ই-গভর্ন্যান্সের প্রতিবন্ধকতা :

ই-গভর্ন্যান্সের প্রতিবন্ধকতা
Barriers of E-Governance:

উন্নয়নশীল দেশে ই-গভর্ন্যান্স বাস্তবায়নে বহুবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়।

ই-গভর্ন্যান্স বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত উন্নয়ন, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, দক্ষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল তৈরি, সর্বোপরি সম্পদের অপ্র ইত্যাদি কারণে ই-গভর্ন্যান্স বাস্তবায়নে সফলতা পরিলক্ষিত হয় না।

ই-গভর্ন্যান্স বাস্তবায়নে উন্নয়নশীল দেশ যেসব

সমস্যা মোকাবিলা করে সেগুলো নিচে আলোচনা করা হলো-

১। অবকাঠামোগত উন্নয়নের অভাব : উন্নয়নশীল দেশে অবকাঠামো ক্ষেত্রে উন্নয়নের অভাবে ই-গভর্ন্যান্স ভ্লা হয় না।

ই-গভর্ন্যান্সের জন্য প্রয়োজন হয় উন্নত নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির স্থাপনা
ইত্যাদি ।

২। ব্যয়বহুল উন্নয়নশীল দেশে ই-গভর্ন্যান্স একটি ব্যয়বহুল ব্যবস্থা। শাসনব্যবস্থার সব মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনের
সব ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতি স্থাপন করা ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার ।

৩। প্রশিক্ষণের অভাব : দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারী ই-গভর্ন্যান্স বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

কিন্তু উন্নয়নশীল দেশে অধিকাংশ সরকারি কার্যালয়ে কম্পিউটারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অভাব রয়েছে,
যা ই-গভর্ন্যান্সের ক্ষেত্রে মারাত্মক বাধাস্বরূপ।

৪। বিদ্যুৎব্যবস্থার অপ্রতুলতা : বিদ্যুৎব্যবস্থার ঘাটতির কারণে ই-গভর্ন্যান্সের কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।

ঘন ঘন লোডশেডিং তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ক্ষতিসাধন করে থাকে। এছাড়া বিদ্যুতের ভোপ্টেড ওঠানামা করায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎব্যবস্থার অভাবে ই-গভর্ন্যান্স প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।

৫। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অবহেলা : ই-গভর্ন্যান্সের সেবা অধিকাংশ সময় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছায় না।

এতে দেশের প্রযুক্তিসেবায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী অবহেলিত ও বঞ্চিত হয়। ফলে রাষ্ট্রব্যবস্থায় বৈষম্য ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।

৬। শিক্ষার অভাব : উন্নয়নশীল দেশে সব শ্রেণির মানুষের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জস্বরূপ।

সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা না গেলে ই-গভর্ন্যান্স বাস্তবায়ন দুরূহ হয়ে পড়ে।

৭। সচেতনতার অভাব : ই-গভর্ন্যান্স ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ জনগণের সচেতনতার অভাবে একটি দেশে ই-গভর্ন্যান্স কার্যক্রম ত্বরান্বিত হয় না।

এক্ষেত্রে জনগণের অশিক্ষা ও প্রযুক্তি জ্ঞানের অভাবই মুখ্য কারণ ।

৮। তথ্যপ্রযুক্তির প্রতি উদাসীনতা : ই-গভর্ন্যান্স ব্যবস্থায় মান্ধাতা আমলের ফাইলভিত্তিক কার্যক্রমের পরিবর্তে অফিস ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়।

অনেক সময় গতানুগতিক ব্যবস্থাপনায় অভ্যস্ত কর্মকর্তা- কর্মচারীগণ ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করেন। এতে ই-গভর্ন্যান্স প্রতিষ্ঠা বাধাগ্রস্ত হয়।

৯। সামাজিক সমস্যা : অবাধ তথ্যপ্রবাহের ফলে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই যেকোনো তথ্য পেতে পারে।

কোমলমতি শিক্ষার্থীরা অনেক সময় বিভিন্ন অশ্লীল ব্লগে প্রবেশ করে অসংগত ও অশোভন দৃশ্য, ছবি মোবাইল ফোন ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসে ধারণ করে।

এ ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ সমাজে বিস্তার লাভ করলে সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধি পায় ।

১০। ওয়েবসাইট হ্যাকিং : ওয়েবসাইট হ্যাকিং ও কম্পিউটার ভাইরাসের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্তসমূহ চুরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে ।

এরূপ সাইবার অপরাধ যেকোনো রাষ্ট্রের ই-গভর্ন্যান্সের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

এসব অপরাধ সংঘটিত হলে রাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাসহ ব্যাংক, বিমা, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চরম অর্থনৈতিক ক্ষতিসাধিত হয় ।

১১। দুর্নীতি : প্রশাসনিক দুর্নীতি অনেক ক্ষেত্রে ই-গভর্ন্যান্সের জন্য বিরাট বাধা হিসেবে কাজ করে।

ই-গভর্নান্স দুর্নীতি দূরীকরণে সহায়তা করে থাকে। দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি আমলা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ই-গভর্ন্যান্স প্রতিষ্ঠা এবং এর ব্যাপক ব্যবহার রোধে সক্রিয় হয়ে পড়ে।

১২। যোগ্য নেতৃত্বের অভাব : উন্নয়নশীল দেশে ই গভর্ন্যান্স কার্যক্রম বাস্তবায়ন অধিকাংশ সময়ে সম্ভবপর হয় না।

এর কারণ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ই-গভর্ন্যান্স প্রজেক্ট বাস্তবায়নে অজ্ঞতা ও আন্তরিকতার অভাব।

১৩। প্রাকৃতিক দুর্যোগ : প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ই-গভর্ন্যান্স ব্যবস্থা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

প্রাকৃতিক দুর্যোগে অবকাঠামো ক্ষেত্রে ক্ষতিসাধন, নেটওয়ার্ক বিপর্যয়, যোগাযোগব্যবস্থার চরম অবনতির কারণে ই-গভর্ন্যান্স প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।

১৪। যথাযথ আইনের অভাব : তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে যথাযথ আইন প্রয়োগের অভাব ই-গভর্নান্স প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে।

সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে কাঠোর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন না হলে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

সাধারণ জনগণ ইন্টারনেট ব্যবহার তথা প্রযুক্তির ব্যবহারে নিরুৎসাহ বোধ করে। এ সমস্যা দূরীকরণে রাষ্ট্রীয় আইনের কঠোর প্রয়োগ প্রয়োজন ।

১৫। গণমাধ্যমে প্রচারণার অভাব : ই-গভর্ন্যান্সের সেবাসমূহ জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রয়োজন সঠিক প্রচারণা।

অনেক সময় ই-গভর্ন্যান্সের সুবিধা সম্পর্কে জনগণ যথসময়ে জানতে পারে না এবং সে কারণে সঠিক সময়ে সেবা থেকেও বঞ্চিত হয়।

এ ক্ষেত্রে সঠিক ও উপযুক্ত প্রচারণা জনগণকে সহায়তা করতে পারে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

১৬। নিজস্ব ভাষা ব্যবহারে সমস্যা : তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যম হিসেবে অধিকাংশ দেশে ইংরেজি ব্যবহার
করা হয় ।

কিন্তু উন্নয়নশীল দেশে শিক্ষার হার কম হওয়ায় তেমনভাবে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটে না।

এক্ষেত্রে নিজস্ব ভাষার প্রযুক্তির ব্যবহার না থাকায় জনগণ অনেক সময় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার থেকে দূরে সরে যায় এবং উৎসাহবোধ করে না।