেই। বাংলাদেশে শিক্ষাক্ষেত্রে কিছু নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা চালু আছে।
যেমন- অবৈতনিক শিক্ষা, উপবৃত্তি, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন, নিরাপত্তা ইত্যাদি। এ ব্যবস্থাগুলো চালু রাখতে হবে।