Table of Contents
ভোক্তাদের অধিকারসমূহ
উত্তর : ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তাবাদের উদ্ভব হলেও পরবর্তিতে বিভিন্ন দেশে তা ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভোক্তা অধিকার রক্ষার রূপরেখা গৃহীত হয়। উক্ত ঘোষণায় নিম্নোক্ত অধিকারগুলোকে সার্বজনীন অধিকার হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে :
১. নিরাপত্তার অধিকার : প্রত্যেক ক্রেতার পণ্যের ব্যবহারজনিত নিরাপত্তার অধিকারের কথা তুলে ধরা হয়েছে। পণ্য ব্যবহার সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য এবং পণ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা ও মান সম্পর্কে পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদানের কথা তুলে ধরা হয়েছে। অনিরাপদ পণ্য বাজারজাত করা হবে না সমাজ এরূপ নিশ্চয়তা বাজারজাতকারীর নিকট থেকে প্রত্যাশা করে থাকে। ত্রুটিপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ পণ্য ক্রেতাদের আস্থা নষ্ট করে।
২. তথ্য পাওয়ার অধিকার : পণ্য ক্রয়ের পূর্বে পণ্য সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পাওয়ার অধিকার ক্রেতার রয়েছে বলে স্বীকার করা হয়েছে। উৎপাদকরা পণ্য উৎপাদনের উপকরণ এবং ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পণ্যের লেবেলে অথবা মোড়কে তুলে ধরবে সমাজ এরূপ প্রত্যাশা করে থাকে। ক্রেতার এরূপ অধিকারকে মৌলিক অর্থনৈতিক অধিকার হিসেবে গণ্য করা হয় ।
৩. অভিযোগ করার এবং প্রতিনিধিত্বের অধিকার ক্রেতার স্বার্থ পরিপন্থী যে কোন পণ্য বা সেবা সংক্রান্ত অভিযোগ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে সহজ উপায়ে তুলে ধরার অধিকার প্রত্যেক ক্রেতার রয়েছে। ভোক্তারা সর্বদা সম্মানজনক ব্যবহার প্রত্যাশা করে এবং কোন অভিযোগ থাকলে তা তুলে ধরতে চায়। বাজারজাতকারীকে ক্রেতাদের বক্তব্য ধৈর্য্য সহকারে শুনতে হবে। তাছাড়া, সরকারী নীতিমালা প্রণয়নেও ক্রেতাদের অভিযোগগুলো শোনা এবং তদনুযায়ী নীতিমালা প্রণয়ন করা আবশ্যক।
৪. ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার কোন পণ্য বা সেবা ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার প্রত্যেক ক্রেতার রয়েছে। কোন পণ্যের উৎপাদন প্রক্রিয়া কিংবা ব্যবহার বা ভোগের কারণে ক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার ভোক্তার থাকতে হবে। তাছাড়া, পণ্য প্রস্তুতকারী বা বিক্রেতা কর্তৃক উল্লেখিত মানের সাথে পণ্যের প্রকৃত মানের তারতম্য হলে পণ্য ফেরত দেওয়ার অধিকার ক্রেতার থাকবে।
৫. ক্রেতার শিক্ষালাভের অধিকার : ক্রেতা-ভোক্তার অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে শিক্ষালাভের অধিকার প্রতিটি ক্রেতার রয়েছে। তাছাড়া, ক্রেতা হিসেবে নিজ অধিকার ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে সচেতন হওয়ার জন্য কিংবা প্রতারণা রোধের জন্য ক্রেতার জ্ঞান-বুদ্ধি বিকাশের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় শিক্ষালাভের পরিবেশ সৃষ্টির অধিকার প্রতিটি ক্রেতার রয়েছে।
উল্লেখিত অধিকারগুলো ছাড়াও বিক্রেতা, ক্রেতা বা ভোক্তারা উভয় পক্ষের পারস্পরিক সুবিধার ভিত্তিতে আরও কিছু অধিকার ভোগ করে থাকে। তবে, বিক্রেতারাও কতিপয় ভোগ
করে থাকে। যথা :
(ক) ব্যক্তি স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত না করে এমন যে কোন আকারের স্টাইলের পণ্য বিক্রয় করার অধিকার;
(খ) সকল ধরনের ক্রেতাদের ক্ষেত্রে পণ্যের যে কোন মূল্য ধার্য করার অধিকার ইত্যাদি;
(গ) সুস্থ্য প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ গঠনের লক্ষ্যে প্রমোশন খাতে যে কোন পরিমাণ অর্থ ব্যয় করার অধিকার;
(ঘ) বিষয়বস্তু অথবা প্রয়োগের দিক থেকে অসত্য উপস্থাপনা এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্য ছাড়া পণ্য সংক্রান্ত বস্তুনিষ্ঠ যে কোন সংবাদ পরিবেশনের অধিকার;
(ঙ) অসৎ ও বিভ্রান্তিকর না হলে যে কোন ক্রয়ে প্রণোদনা পদ্ধতি ব্যবহারের অধিকার, ইত্যাদি।
অধিকারগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, বিক্রেতাদের ক্ষমতা অনেক বেশি। ক্রেতারা যে কোন পণ্য প্রত্যাখান বা ক্রয়ের অধিকার রাখলেও বিক্রেতাদের চাতুরিপূর্ণ কৌশল মোকাবিলা করা তাদের পক্ষে অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। তাই ইদানীং ক্রেতাদের জন্য আরও কিছু অধিকার
শংরক্ষণের দাবি উত্থাপিত হচ্ছে :
(i) পণ্যের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার অধিকার;
(ii) আপত্তিকর ও প্রতারণামূলক পণ্য ও বাজারজাতকরণ কার্যাবলি থেকে রক্ষা পাওয়ার অধিকার;
(iii) জীবন মান উন্নত করতে পারে এমন দিকে পণ্য ও বাজারজাতকরণ কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত করার অধিকার।
অধিকার সংরক্ষণের জন্য ভোক্তাদেরকে সোচ্চার হতে হবে। প্রয়োজনে যথাসময়ে ঐক্যবদ্ধভাবে অভিযোগ পেশ করে অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হতে হবে। সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারগুলো ভোক্তা স্বার্থসংশ্লিষ্ট আইনগুলো বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকলেও বাস্তবের নিরিখে আইনগুলো পর্যাপ্ত নয়।
বর্তমানে ভোক্তার স্বার্থের উপর গুরুত্ব দিয়ে বাজারজাতকরণ মিশ্রণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়ে থাকে। ব্যবসায় এবং ভোক্তাবাদের মুখ্য উদ্দেশ্য ভোক্তাবাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা, প্রত্যেক ক্রেতার পণ্যের ব্যবহারজনিত নিরাপত্তার অধিকারের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
নিজস্ব নিয়ন্ত্রণের গতিধারায় ব্যবসায় পরিচালিত হওয়া এবং ভোক্তাবাদ বাস্তবায়নে সহায়তা করা। ব্যবসায়িক প্রতারণা এবং সামাজিক দায়িত্বশীলতা পালনে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা প্রত্যাশা করা হয়।ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তাবাদের উদ্ভব হলেও পরবর্তিতে বিভিন্ন দেশে তা ছড়িয়ে পড়ে