Table of Contents
ক্রেতার ক্রয় সিদ্ধান্ত
উত্তর: প্রারম্ভিক কথা: প্রতিটি ক্রেতা প্রতিদিন নানা ধরনের ক্রয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আর এ সিদ্ধান্ত বিচ্ছিন্ন কোন কাজ নয়, বরং একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। ফলে বড় বড় প্রতিষ্ঠান ও বিপণনকারী গবেষণার মাধ্যমে উদ্ঘাটন করে ক্রেতা কি কিনে, কোথা থেকে কিনে, কিভাবে এবং কত পরিমাণে কিনে, কখন কিনে, কেন কিনে ইত্যাদি আমপাকা
ভোক্তা ক্রয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে যে কতকগুলো ধাপ অতিক্রম করে তাকে আমরা ক্রয় সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া বলে থাকি। ক্রয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্রেতা মোটামুটি ৫টি ধাপ অতিক্রম করে। এগুলো নিচের ছকে দেখানো হলো:
১. প্রয়োজন চিহ্নিতকরণ: ক্রয় প্রক্রিয়ার সূত্রপাত হয় প্রয়োজন চিহ্নিত করার মাধ্যমে ক্রেতা যখন তার বর্তমান অবস্থা এবং প্রত্যাশিত অবস্থার পার্থক্য অনুধাবন করতে পারে তখনই সে তার প্রয়োজন অনুধাবন করতে পারে। তবে ক্রেতা ক্রয়ের প্রয়োজন দু’ভাবে অনুভব করতে পারে।
প্রথমত, জৈবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, যা প্রকৃতিগতভাবে উদ্ভূত। যেমন-ক্ষুধা, তৃষ্ণা ইত্যাদি।
দ্বিতীয়ত, ধরন পরিবেশ সৃষ্ট। যেমন-বন্ধুর মুখে শুনে বা টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দেখে কোন ব্যক্তি কোন পণ্যের অভাব বোধ করতে পারে। এক্ষেত্রে উদ্দীপক পরিবেশ থেকে আসছে। তবে উভয় ক্ষেত্রেই সমস্যা চিহ্নিতকরণের পর্যায় থেকে যাত্রা শুরু। ভোক্তা বিভিন্নভাবে সমস্যা চিহ্নিত করতে পারে। আর বাজারজাতকারী গবেষণার মাধ্যমে ভোক্তার প্রয়োজন, প্রয়োজন জাগ্রত হওয়ার উপায়, প্রয়োজন মিটানোর উপযোগী পণ্য ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারে।
২. তথ্যানুসন্ধান : প্রয়োজন শনাক্তকরণের পর ভোক্তা অতিরিক্ত তথ্যানুসন্ধান করতে পারে বা নাও পারে। প্রয়োজনের তীব্রতা, পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং তথ্য সংগ্রহের খরচের তুলনায় | তথ্যের গুরুত্বের উপর তথ্য অনুসন্ধান নির্ভর করে। প্রয়োজন
তীব্রতর হলে এবং হাতের কাছে পণ্য পেলে অনুসন্ধান ছাড়াই ভোক্তা তা কিনতে পারে কিন্তু বিপরীত ক্ষেত্রে ভোক্তা অভাবকে স্মরণে রাখবে এবং তথ্যের খোঁজ করবে। ভোক্তা বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। যেমন-
ভোক্তার তথ্য সংগ্রহের উৎস
(ক) উ্যক্তিগত উৎস: পরিবার, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী, পরিচিত ব্যক্তি ইত্যাদি।
(খ) বাণিজ্যিক উৎস: বিজ্ঞাপন, বিক্রয়কর্মী, ডিলার পণ্য প্রদর্শন, মোড়ক ইত্যাদি।
(গ) পাবলিক উৎস: গণমাধ্যম, ভোক্তা গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সরকারি এজেন্সি।
(ঘ) অভিজ্ঞতার উৎস: পণ্য, নাড়াচাড়া, পরীক্ষা, পণ্য ব্যবহার।
উপরিউক্ত উৎসের মাঝে কোনটি প্রভাব কেমন হবে তা নির্ভর করে পণ্যের প্রকৃতি ও ক্রেতার ধরনের উপর। তবে একথা বলা যায় যে, ব্যক্তিগত উৎস অত্যন্ত কার্যকরী এবং বাণিজ্যিক ও পাবলিক উৎস ক্রেতাদের জ্ঞাত করানোর কাজে নিয়োজিত।ক্রেতার ক্রয় সিদ্ধান্ত
