সভ্যতার ধারণা কি কি ?

সভ্যতার ধারণা Concept of Civilization

সাধারণ অর্থে, সভ্যতা বলতে বোঝায় মানুষের সংস্কৃতির একটা নির্দিষ্ট সময়ের গড় ফল। অর্থাৎ মানবসমাজের দীর্ঘপ্রয়াসে প্রাপ্ত সাফল্যের স্তরই হলো সভ্যতা।

সমসাময়িক অন্যান্য সমাজের সংস্কৃতির চাইতে অগ্রসর বস্তুগত সংস্কৃতি সম্পন্ন
সমাজই সভ্য বা তাদের সংস্কৃতির সভ্যতা।
সভ্যতার ইংরেজি প্রতিশব্দ Civilization শব্দটি Latin শব্দ Civilis থেকে এসেছে।

যার অর্থ হলো নাগরিক। সুতরাং Civilization শব্দটির অর্থ হলো সুসভ্য নাগরিক সমাজ, যেখানে নগররাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে। দার্শনিক ভলতেয়ার সর্বপ্রথম এ শব্দটি ব্যবহার করেন।

মন্টেস্কু ও হান্টিংটন বলেন, “সভ্যতা হলো ভৌগোলিক তথা প্রাকৃতিক পরিবেশের একটি আশীর্বাদপুষ্ট ফসল।”

মর্গান তার ‘Ancient Society’ গ্রন্থে বলেন, “সভ্যতা হলো বিবর্তন নামক সিঁড়িটির এক শীর্ষ ধাপ। যে সমাজে লেখ্য ভাষা ও বর্ণমালা আছে, ধাতুর তৈরি দ্রব্য ব্যবহার ও লিখিত দলিলের ব্যবহার আছে সে সমাজই সভ্য।”

Maclver তার ‘The Modern State’ গ্রন্থে বলেন, “Our culture is what we are, our civilization is what we use.”

(আমাদের সংস্কৃতি হলো আমরা যা তাই এবং আমরা যা ব্যবহার করি তাই হলো আমাদের সভ্যতা)।

অগবার্ন ও নিমকফের মতে, অধিজৈবিক সংস্কৃতির পরবর্তী স্তরই সভ্যতা।

Arnold Toynbee, “Our civilization is the institutionalization of a system of ethical and religious tradition and ideologies that dominate a society or a number of related societies.”

(সভ্যতা বলতে নীতি, ধর্মীয় ঐতিহ্য এবং আদর্শের এমন এক প্রাতিষ্ঠানিক রূপকে বোঝায় যা এক বা একাধিক সমাজকে প্রভাবিত করে)।

সভ্যতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে টি. ডব্লিউ ওয়ালব্যাংক এবং এ. এম. টেইলর তাদের ‘Civilization-past and Present’ গ্রন্থে
, Civilization may be defined as a type of Advanced human life based usually an city living and on involved pattern of activities mode up of such forces as writing law, government economics and refined concepts of religion.”

(অগ্রসরমান মানবজীবনের নগর জীবন এবং নগর জীবনের সকল দিক এমনকি মানবীয় কর্মকাণ্ডের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং ধর্মীয়সহ সকল দিকই সভ্যতার অন্তর্গত।)
সমাজবিজ্ঞানী ম্যাথিউ অ্যারনল্ডের ‘Culture and Anarchy’ গ্রন্থে সংস্কৃতি ও সভ্যতার ধারণাকে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তার ভাষায়,

The study of perfection, the disinterested search for sweetness and light” and he argues that it consists, in becoming something, rather then in having something in an inward condition of mind and sprit, not in an outward set of circumstances, white civilization on is relatively mechanical and external and tends constantly to become more so.”

(সংস্কৃতি নিখুঁত নিখাদের সমীক্ষা, আলো ও মধুরতার নিরাসক্ত অন্বেষা। তিনি যুক্তি দেখান কোনোকিছু পাওয়ার চেয়ে কোনোকিছু হওয়া এটা হচ্ছে মনের অবস্থা ও শক্তি বাহ্যিক কোনো অবস্থা নয়।

অন্যদিকে, সভ্যতা আপেক্ষিকভাবে যান্ত্রিক, বাহ্যিক ও অবিরতভাবে তা এরূপ হতেই থাকে।

সমাজবিজ্ঞানী টি বি বটোমোর বলেন, সভ্যতা বলতে আমরা এমন একটি সাংস্কৃতিক জটিল রূপকে বুঝি, যা কয়েকটি সুনির্দিষ্ট সমাজের প্রধান সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যসমূহ দ্বারা গঠিত ।

বিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী জিন্সবার্ট তার ‘Fundamentals of Sociology’ গ্রন্থে বলেন,

“Thus civilization is external and mechanical, utilitarian and concerned only with means, while culture as dealing exclusively with ends, is internal organic and final.”

(সভ্যতা হলো বাহ্যিক ও যান্ত্রিক, জনকল্যাণ কর এবং উপায়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত। কিন্তু সংস্কৃতির কাজ লক্ষ্য নিয়ে, তাই সংস্কৃতি হচ্ছে অত্যন্তরীণ, অর্জিত এবং সম্পূর্ণ দিক।)

William P. Scott ‘Dictionary of Sociology’ 4, “Civilization generally refers to a highly complex, as contrasted with a relatively culture.”

সংজ্ঞাটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সভ্যতা হচ্ছে এক উচ্চতর জটিল সংস্কৃতি। W. P. Scott আরও বলেন, সভ্যতা অগ্রসরমান এবং জটিল সমাজকে নির্দেশ করে।

প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ডন মার্টিন ডেল-এর মতে, “উন্নত ধরনের শিল্পকলা, বিজ্ঞান ও ধর্ম এরই সম্মিলিত অর্থে সহা শব্দটি ব্যবহৃত হয়।”

ম্যাকাইভার এবং পেজ (Maclver & Page)-এর মতে, সভ্যতা অর্থে আমরা বুঝি মানুষ তার জীবনধারণের ব্যব নিয়ন্ত্রণের জন্য যে যান্ত্রিক ব্যবস্থা, কলাকৌশল ও সংগঠন সৃষ্টি করেছে তারই সামগ্রিক রূপ।

অতএব বলা যায়, সভ্যতা হলো সংস্কৃতির অধিকতর জটিল এবং অগ্রগতির ফল যা বংশপরম্পরায় লাভ করা যায়। ল এটি হলো নগর প্রপঞ্চ ।

নগরের বিকাশের সাথে সাথে সভ্যতার বিকাশ ঘটে এবং নগরের ধ্বংসের সাথে সাথে সম্রাজ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।