প্রশ্ন, ॥১.০২ মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার বৈশিষ্ট্যসমূহবর্ণনা কর। (জা.বি. ২০১১, ২০১৭) অথবা, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার গুণাবলি আলোচনা কর। ।

Date:

মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার গুণাবলি


উত্তর : ভূমিকা : একটি প্রতিষ্ঠানে কতকগুলো বিভাগ উপবিভাগ থাকে । সেসব ‘বিভাগ বা উপবিভাগগুলোর মধ্যে মানব সম্পদ বিভাগ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য বিভাগের মতো এ বিভাগও কিছু স্বতন্ত্র বিভাগের অধিকারী। নিম্নে এসব বৈশিষ্ট্যের আলোচনা করা হলো :


১. জনশক্তির কাম্য ব্যবহার : জনশক্তির কাম্য ব্যবহার নিশ্চিত করা মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য । এ বিভাগকে বিভিন্ন কলাকৌশল; যেমন- সঠিক মজুরি কাঠামো নির্ধারণ, প্রেষণা প্রদান, মনোভাব ও মনোবল বৃদ্ধিকরণ প্রভৃতি ব্যবস্থা গ্রহণ করে শ্রমিক-কর্মীদের কাম্য ব্যবহার নিশ্চিত করা যায় ।


২. উন্নত শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক : প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য শ্রমিক-কর্মী এবং ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় থাকা অপরিহার্য আর এ সম্পর্কটি মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে গড়ে তুলতে হয়। সুতরাং উন্নত শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে অন্যতম ।


৩. কলা ও বিজ্ঞানের সংমিশ্রণ : আমরা জানি, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা মানব সম্পর্কিত বিষয় এবং মানব সম্পদ নিয়োগ, নির্বাচন প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়। মানব সম্পদকে পরিচালনা করাই হলো এক ধরনের কলা। আর নিয়োগ নির্বাচন, প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন সংক্রান্ত ■ কাজকে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা হলো কলা ও বিজ্ঞানের সংমিশ্রণ।

৪. নীতি নির্ধারক : মানব সম্পদের কার্যসম্পাদনে মানব সম্পদ নীতি নির্ধারক হিসেবে কাজ করে। সাধারণ ব্যবস্থাপনার নীতিনির্ধারণেও এর ভূমিকা রয়েছে। মানব সম্পদ বিভাগ ও সাধারণ বিভাগের নীতিমালার আলোকে কর্মী নীতি প্রণয়ন করে ।


৫. ধারাবাহিকত : মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার ধারাবাহিকতা হলো অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য, Dale Yoder-এর মতে, “মানব সম্পদের নিয়োগের মাধ্যমে উন্নয়ন, বণ্টন, ব্যবহার এবং সংরক্ষণ প্রভৃতি কাজগুলো আধুনিক সমাজে ধারাবাহিক এবং অনিবার্য প্রক্রিয়া।” G.R.Terry বলেছেন, “প্রতিদিনের কাজের ক্ষেত্রে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হচ্ছে মানব সম্পর্কের এক নিরবিচ্ছিন্ন সতর্কতা ও সজাগতা।”


৬. অনুপ্রাণিতকরণ : মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো মানব সম্পদকে অনুপ্রাণিত করা। এ অনুপ্রেরণার বিষয়গুলো হলো সঠিক মজুরি প্রদান, পদোন্নতির ব্যবস্থা করা, কার্য ও পদ মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। কারণ শ্রমশক্তিকে সঠিকভাবে অনুপ্রাণিত করা গেলে তারা উদ্বেলিত হয়। আবার উদ্বেলিত শক্তির প্রভাবে মানবশক্তি সঠিক সময়ে সঠিক কার্যসম্পাদনে আগ্রহী হয় ।


৭. সংস্থাপন : মানব সম্পদ নির্বাচন, সংগ্রহ এবং দক্ষতার বিবেচনায় কর্মে নিয়োগ দেয়ার কাজটিই হলো সংস্থাপন। একে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বলে বিবেচনা করা হয়। কারণ, জনশক্তির সঠিক সংস্থাপন মানব সম্পদকে কাজে উৎসাহিত করে ।
৮. মূল্যায়ন : উৎপাদনের যেসব উপাদান রয়েছে তার মধ্যে মানব সম্পদ অন্যতম। শ্রমিক-কর্মীরাই অন্যান্য উপাদানগুলোকে সক্রিয় করে তোলে। আর এরূপ সক্রিয়তা বজায় রাখার জন্য মানব সম্পদকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে হয়।


৯. উন্নয়ন প্রচেষ্টা : মানব সম্পদের উন্নয়নমূলক ব্যবস্থা মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার বৈশিষ্ট্যের পর্যায়ভুক্ত। এ ব্যবস্থাপনা কতিপয় নিয়মনীতির উপর অধিষ্ঠিত এসব নিয়মনীতি বাস্তবায়নে মানব সম্পদের উন্নয়নমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। আবার মানব সম্পদের উন্নয়ন প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের সহায়ক। সুতরাং উন্নয়ন প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে প্রতিষ্ঠানের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে অনেকটা সহজ হয় ।

১০. গতিশীলতা : সামাজিক পরিবেশে প্রতিষ্ঠানের সমুদয় কার্যাবলি সম্পাদিত হয়। যেহেতু সামাজিক পরিবেশ গতিশীল ও পরিবর্তনশীল সেহেতু কার্যাবলির ও গতিশীল ও পরিবর্তনশীল হবে। প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলির পরিবর্তনশীলতার পরিপ্রেক্ষিতে মানব সম্পদ বিভাগের প্রকৃতিতেও গতিশীলতার ছাপ পড়তে বাধ্য। সুতরাং মানব সম্পদ বিভাগের প্রকৃতিতেও এই গতিশীলতার বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।


উপসংহার : উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে, মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা সাধারণ ব্যবস্থাপনার একটি অংশ। এর কতিপয় স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার গুরুত্বকে আরও সমুজ্জ্বল করছে।

Share post:

Subscribe

spot_imgspot_img

Popular

More like this
Related

[Ques: 1.01| What is Communication ? (যোগাযোগ কি?). Or, What do you mean by Communication ? (যোগাযোগ বলতে কি বুঝ?)

যোগাযোগ কি : [ Communication (যোগাযোগ) Ans : Preface: Communication is...