৩. বিকল্প মূল্যায়ন: এটি ক্রয় সিদ্ধান্তের তৃতীয় পর্যায়। এ পর্যায়ে ক্রেতা বিভিন্ন বিকল্পসমূহের মাঝে তুলনা করে। ভোক্তার বিকল্প মূল্যায়ন ব্যক্তিগত এবং নির্দিষ্ট ক্রয় পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। কিছু ক্ষেত্রে ভোক্তা যুক্তিসংগত হিসাব এবং চিন্তাভাবনা করে। কোন ক্ষেত্রে একই ভোক্তা সামান্য মূল্যায়ন করে বা মূল্যায়নই করে না। কখনও নিজের সিদ্ধান্তে, কখনও বিক্রয়কর্মী কর্তৃক প্রভাবিত হয়ে ভোক্তা ক্রয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অর্থাৎ, ক্রেতাভেদে ও পণ্যভেদে মূল্যায়নের মাপকাঠি ভিন্ন হয়। আবার ক্রেতার উদ্দেশ্য, ব্যক্তিত্ব ও জীবন ধাঁচের কারণেও মূল্যায়নে পার্থক্য হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, ক্রেতা কোন নির্দিষ্ট পণ্যের বাজারে প্রাপ্ত সবগুলো পণ্য মূল্যায়ন করতে পারে না। ক্রেতা কিছু ব্র্যান্ডকে কিছু বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলির ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে এবং বাকিগুলো মূল্যায়ন প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেয়।
৪. ক্রয় সিদ্ধান্ত: মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভোক্তা বিভিন্ন ব্র্যান্ডকে ক্রয়ের উদ্দেশ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সাজায় এবং সবচেয়ে পছন্দনীয় ব্র্যান্ডটি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সাজানো ব্র্যান্ডের মাঝে কোনটি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিবে তা দুটি উপাদানের উপর নির্ভরশীল।
প্রথমত, ব্র্যান্ডের প্রতি অপরাপর ব্যক্তিদের মনোভাব।
দ্বিতীয়ত, অপ্রত্যাশিত উপাদান, পারিবারিক আয়, প্রত্যাশিত মূল্য, পণ্যের প্রত্যাশিত সুবিধা। উপরিউক্ত উপাদান বা অবস্থার বিবেচনায় ক্রয়ের অভিপ্রায় পরিবর্তিত হতে পারে।
৫. ক্রয়োত্তর আচরণ কোন পণ্য ক্রয়ের পর ক্রেতার সন্তুষ্টি, অসন্তুষ্টি বিক্রেতার নিকট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, সন্তুষ্ট ক্রেতা যেমন প্রতিষ্ঠানের সম্পদ, তেমনি অসন্তুষ্ট ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। কেননা, পরিতৃপ্ত ক্রেতাদল পণ্য পুনঃক্রয় করে, পণ্যের প্রতি অনুকূল ধারণা পোষণ করে, প্রতিষ্ঠানের অপরাপর পণ্য সহজে ক্রয় করে এবং অন্যকে পণ্যের গুণাগুণ সম্পর্কে অবহিত করে। পক্ষান্তরে, অতৃপ্ত ক্রেতা ভিন্নভাবে অভিমত ব্যক্ত করে যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব থাকে। আমেরিকার এক হিসাবে দেখা যায়, একজন অতৃপ্ত ক্রেতা ১১ জনকে তার মতে প্রভাবিত করে। এ করণে বিপণনকারী ক্রেতার প্রত্যাশা পূরণের বেশি মনোযোগী হওয়া এবং প্রতিষ্ঠানকে প্রতিনিয়ত ভোক্তা সন্তুটি পরিমাপ করা উচিত।
ভোক্তার সন্তুষ্টি বা অসন্তুষ্টি নির্ভর করে পণ্য থেকে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সম্পর্কে উপর। পণ্য যদি প্রত্যাশা মিটাতে অক্ষম হয় তবে ভোক্তা হতাশ হবে। আর যদি পণ্য প্রত্যাশা অনুযায়ী হয় তাহলে ভোক্তা সন্তুষ্ট হবে। আবার প্রাপ্তি যদি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে ভোক্তা উচ্চমাত্রার সন্তুষ্টি প্রকাশ করে, যা প্রতিষ্ঠানকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ভোক্তার পণ্য ক্রয় সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে উপরিউক্ত সবগুলো ধাপের গুরুত্ব সর্বদা একই রূপ হয় না। পণ্যের প্রকৃতি, ভোক্তার প্রকৃতিসহ পারিপার্শ্বিক অবস্থার দ্বারা প্রভাবিত হয়। কখনও কখনও কোন কোন ধাপের অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। একজন ক্রেতা যেভাবে সমস্যা চিহ্নিত করে, তথ্য অনুসন্ধান করে, বিকল্প মূল্যায়ন করে, ক্রয় সিদ্ধান্ত নেয় এবং ক্রয়োত্তর আচরণ করে তা জানা থাকলে ভোক্তার চাহিদা কিভাবে সহজে পরিতৃপ্ত করা যাবে তা একজন বাজারি সহজেই বুঝতে পারে।